সরকারের মেয়াদ পূর্ন হবে এ বছর ডিসম্বরে। তারপরই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। খুব বেশী সময় হাতে নেই, প্রস্তুতিও চলছে সব দলে। বি এন পি নির্বাচনে যাবেনা বললেও বসে নেই তারাও। বিশেষ করে গাজীপুরের নির্বাচন স্বস্তি ফিরিয়েছে অনেকের মনে। দলের মনোনয়ন না পেলে এবার স্বতন্ত্র হয়ে লড়বেন অনেকে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় গনসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন। গ্রাম গঞ্জের চায়ের ষ্টলগুলি জমে উঠেছে নির্বাচনি আলোচনায়। এই একটা সময় বাংলাদেশের মানূষ সরব হয়।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা হয় মুলত দলের প্রার্থীর সঙ্গে অন্য দলের। কিন্তু এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যেতে পারে। বেশীরভাগ আসনে প্রতিদ্বন্দিতা হবে ব্যক্তির বিপক্ষে ব্যক্তির। দলে দীর্ঘদিনের নিবেদিত কর্মীরা এলাকায় পরিচিত। কোন অযোগ্য বিত্ত্বশালীকে দলের প্রার্থী হিসাবে তৃনমূলের কর্মীরা মেনে নিবেনা। দলের চাপে মেনে নিলেও প্রচারনায় নামবেনা। দলের ভোট ব্যাঙ্ক ভাগাভাগি হলে অনেক প্রার্থীরই বিজয়ী হওয়া কঠিন হবে। বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও হবে অনেক বেশী। ক্ষমতায় যেতে নীতি আদর্শ ভুলে বড় দলের নেতারাও ক্ষমতাসিন দলের টিকিট চাইবে। শরিক দলের প্রার্থীকে ছাড় দিলে হতাশ হবে কর্মী বাহিনী, স্বতন্ত্র হয়ে লড়বে বহু প্রার্থী (অনেকে দলের ইঙ্গিতেই)। যারা দলের প্রতিকের উপর নির্ভর করে সহজ জয়ের আশা করছে তাদের বিজয়ী হওয়া সহজ হবেনা। ছাড় দিবেনা দলের স্থানীয় নেতা কর্মীরা। নমিনেশন চাইতে ভির জমাবে বিত্ত্বশালীরা কিন্তু কার ভাগ্যে শিকা ঝুলবে তা শুধু নেতারাই জানে।
কেউ কেউ ইতিমধ্যে আলোচনায় এসে গেছে। কে কোন আসনে প্রার্থী হবেন তা’ও জানান দিয়েছেন গনসংযোগ করে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। বিপদটি হলো বড় দলগুলি প্রার্থী বাছায়ে নিয়ম বেঁধে দিলেও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তা সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছেনা। অর্থের জোরে অরাজনৈতিক বিত্ত্বশালীদেরই নাম উঠে আসছে বার বার। কেন্দ্রিয় নেতারা অনেকে প্রভাবিত হচ্ছেন অর্থের কাছে। দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলাদেশে রাজনীতিতে একটি স্বচ্ছ ধারা প্রবর্তনের দাবী উঠেছে। এই ধারা প্রবর্তনে রাজনৈতিক দলগুলির স্বচ্ছতা খুব বেশী প্রয়োজন। দল নেতা কিংবা প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করলে সেই দাবীটি পূর্ন হবেনা। নির্বাচনে একজন বিজয়ী হবেই তবে দেশ একজন জননেতা চায় নেতা নয়। সব দলেই যোগ্য নেতৃত্ব খুব বেশী জরুরী। জরুরী দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলও।
আওয়ামী লীগ তাদের তৃতীয় মেয়াদ পূর্ন করতে যাচ্ছে। দেশে ব্যপক উন্নয়ন হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। কিন্তু রাজনৈতিকে প্রাতিষ্ঠানিক করা যায়নি। বিরোধী দল জাতীয় সংসদে সরকারের বিরোধীতা করে কিন্তু তারাও সরকারেরই অংশ। যে কারনে দেশে গনতন্ত্র রক্ষায় একটি শক্তিশালী বিরোধী পক্ষ প্রয়োজন। বিগত ৩ মেয়াদে প্রধান বিরোধী দল শুধু সরকার পতনের আন্দোলন করেছে। জনস্বার্থে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। অন্য বিরোধী দল সরকারকে সমর্থন করে সুবিধা ভোগ করেছে, জনকল্যানে নিয়োজিত হতে পারেনি। রাজনীতিতে মতবিরোধ আর আদর্শের অমিল থাকবেই কিন্তু গনতন্ত্রের ধারাটি মেনে চলতে হবে সবার এবং সব দলের। এই নির্বাচনে সকল দলের উচিৎ হবে সঠিক নেতৃত্ব বাছাই করা। এম পি নয় জননেতা নির্বাচন করা।। তা না হলে যতই আন্দোলন সংগ্রাম করুক গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেনা। গতন্ত্রই রাষ্ট্র পরিচালার একমাত্র পথ নয় তবে এখনো পর্যন্ত এর চেয়ে উত্তম কোন পন্থা আবিস্কার করা জায়নি। তাই সকল দলের নেতৃবৃন্দের কাছে সবিনয়ে নিবেদন, প্লিজ যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচন করুন।
আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা