অনলাইন ডেস্কঃ অজ্ঞানপার্টির চক্রদের হাত থেকে যাত্রীদের রক্ষায় গণপরিবহনে চালক ও হেলপারদের কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, যাত্রীর বেশে গাড়িতে উঠে অন্য যাত্রীদের অজ্ঞান করে মালামাল লুট করছেন তারা। গাড়িতে চালক ও হেলপারদের উচিত হবে হকার উঠতে না দেয়া। আমরা অনেক অভিযোগ পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে এরপর অভিযানে অজ্ঞানপার্টির সদস্যদের গ্রেফতারও করা হয়েছে এবং তারা স্বীকারও করেছেন এ কাজ তারা করেন। তারা বলেছেন, বাসে, ট্রেনে ও লঞ্চে এ ধরনের কাজ বেশি করে থাকে। অনেকের নামও আমরা পেয়েছি।
পুলিশ বলছে, সাধারণত ঈদকে টার্গেট করে অজ্ঞান পার্টি সক্রিয় হলেও তাদের অনেকেই পেশাদার অপরাধী, যারা ১২ মাসই এসব অপকর্ম করে বেড়ান।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (লালবাগ জোন) উপপুলিশ কমিশনার মসিউর রহমান বলেন, এ ধরনের ওষুধ খাওয়ার পর দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী, তখন তার সর্বস্ব লুটে নেয় তারা। এই বিষয়গুলো ঈদ, পূজা বিশেষ করে সামাজিক উৎসবগুলোতে বেশি হয়ে থাকে। গড়ির মধ্যে বা বাইরের কারও চটকদার কথায় ভুলবেন না ও তাদের দেয়া খাবার খাবেন না। নিজে সচেতন হন, অন্যকেও সচেতন করুন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাসে ওঠেন তিনজন। দুজন বসেন টার্গেট যাত্রীর পাশে। তৃতীয়জন হাকার সেজে বিক্রি করতে থাকেন নানা রকম ওষুধ। টার্গেট যাত্রীকে কৌশলে খাওয়ানো হয় সেই ওষুধ। অজ্ঞান হওয়ার পর ছিনিয়ে নেয়া হয় সর্বস্ব। চক্রটির পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আর রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির সদস্য অন্তত ২০০ আছে বলে তাদের ধারণা।
পুলিশ আরও জানায়, দুই থেকে তিন ধরনের ঘুমের ওষুধ গুঁড়া করে এরসঙ্গে চ্যাবনপ্রাশ মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ টোটকা। যা খেলে মানুষের নেশা ও তীব্র ঘুম আসে। একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন সেবনকারী। মিজান নামে এক ব্যক্তি একসময় তরকারি বিক্রি করতেন। বর্তমানে অজ্ঞান কিংবা মলম পার্টির একজন সক্রিয় হিসেবে এখন তিনি বিশেষ হালুয়া তৈরি করেন। এ বিদ্যা তিনি রপ্ত করেছেন কয়েক বছরের চেষ্টায়। তার তৈরি করা হালুয়া খেয়ে এখন পর্যন্ত অজ্ঞান হয়েছেন প্রায় ৭০০ মানুষ। একা নন, তার দলে আছে আরও চারজন। এ কাজে সবার দায়িত্ব আলাদা আলাদা বলে জানান মিজান।
মিজান পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, পাঁচজনের দলটি অজ্ঞান করার ওষুধ নিয়ে বাসে ওঠেন। একজন হকার সেজে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। বলা হয়, পেটব্যথা, মাথাব্যথা, গ্যাস্ট্রিক ও যৌন সমস্যার সমাধান মিলবে তাদের তৈরি করা দাওয়াই খেলে। টার্গেট ব্যক্তিকে প্রলুব্ধ করতে নিজেরাই কেউ কেউ কিনে খান। এভাবেই তারা কাজটি করে আসছেন।
বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে মানুষকে অজ্ঞান করে সবকিছু লুটে নেয়ার পাশাপাশি প্রায়ই বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে বলে জানায় পুলিশ।
আর তাই গণপরিবহনে হকারদের নিরুৎসাহিত করতে বাসচালক ও হেলপারদের আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ।