সিএনবিডি ডেস্কঃ “ভালবাসা” ছোট্ট একটি শব্দ হলেও এর অর্থ কিন্তু অনেক অনেক বেশি। এই ছোট্ট একটি শব্দই পুরো দুনিয়াকে পালটে দিতে এক নিমিষেই। ভালোবাসার নেই কোন রঙ বা রূপ। হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয় ভালোবাসা। প্রিয়জনকে ভালোবাসতে বা তা প্রকাশ করতেও প্রয়োজন নেই কোনো নির্দিষ্ট ক্ষণ, দিন, মাস বা বছরের। এই কথাগুলো জানা আমাদের সবারই। সব কথার পরও গুরুত্ব বলে একটা কথা থেকে যায়। আর এই ভালোবাসার গুরুত্ব বা তাৎপর্যকে তুলে ধরতেই জন্ম হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের।
প্রতি বছর এই দিনটাতে অনেকেই তাদের প্রিয়জনদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে একটু অন্যভাবে। ফুল, কার্ড আর নানান উপহার সামগ্রীতে ভরিয়ে দেয় তারা প্রিয় মানুষটিকে। অনেকের কাছেই তাই বহুল আকাঙ্ক্ষিত দিন এটি। নানা আয়োজনে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় দিনটি। দিবসটি বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ১৯৯৫ সাল থেকে। এই দিনটিকে ঘিরে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে থাকে নানান আয়োজন। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরুণে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের সব দেশেই বাড়ছে দিনটির কদর। বিশেষত তরুণ সমাজে দিনটির মূল্য রীতিমত চোখে পড়ার মত।
তবে এ দিনটির পেছনেও রয়েছে এক বিশাল ইতিহাস। তা হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। জেনে নেওয়া দরকার দিনটির ইতিহাস সম্পর্কে। আসলে কেন পালন করা হয় ১৪ ফেব্রুয়ারী।
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স নামে একজন খৃষ্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দী করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দী অবস্থায় তিনি জনৈক কারারক্ষীর দৃষ্টহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আর তাই তার প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিল। অতঃপর ৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১ম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন’স স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করেন।
খৃষ্টানজগতে পাদ্রী-সাধু সন্তানদের স্মরণ ও কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস রয়েছে। যেমন: ২৩ এপ্রিল – সেন্ট জজ ডে, ১১ নভেম্বর – সেন্ট মার্টিন ডে, ২৪ আগস্ট – সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর- আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর – সেন্ট এন্ড্রু ডে, ১৭ মার্চ – সেন্ট প্যাট্রিক ডে। পাশ্চাত্যের ক্ষেত্রে জন্মদিনের উৎসব, ধর্মোৎসব সবক্ষেত্রেই ভোগের বিষয়টি মুখ্য। তাই গির্জাঅভ্যন্তরেও মদ্যপানে তারা কসুর করে না। খৃস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেইটাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
এছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। সম্প্রতি পাকিস্তানেও ২০১৭ সালে ইসলাম বিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করে সে দেশের আদালত। বর্তমানকালে, পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে এবং আনুমানিক প্রায় ২.৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।