বি এন পি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। দলটির জনসমর্থনও রয়েছে। সামরিক শাসন সহ একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল দলটি। কিন্তু জন্মলগ্ন থেকেই বি এন পি বিপরীত ধারার রাজনীতি করে আসছে। সহজে জনপ্রিয়তা পেতে স্বাধীনতা বিরোধীদের দলে টেনে ধর্মান্ধ রাজনীতি চালু করেছে। বঙ্গবন্ধুর আত্নস্বীকৃত খুনীদের পুরস্কৃত করেছে বিদেশী দুতাবাসে উচ্চপদে চাকুরী দিয়ে। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ মৌলিক নীতি পরিবর্তন করে বাংলাদেশকে ইসলামী রাষ্ট্র বানিয়ে মৌলবাদকে উষ্কে দিয়েছে। ফলে গনতন্ত্রের চর্চাটি ব্যহত হয়েছে চরমভাবে। বি এন পি’র তত্বাবধানে স্বাধীনতা বিরোধীরা রাজনীতিতে ফিরে আসে বুক ফুলিয়ে। দেশে পুনরায় পাকিস্তান পন্থীরা স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয় বি এন পি’র স্বক্রিয় সমর্থনে। রাজাকার দালালরা রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আর মুক্তিযোদ্ধারা নিগৃহীত হয়, জেল খাটে দুই সামরিক সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে। রাজনীতির শিষ্ঠাচার বিনষ্ট শুরু হয়, জন্ম হয় ব্যক্তিগত শত্রুতাও। এটাই রাজনীতিকে নষ্ট করার টার্নিং পয়েন্ট। সেই শত্রুতাটি বি এন পি’র পরে এরশাদ সরকারও অব্যহত রেখেছে। মাঠে ময়দানে গিয়ে গলা ফাটিয়ে গনতনন্ত্র কথা বললেও এই দুই সরকারই গনতন্ত্রকে হত্যা করেছে সুকৌশলে। দেশে দুঃশাসন চালিয়েছে রাজনীতির সৌজন্যতাটি ধংস করে। আজকে রাজনীতিতে হানাহানীর যে চিত্র তার শুরুটি এই সামরিক সরকারের আমলেই।

বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্রটি জিয়া জানতেন সে কথা খুনীদের মুখেই প্রকাশ পেয়েছে। সামরিক বাহিনীর ডেপুটি সেনা প্রধান জিয়া সত্য গোপন করার দায়টি কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। তিনিও বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতদের একজন সেকথা অসত্য হবে কেন? বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুশতাক-জিয়া যে সব আইন জারি করেছে এবং শেখ পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ দেখিয়েছে তা এই সত্যরই প্রমান বহন করে। বেগম জিয়া ১৫ই আগষ্টে তার মিথ্যা জন্মদিন পালন করে পারিবারিক ভাবেই বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়ার জড়িত থাকার প্রমান দেয়। এখনো বি এন পি স্বাধীনতা বিরোধী নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। জামাতকে সঙ্গে করে পাকিস্তানপন্থী নীতি প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন করছে বি এন পি। এখন দাবী করছে তারা সংবিধানকেই বদলে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রবর্তন করবে। দেশের সংবিধানকে যারা বদলে দিতে চায়, নতুন সংবিধান লিখতে চায় তারা কি করে দেশে রাজনীতি করে? সংবিধানকে অমান্য করার দুঃসাহস কি দেশের মানুষ মেনে নিবে? ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধানতার মূল্যবোধকে যারা বদলে দিতে চায় তারা আর যা’ই হউক জনগনের দল বা নেতা হতে পারেনা।

অথচ দেশের সুশীল সমাজের কিছু মানূষ প্রতিনিয়ত জ্ঞান দিয়ে চলেছেন সংলাপের। কার সঙ্গে সংলাপ হবে কি নিয়ে সংলাপ হবে? দেশের সংবিধান বদল করার সংলাপ দেশের মানুষ কি মেনে নিবে?যে কোন দেশে একটি সরকারে মূল দায়িত্ব হল অর্থনোতিক ভাবে দেশকে উন্নত করে জনগনের কল্যান সুবিধা সুরক্ষিত করা। এই কাজে সরকার ব্যর্থ হলে অবশ্যই তার সমালোচনা হবে। কিন্তু বর্তমান সরকার কোন কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে? এই পার্থক্য নির্ণয়ে দেশে একটি নিরীক্ষা হওয়া জরুরী। বি এন পি সরকারের আমল আর বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডের একটি জরিপ প্রকাশ করা হউক। তাহলেই পার্থক্যটি বেড়িয়ে আসবে। জনগনও সত্য জেনে ভোট দিতে পারবে জনগনের দলকে।

সরকারে বিরুদ্ধে সমালোচনা হবেই। সব দেশে সব সরকারের বিরুদ্ধেই সমালোচনা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধেও অনেক অভিযোগ রয়েছে। অনেক এম পি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এলাকার মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে। নির্বাচনে এবার অনেকেরই শোচনীয় পরাজয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বি এন পি জনগনের পক্ষ হয়ে কোন আন্দোলন করতে পারেনি। বর্তমান সরকারের কোন সাফল্যেকেই বি এন পি দেখেনি। পদ্মা সেতু নিয়ে বেগম জিয়া যা বলেছেন তা নিয়ে হাস্যরসের খোরাক হয়েছে। কিন্তু পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বি এন পি নেতারা পদ্মা সেতু নিয়ে কি বলেছে? জনগন কি বোকা? দেশের মানুষ যা দেখছে তা কি অসত্য? রাতে ভোট হয়েছে বলে চিৎকার করে আসছে গত ৫ বছর ধরে। কিন্তু এই দাবীর পক্ষে একটি প্রমানও কি উপস্থাপন করতে পেরেছে বি এন পি? দলের নেতারা দাবী করছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০% এর বেশী ভোট পাবেনা তারমানে দেশের বেশীরভাগ জনগন বি এন পিকে সমর্থন করে। এটাই যদি সত্য হয় তাহলে দলটি নির্বাচন বর্জন করছে কার ভয়ে এবং কেন?

বি এন পি এখন যে দাবীটি করছে তা হলো (১) নির্বাচন কমিশনটি হতে হবে তাদের পছন্দ মত আর (২) সরকারকে পদত্যগ করে তাদের পছন্দ করা ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অর্থাৎ, ভোটের আগেই চুরির ব্যবস্থাটি করে দিতে হবে! এটা কেমন আবদার? আসলে বি এন পি যতবার ক্ষমতায় গেছে এভাবে ষড়যন্ত্র করেই বিজয়ী হয়েছে। না হয় হত্যা করে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। বি এন পি’র চোখা নির্বাচন স্বচ্ছতা মানে তাদের বিজয় নিশ্চিত করা। এটা গনতন্ত্র নয়! দেশের রাজনীতিতে এখন এটাই মূল বিষয় হায়ে দাড়িয়েছে। একটি স্বাধীনতার পক্ষে মূক্তিযূদ্ধের চেতনার পক্ষে। অন্যটি বিপক্ষে। জনগনকেইএখন ভোটের মাধ্যমে সুনিদৃষ্ট ভাবে রায় জানাতে হবে দেশ কার পক্ষে। এবারের নির্বাচনে এই দুই পক্ষের বিবেচনাটি পরিস্কার করতে হবে সব দল এবং নেতাকে।


আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা