বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান একটি দেশ হওয়ায় সারা বছরই এখানে বিভিন্ন প্রকার গবাদিপশুর মাংস ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। এছাড়া পবিত্র ঈদুল আজহার সময় প্রচুর গরু, ছাগল (প্রায় ৯১ লক্ষ) কোরবানি করা হয়েছে। দেশে চামড়ার যোগান ও সরবরাহ ক্রমেই বাড়ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক একটি রপ্তানিমুখী শিল্প। জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি, রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়, কর্মসংস্থান এবং মূল্য সংযোজনের নিরিখে চামড়াশিল্প একটি অপার সম্ভাবনাময় খাত। চামড়া শিল্প বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ও রপ্তানির জন্য চামড়া এবং চামড়াজাত সামগ্রী উৎপাদন করে আসছে। সেমিপাকা চামড়া এবং চামড়াজাত দ্রব্য এই শিল্পের রপ্তানি সামগ্রী।

ব্যবসা হিসাবে বাংলাদেশে চামড়া খাতের যাত্রা শুরু হয়েছে বিগত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে। ১৯৪০ সালে ব্যবসায়ী রণদা প্রসাদ সাহা (আরপি সাহা) নারায়ণগঞ্জের কাছে সর্বপ্রথম একটি ট্যানারি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ সালের অক্টোবরে তৎকালীন সরকার ঘোষিত এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঢাকার হাজারীবাগে ট্যানারি শিল্প স্থাপিত হয়। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে এ খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

গত দু‘দশকে এ খাতে উল্লেখযোগ্য আধুনিকায়ন ঘটেছে এবং এর ফলে বিশ্বে প্রথম শ্রেণির চামড়া ও চামড়ার তৈরি সামগ্রী প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করেছে। মূলত বাংলাদেশের কাঁচাচামড়ার গুনগতমান অনেক ভালো। এছাড়া বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের Black Bengal Nanny Goat জাতের ছাগলের চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশের মসৃণ চামড়া জাপান এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। কতিপয় জাপানি ব্যবসায়ী যৌথ বিনিয়োগে (Joit Venture) বাংলাদেশের ছোট বড় কিছু সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চামড়াজাত দ্রব্য তৈরি করছে। জাপান-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগের কোম্পানিগুলো নিজস্ব উৎপাদিত চামড়াজাত দ্রব্য জাপানে রপ্তানি করে সুনাম অর্জন করছে। বাংলাদেশের চামড়াজাত দ্রব্য জাপানের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক এলাকা রুপ্পঙ্গি, শিনজুকুর নামিদামি শোরুমে শোভা পাচ্ছে এবং চড়াদামে বিক্রয়ও হচ্ছে। এছাড়াও ছোট বড় আরও অসংখ্য ব্যবসায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি করছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চামড়া শিল্পের রপ্তানি আয় ছিল ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫ হাজার মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২৩ কোটি মার্কিন ডলার। এরপর থেকেই এ শিল্পের আয় নিম্নমুখী হতে শুরু করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চামড়া শিল্পের রপ্তানি আয় কমে দাঁড়ায় ১০৮ কোটি ৫৫ লাখ ১ হাজার মার্কিন ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ শিল্পের রপ্তানি আরও কমে হয় ১০১ কোটি ৯৭ লাখ ৮ হাজার মার্কিন ডলার যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৬ দশমিক ০৬ শতাংশ কম। সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া শিল্পের রপ্তানি আরও কমে হয় ৭৩ কোটি ৯৩ লাখ ৯ হাজার মার্কিন ডলার।

রপ্তানিকারকরা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে পণ্য উৎপাদনে তাদের খরচও বাড়ছে। চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহার হওয়া লবণ ও রাসায়নিক দ্রব্যর দাম বাড়ার কথা বলছেন তারা। তবে গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে কমছে কাঁচা চামড়ার দাম। তাহলে প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ বাড়ার দাবি কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। ২০১৩ সালে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা, এই বছর তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে, ঢাকায় কোরবানির পশুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং ঢাকা ছাড়া সারা দেশে ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা। এ ছাড়া প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা, বকরির চামড়া ১২ থেকে ১৪ টাকা নির্ধারণ করেছিল সরকার। বাস্তবে গরুর চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৩০ টাকা বা এর চেয়ে কমদরে। যদিও গত বছর ঢাকার জন্য লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার দাম গরুর ক্ষেত্রে ছিল প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা।

এবছর (২০২১ সাল) ঈদুল আযহায় ৯০,৯৩,২৪২টি গবাদিপশু কোরবানি করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৯টি গরু-মহিষ, ৫০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৮টি ছাগল-ভেড়া ও অন্যান্য ৭১৫টি গবাদিপশু। গতবছর (২০২০ সালে) কোরবানিকৃত গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ৯৪,৫০,২৬৩টি। এ বছরের গরু-ছাগলের তুলনামূলক হার অনুযায়ী গতবারের ছাগলের সংখ্যা ৫২,৫০,১১৭ এবং গরুর সংখ্যা ৪২,০০,১৪৬ টি।

২০২০ এ বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে বাংলাদেশের ট্যানারিগুলোতে ২৪,২৫,২৭৬ টি গরুর চামড়া এবং ৬,২৯,২২৫ টি ছাগলের চামড়া সংগৃহীত হয়েছে। অর্থাৎ গতবছরে কোরবানিকৃত ৯৪,৫০,২৬৩টি গবাদিপশুর চামড়া থেকে ৩০ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫০১ টি চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল, বাকি চামড়াগুলো কোথায় গেল? উত্তরে বলবেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ছিল ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার (রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো)। ২০২০-২১ অর্থবছরে সেই আয় বেড়ে ৯৪ কোটি ২০ লক্ষ ডলার হয়েছে (বানিজ্য মন্ত্রনালয়)। অর্থাৎ রপ্তানী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই খাতের প্রধান কাঁচামাল হলো কাঁচা চামড়া। এবছরের সংগৃহীত চামড়ার সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ সহ প্রতি বছর প্রায় আড়াই কোটি গরু-ছাগলের কাঁচা চামড়া উৎপাদিত হয়। এই আড়াই কোটি কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানী করলে কি পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতো একবার হিসাব কষলেই বুঝা যাবে, এই খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে কিনা?

গত এক দশক হতে কাঁচা চামড়ার বাজার মূল্য নাই বললেই চলে। এক সময় চার-পাঁচ মণ ওজনের একটি গরুর চামড়া ৩-৪ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, এবছর সেটা বিক্রি হয়েছে মাত্র ১৫০-২০০ টাকায়। বিগতদিনে একটি খাসির চামড়া যেখানে ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হতো এবার সেটা বিক্রি হয়েছে ১০-২০ টাকায়। কিন্তু জুতা-স্যান্ডেলের দাম বেড়েই চলেছে। গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার দামে এ বিপর্যয় চলছে। চামড়ার এই দরপতনের যথাযথ কারণ খুঁজে তার সমাধান করা অতীব জরুরী।

সার্বিকভাবে অন্যান্য শিল্পের মত চামড়াখাতও ব্যাংকঋণ নির্ভরশীল। তবে এখাতে ঋণের প্রায় পুরোটাই খেলাপি। সংগৃহীত তথ্যানুসারে এখন পর্যন্ত চামড়া খাতে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি। প্রতি বছর কোরবানির ঈদেই সিংহভাগ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এই সময় চামড়া সংগ্রহের জন্য ট্যানারি মালিকরা প্রতি বছরই ব্যাংক ঋণ পেয়ে থাকেন। সাধারণত ঈদের সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামের মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া সংগ্রহ করে আড়তে বিক্রয় করেন। এছাড়া জেলা পর্যায় হতে চামড়া ব্যবসায়ীরা কোরবানির সময় চামড়া কিনে, লবণ দিয়ে মজুদ রাখে, পরবর্তিতে ঢাকায় আড়তদারের নিকট বেশি দরে বিক্রয় করেন। অভিযোগ রয়েছে, কোরবানির আগে চামড়াশিল্পের ট্যানারি মালিকদের যে ঋণ দেওয়া হয় সেই টাকা তারা আড়তদারদের পূর্ববর্তী ঋণ পরিশোধ না করে অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগ বা স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়ের কাজে ব্যবহার করে। ফলে ঈদে নতুন চামড়া সংগ্রহে আড়তদাররা অর্থ সংকটে পরে এবং আড়তদাররাও ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের বকেয়া পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে চামড়া ক্রয়ে টাকার প্রবাহ কমে যায়। মাঠ পর্যায়ের মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য নামেমাত্র সংখ্যক চামড়া ক্রয় করে। এছাড়াও চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণ হিসেবে ট্যানারি মালিক ও চামড়ার আড়তদারদের সিন্ডিকেট বা কারসাজি ও অনেক ক্ষেত্রে তারা দামের ওপর প্রভাব বিস্তার করে কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বিক্রেতাকে বাধ্য করে থাকেন।

গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে চামড়া শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও সেভাবে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারছে না। যদিও এ খাতে বড় ধরনের সম্ভাবনা দেখছেন গবেষক, উদ্যোক্তা ও সরকার। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে চামড়ার অবদান এখন মাত্র ০.৩৫ ভাগ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রম জরিপ বলছে, ২০১৬ সালে এ খাতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার, যা মোট কর্মসংস্থানের ০.২২ ভাগ।

চামড়াশিল্প নিয়ে দূর্নীতি:

বাংলাদেশে নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নীল চামড়া রপ্তানি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেখানেও সিন্ডিকেট কাজ করছে। এছাড়া কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চামড়া রপ্তানীর জন্য ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে, প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি না করে দুর্নীতির মাধ্যমে চামড়াশিল্প উন্নয়নে সরকার ঘোষিত ‘ইনসেনটিভ‘ গ্রহণ করে। ইনসেনটিভ পরিশোধ করার কারণে কাগজপত্রে রপ্তানী আয় বৃদ্ধি দেখা যায়, কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি না হয়ে কাঁচা চামড়া পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে গত কয়েক বছর আগে যেই সাইজের কাঁচা চামড়া ৩ হাজার টাকা বিক্রয় হতো, সেই একই সাইজের চামড়া ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রয় হয়েছে।

দূর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুনরায় ঋণ প্রদানে অনিহা প্রকাশ করে। আড়তদাররা বকেয়া টাকা না পেয়ে চামড়া ক্রয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা আড়তে চামড়া বিক্রয় করতে পারে না বিধায়, আগ্রহ নিয়ে চামড়া ক্রয়ের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে না। ফলে চামড়া মূল্য অটোমেটিক ভাবে কমে যায়। চামড়ার বিক্রয় মূল্য কমে যাওয়ায় মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরাও কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে আগ্রহী হয় না। অবিশ্বাস্য হারে চামড়ার মূল্য কমে যাওয়ায় এবং যথাসময়ে চামড়া বিক্রয় না হওয়ায় ‘কাঁচা চামড়া‘ পাচারকারীদের হাতে পৌঁছে যায়। বলবেন, চামড়া পাচার রোধে বর্ডার সীল করে দেওয়া হয়। তাই যদি হয় গতবছরের কোরবানিতে জবেহকৃত গরু ছাগলের প্রায় ৬৪ লক্ষ চামড়ার হিসাব কোথায়? বর্ডার যত কঠোর, পাচার তত বেশি। তবে আনুষঙ্গিক খরচটা বেড়ে যায়।

উদাহরণস্বরূপ সম্প্রতি ভারতে সৃষ্ট ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট‘ এর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বর্ডার সীল করেছিল সরকার। কিন্তু টেলিভিশন ও পত্রিকায় দেখা গেছে ভারত থেকে আসা লোকজন ঠেকাতে প্রশাসন হিমসিম খাচ্ছে। পরবর্তিতে সীমান্ত এলাকার জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারের আনুকূল্য পেলে সম্ভাবনাময় চামড়াখাত তৈরি পোশাকশিল্পের মত আরো দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে বলে মনে করে অর্থনীতিবিদ ও এ খাত সংশ্লিষ্টরা। চামড়া শিল্পের ভ্যালু এডিশন ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। অর্থাৎ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে যে আয় হয় তার বিপরীতে এই খাতে ব্যবহার করা রাসায়নিক দ্রব্য ছাড়া আর তেমন কিছু আমদানি হয় না। যদিও তৈরি পোশাকে ১০০ টাকা রপ্তানি হলে ৫০ টাকার বেশি চলে যায় এই খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানিতে।

বাংলাদেশের চামড়ার মানও অন্যান্য দেশের তুলনায় উন্নত। বিশ্লেষকরা বলছেন, চামড়া খাতের উন্নয়নে দরকার একটি শিক্ষিত উদ্যোক্তা শ্রেণি। শিক্ষিত ও আন্তরিক সৎ উদ্যোক্তাদের কারণে আশির দশকে যাত্রা করে তৈরি পোশাক শিল্প অর্থনীতির অন্যতম ভিত হতে পেরেছে, অথচ চল্লিশের দশকে যাত্রা করা চামড়া শিল্প আগের অবস্থানেই পড়ে আছে।

চামড়াশিল্প নিয়ে সুপারিশঃ

*চামড়া শিল্পের ধস কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন এই শিল্পের আধুনিকীকরণ ও বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে আরো কার্যকর করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো।

*এ ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ঘাটতি, ট্যানারির অবকাঠামোগত উন্নয়নের ঘাটতি। জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য সম্ভাবনাময় এই শিল্পের উন্নয়নে ট্যানারির অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন প্রয়োজন।

*এই শিল্পের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য চামড়া চোরাচালান বন্ধ করে চামড়ার মৌসুমে সরকারের পক্ষ থেকে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানসহ চামড়া সংগ্রহে সঠিক ব্যবস্থাপনা, বাজার মনিটরিং, দ্রুত সংরক্ষণ, পরিবহন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সুষ্ঠু পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করলে চামড়াশিল্প প্রসার ঘটিয়ে পোশাক শিল্পের চেয়েও অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

ডঃ মোঃ আওলাদ হোসেন,

ভেটেরিনারীয়ান, পরিবেশ বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক কর্মী ও কলামিস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ। 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *