লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতাঃ কেউ স্বার্থপর হয়ে সুখী, কেউ স্বার্থ বিলিয়ে সুখী। তবে আমি কখনো স্বার্থপর হতে শিখিনি। সব সময় চেষ্টা করেছি অন্যের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে। এসবের বিনিময় একদিন কিছু পাব এমন আশা আগেও করিনি, আজও করি না। ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই দায়িত্ববোধ থেকেই কিছু একটা করার চেষ্টা করেছি মাত্র। জানিনা কতটুকু পেরেছি। কথাগুলো একটু চিন্তিত সুরে বলছিলেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা  বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হারুনর রশিদ। যিনি তার নিজের এলাকায় আর্মি হরুন নামে পরিচিত।

১৯৯১ সালে দেশকে শত্রু মুক্ত রাখার প্রত্যয় নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। প্রায় তিন দশক সেখানে সফলতার সাথে কাজ করে যোগ দেন র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব) এ। দুইবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।

কণ্ঠস্বরে চিন্তিত সুর কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ সমাজের মানুষগুলো বড়ই অদ্ভুত। কেউ কাউকে নিয়ে ভাবার সময় পায় না। চারপাশের অসহায় মানুষের চিৎকার,আর্তনাদ কারো কানে পৌঁছে না। আমার মতো এই সামান্য হারুনের দ্বারা কি আর সম্ভব! তবুও চেষ্টা করে যাচ্ছি ঐ অসহায় মানুষগুলোর পাশে সব সময় থাকার। “সবার সুখে হাসব আমি / কাঁদব সবার দুখে, নিজের খাবার বিলিয়ে দেব / অনাহারীর মুখে।” পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের এই কবিতাটি বুকে ধারণ করে নিজ স্বার্থ বিলিয়ে আজ পরম সুখী মোহাম্মদ হারুনর রশিদ।

ইতোমধ্যে লোহাগাড়ার এই সাবেক সেনা সদস্যকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে। অসহায় মানুষের যেন বেঁচে থাকার সম্বল আর্মি হারুন। আজ পর্যন্ত কেউ খালি হাতে ফিরেনি তার নিকট থেকে। প্রতিবন্ধী, বিধবা,রোগাক্রান্ত, অসহায় দুস্থ্ পরিবারের পাশে তিনি সব সময়ই থেকেছেন। শুধু তাই নয়,গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্যও বাড়িয়ে দিয়েছেন সহায়তার হাত। অর্থ দিয়ে না পারলেও মানুষের বিপদে আপদে স্বশরীরে দৈহিক বা মানসিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন । প্রায় দেখা যায় অনেক ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে । মানুষের বিপদে আপদে ২৪ ঘন্টা তাঁর সেবার দরজা খোলা ।

দেশে যখন মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হয় তখন অনেক মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। তখন নিজ উদ্যোগে প্রায় তিন হাজার মানুষের কাছে নিজ হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছিয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরে ৪০০ থেকে ৫০০ লোককে দেয়া হয় শীতবস্ত্র । পাশাপাশি আরো অনেক সামাজিক কাজও তিনি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে সেবামূলক যে কোন কাজে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছেন । পেয়েছেন আর্মি হারুনের বুকভরা ভালবাসা। রাস্তার পথশিশু, পাগল/পাগলীদের নিয়ে একসাথে এক টেবিলে হোটেলে খেতেও দেখা গেছে তাকে। নিয়মিত  রক্ত দিতেও দেখা গেছে অসহায় রুগীকে। সমাজের তরুণ প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এই সমাজ সেবক।শুধু তাই নয়, সমাজের চোখে নিম্ন শ্রেণীর মানুষের তিনি যে কত সহজে আপন করে বুুকে টেনে নিয়েছেন সেটারও আবেকঘন দৃশ্যটি আমাদের চোখে পড়ে।

মোহাম্মদ হারুনর রশিদ তার এই মানব সেবার বিষয়ে আরো জানান, মানব সেবা এখন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। লোহাগাড়া তথা পদুয়ার মানুষগুলোকে অনেক ভালোবাসি। তারা যখন হারুন ভাই বলে বুকে জড়িয়ে নেয়,তখন মনটা ভরে যায়। মানুষের ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সব কিছুই মূল্যহীন বলে মনে হয়। ৪৮ বছরের এই হরুন আজ হতে পারেন এ সমাজের জন্য একটা দৃষ্টান্ত। যে বয়সটি অবসরের, যে বয়সটি পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর, সেই বয়সটি তিনি কাটিয়েছেন নিভৃত সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোর সাথে।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *