শনিবার, ১০ জুন ২০২৩, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন

সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মুরাদনগর এলাকাবাসী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম: শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩
  • ২৬ বার পাঠিত
সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ মুরাদনগর এলাকাবাসী

মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার মুরাদনগরে এখন মূর্তিমান আতঙ্ক মতিন বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল, ভাড়ায় গিয়ে মাস্তানি, ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়, প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানাধীন মেটংঘর, হোসনাবাদ এলাকায় এ বাহিনীর রয়েছে ব্যাপক তৎপরতা। এলাকার ব্যবসায়ী, প্রবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এই বাহিনীর হাতে নাজেহাল হচ্ছে। মতিন বাহিনীর প্রধান আব্দুল মতিন, সেকেন্ড ইন কমান্ড আরাফাত, মিজান, আদিবসহ বেশ কয়েকজন এখন এলাকায় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এক লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় সম্প্রতি মেটংঘর বাজারের সততা ট্রেডার্সের মালিক আলমগীর হোসেনকে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে মতিন ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

জানা যায়, সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে বেশ কয়েক বছর ধরে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন মেটংঘর বাজার এবং হোসনাবাদ এলাকায় নানা অপরাধ করে চলেছে সন্ত্রাসী আব্দুল মতিন। কিশোর গ্যাং, উঠতি বয়সি যুবক, মাদকসেবী এবং ছিঁচকে চোরের সমন্বয়ে এ বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এলাকার প্রভাবশালীদের নানা কৌশলে ম্যানেজ করে প্রায় ২০-২৫টি গ্রামে প্রভাব খাটায় এ বাহিনীর সদস্যরা। এলাকার সালিশ বৈঠক, বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়, জমি দখল, প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়, ইভটিজিং, ধর্ষণ, দাঙ্গাহাঙ্গামা করে অর্থ উপার্জন করাই এ বাহিনীর কাজ। বাহিনীর প্রধান মতিনের বিরুদ্ধে নারী ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এছাড়া বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের বিরুদ্ধে রয়েছে পৃথক মামলা। দিন যত যাচ্ছে এ বাহিনী ততই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেই হামলা, মারধরসহ নানা ধরনের নাজেহালের শিকার হতে হয়।

প্রশ্ন এসেছে তাহলে পুলিশ কী করছে? তাদের সঙ্গে কি প্রভাবশালীদের পাশাপাশি পুলিশের কোনো সখ্য রয়েছে? নাকি গোলকধাঁধার মধ্যে রয়েছে ভুক্তভোগীরা? তাহলে এই বাহিনীর খুঁটির জোর কোথায়? এমন নানা প্রশ্ন এখন এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। সম্প্রতি এ বাহিনীর টার্গেটে পড়েছেন এলাকার বড় ব্যবসায়ীরা। মঙ্গলবার মেটংঘর বাজারের শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সততা ট্রেডার্সে গিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মতিন ও তার বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাকে কোপানো হয়। এই হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, সন্ত্রাসী মতিন বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশ চাঁদাবাজির মামলা না নিয়ে সাধারণ ধারায় মামলা নিয়েছে। চাঁদাবাজির অভিযোগ দিতে চাইলেও থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মোহন চন্দ্র চাঁদাবাজির মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। চাঁদাবাজির ধারা উল্লেখ করা হলে মামলা নেওয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন।

এদিকে চাঁদার দাবিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে একজন ব্যবসায়ীকে কোপানোর ঘটনায় জড়িতরা গ্রেফতার না হওয়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

হোসনাবাদ গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মতিন বাহিনীর অত্যাচারের মুখে ৫ বছর আগে বাড়িঘর ছেড়ে এখন কুমিল্লা শহরে অবস্থান করছি। তাদের ভয়ে এলাকায় যেতে পারছি না। তারা আমার কাছে চাঁদা চেয়েছিল। না দেওয়ায় আমার বাড়িঘর ভাঙচুর করে। গত কুরবানির ঈদে বাড়ি গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাকে কুরবানি করতে দেয়নি ওরা। পরে প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোসনাবাদ এলাকার একজন প্রবাসী জানান, কোনো প্রবাসী দেশে এলেই তাদের ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় তারা বাড়িতে এসে মারধর ও ভাঙচুর চালায়। তাদের ভয়ে অনেক প্রবাসী পরিবার গ্রাম ছেড়ে দিয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মতিন বাহিনীর প্রধান আব্দুল মতিন বলেন, আমি এলাকায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, যারা অপরাধ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি। তাই আমিসহ আমার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। মতিন বলেন, আমি ব্যবসায়ী আলমগীরের কাছে চাঁদা চাইনি। সে আমার লোকজনকে মারধর করেছে। তাই আমি প্রতিশোধ নিয়েছি।

নিয়েছি। এ বিষয়ে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মতিনের বিরুদ্ধে আগে কী কী মামলা রয়েছে আমার জানা নেই, তবে তার অতীত রেকর্ড দেখে আমরা দ্রুত অ্যাকশনে যাচ্ছি। সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে সন্ত্রাসী মতিন ও তার সঙ্গীরা পলাতক রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

নিউজটি শেয়ার করুন..

More News Of This Category
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © 2020-2021 CNBD.TV    
IT & Technical Supported By: NXGIT SOFT
themesba-lates1749691102