শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৬:১৮ অপরাহ্ন

গরু কেনার অর্থ নেই বলে দুই যুগ ধরে কাঠের ঘানি টানছেন স্বামী-স্ত্রী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম: শনিবার, ৬ মে, ২০২৩
  • ১৬ বার পাঠিত
গরু কেনার অর্থ নেই বলে দুই যুগ ধরে কাঠের ঘানি টানছেন স্বামী-স্ত্রী

মোঃ পারভেজ সরকার, সিরাজগঞ্জঃ গরু কেনার অর্থ নেই। সংসার চালাতে প্রায় ২৪ বছর ধরে খাঁটি সরিষার তেল তৈরিতে ৬ মণ ওজনের কাঠের ঘানি টানছেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার আবুল কালাম আজাদ (৫৫) ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন (৪৫)।দশ কেজি সরিষা থেকে ৩ কেজি তেল বের করতে ঘানির জোয়ালে এই দম্পতির হাঁটতে হয় ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার। এভাবেই দুই যুগ ধরে ঘানি টানছেন দরিদ্র স্বামী-স্ত্রী। একদিন ঘানি না ঘোরালে সংসারের চাকা ঘোরে না তাদের। এভাবে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ঘানি টেনে চলছে তাদের জীবন সংসার।

গেলো বৃহস্পতিবার (৪ মে) সকালে রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের শ্রী দাসগাঁতী গ্রামের হতদরিদ্র আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে দেখা যায় গরুর বদলে ৬ মণ ওজনের ঘানি টানছেন এই দম্পতি। সরিষা থেকে তেল বের করতে দম্পতিকে ঘানি টানতে হয় একটানা আট ঘণ্টা। সেই তেল ও খৈল বিক্রি করে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা আয় হয়। এই দিয়ে চলে তাদের সংসার। কোন সঞ্চয় থাকে না। এই অমানুষিক পরিশ্রমের মাধ্যমেই চলছে তাদের সংসারের চাকা।

দীর্ঘদিন ধরে তাদের অমানুষিক পরিশ্রমে নজর পড়েনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তবানদের। তাদের কপালে আজও জোটেনি সরকারি কোন সাহায্য সহযোগিতা। ভাঙা ঘরে সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা। দুই সন্তান বড় হয়েবিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। বাবা মায়ের ঘানি ভাঙানো আয়ে তারা বড় হলেও এখন তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এই দম্পতি ঘানির বোঝা টেনে চলেছে নীরবে। কবে তারা এই বোঝা থেকে মুক্ত হবে তা জানা নেই তাদের।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে এখন ঠিক মতো ঘানি টানতে পারি না। এই ঘানি টেনেই তিনি ৬ সন্তানকে মানুষ করেছেন। প্রতিদিন ফজর আজান থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত তারা দুই দফায় ১০ কেজি সরিষা ঘানিতেভাঙান। এ থেকে ৩ কেজি তেল বের হয়। সেই তেল ৪শ’ টাকা কেজি দরে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করেন। আর ৫০ টাকা কেজি দরে খৈল বিক্রি করেন। এ থেকে প্রতিদিন তাদের ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় হয়। তা দিয়ে এখন ৩ ছেলে এবং স্বামী স্ত্রীর খাবার জোটে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে এখন তাও সম্ভব হচ্ছে না। খুব কষ্টে দিন পার করছেন তারা।

কালামের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকে ঘানি টেনে যাচ্ছি। বয়স বেড়ে যাওয়ায় এখন আগের মতো ভারী ঘানি টানতে পারি না। মাথা ঘোরে। পা চলে না। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তবুও পেটের তাগিদে ঘানি টানতে হয়। পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নান্নু বলেন, সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে ঘানি টানছেন। পরিষদ থেকে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা তৃপ্তি কণা মন্ডল বলেন, ঘানি টানার বিষয়টি অবগত হয়েছি। ঘটনাস্থল পরির্দশনে গিয়েছিলাম। শিগগিরই তাদের সহযোগীতা করা হবে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আমরা তাদের শিগগিরই সহযোগিতা করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন..

More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2020-2021 CNBD.TV    
IT & Technical Supported By: NXGIT SOFT
themesba-lates1749691102