
উৎসর্গ – আমার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মানুষ ক্যামেলিয়া আপনা কে, যাকে আমি আজীবন সন্মান
দিয়ে যেত চাই।
জীবন কতটা দেয়, নাকি শুধু নেয়, আবার একটা সময় আসে যখন জীবন না-পাওয়ার অনেক কিছু আরো অনেক বেশি করে ফিরিয়ে দেয়। হয়তো শেষ সময় জীবন ফিরিয়ে দেয়। তবুও তো দেয়, আবার কারো জীবনের শেষ পান্তে এসে বাকি যে সামান্য টুকু থাকে তার সব টুকু কেড়ে নেয়।
হয়তো জীবন আর বাস্তবতা ঠিক এমনই সমান্তরালে চলেই খোদার নিয়মে। কখনও দেয়, কখনও কেড়ে নেয় আবার কখনও ফিরিয়ে দেয় আহহা রে জীবন কেন এমন! ভালোবাসার খোঁচা সবচেয়ে বড় খোঁচা, বড় আনন্দের, জগৎ সংসারে ভালোবাসার খোঁচা যারা সবচেয়ে বেশি পেয়েছে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি সুখী হয়েছে পৃথিবীতে।
আর যারা ভালোবেসে আঘাত পেয়েছে তাঁরা বেঁচে থেকেও মরা, সেকি যেমন তেমন মরা একবারে বয়স থাকতেই ঘাটের মরা! সেকি নিদারুণ, কি অদ্ভুত জীবন এক মহাপ্রলয় ছাড়া আর কিছু নয় বৈকি! আহহা রে জীবন যখন যেমন! জট খুলছে নাহ জীবনের, আর কেনই বা জট বাঁধে জটিলতায় কে তার খবর রাখে, তার একটু হিসাব রাখার সময়ও তো নেই।
আচ্ছা আমরা কি খবর রাখি রাখতে চাই, চাইনা তো, রাখতে চেয়েছি শুধু নিজেরটায়, তাই হিসেব মেলেনি, হিসেব মিলাতে গেলে যোগবিয়োগ দুট অঃকই দরকার৷ দরকার শুধু নিজেকে নয় নিজের সাথে আরও একজন মানুষ, তবেই নাহ যোগবিয়োগের ফল মিলবে, সেই ফল সুন্দর করতে চাইলে কখনও যোগ আবার কখনও বিয়োগ করতে হয়, যখন যাকে যোগ করা দরকার আর যখন যাকে বিয়োগ করা দরকার তাই করি, করতে চাই, সেই যোগবিয়োগ ফল শূন্য, আজ এই ক্কীন ব্রীজের সবচেয়ে উঁচু যায়গায় দাঁড়িয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে আসি একটু প্রশাস্তির আশায়, এই সিলেট শহরের ক্কীন ব্রীজের অশান্ত বাতাস আমাকে শান্ত করতে পারছে নাহ কেন, ঠিক বুঝতে পারছি নাহ, এই গোধূলির আলোমাখা আকাশপটের উপরে-সেইটুকুই জীবনের গল্প বৈচিত্র্যময় চরিত্রের ভাস্কর্য সংগ্রহ করতে চাই বলেই এই সিলেট শহরের বিখ্যাত ক্কীন ব্রীজের উপরে বাতাসের সমুদ্র ডুবে মরতে আসি আবারও বাঁচতে।
গোধূলি লগ্নে পেরিয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে এবার ফেরার পালা, ভাবছি বাসায় ফিরবো কিভাবে একবার ভাবছিলাম ব্রীজের নিচে হেঁটেই নামি আবার মনে হলো একটা রিক্সা পেলে ভালো হলো, হঠাৎ একটা রিক্সা দেখে রিক্সাওয়ালা ডাক দিলাম, এই মামা যাবেন, রিক্সা থেমে গেলো, রিক্সা যখন ব্রীজ থেকে নিচে নামছিলো তখন হালকা বাতাস আমাকে স্পর্শ করলো মনটা যেন কোথায়
হারালো ঠিক বুঝতে পারছিলাম নাহ, হঠাৎ রিক্সাওয়ালা জানতে চাইলো, ম্যাডাম কোথায় যাবেন, বললাম সোজা সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের গেটে যান, রিক্সাওয়ালা জিজ্ঞেস করলো ম্যাডাম কোন স্টাফ কোয়ার্টারে যাবেন, আমি বললাম সরকারি হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারের গেটে, রিক্সাওয়ালা জানতে চাইলো ম্যাডাম কি এই সিলেট শহরে নতুন নাকি, না তেমন নতুন নাহ দুই বছর হলো এখানে, হঠাৎ এটা জানতে চাইলেন কেন মামা, রিক্সাওয়ালা বললো না মানে আপনি মনে হয় ডাক্তার মানুষ,
আর হাসপাতাল থেকে এই ব্রীজ তো উল্টো রাস্তা, তাই বললাম, আমি বললাম আসলে এই দিকে এসেছিলাম একটা রোগী দেখতে এক মহিলা রোগীর বাসায়, রিক্সাওয়ালা বললো ডাক্তারা রোগী দেখতে রোগীর বাসায় যায়, জানা ছিলো নাহ, আপনি মনে হচ্ছে অনেক ভালো মানুষ আর ভালো ডাক্তার।
আমি বললাম আরে মামা না আমি ডাক্তার নই, স্বাস্থ্যকর্মী, আমার আসলে কাজ হাসপাতালের বাইরে, রিক্সাওয়ালা বললো, ও আচ্ছা তাই তো বলি ডাক্তার কেন রোগীর বাসায় যাবে। তো রোগী কেমন দেখলেন।
আমি বললাম রোগীর অবস্থা বেশি ভালো নাহ, মহিলাটার এমনিতেই শরীরের অবস্থা ভালো নাহ আবার বারো বছর পর সন্তান পেটে আসছে, এমনিতেই মহিলাটা কিছুটা শারীরিক প্রতিবন্ধী তার উপর একা থাকে, মহিলার জামাই সারাদিন বাসায় বাইরে থাকেন, মহিলাটার যত্ন নেওয়ার মানুষ নাই। আসলে পুরুষ মানুষ গুলোই এমন নারীর মর্যাদা বুঝতে পারে নাহ।
✪ আরও পড়ুন: জান্নাতি পাপিয়া!
অনেকক্ষণ পথ চলার পর রিক্সাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম মামা সামনের কাঁচা বাজারে একটু থামাবেন। কাঁচা বাজার শেষে রিক্সাওয়ারাকে বললাম মামা তাড়াতাড়ি রিক্সা চালান অনেক দেরি হয়ে গেছে। রিক্সাওয়ালা আমার দিকে বাঁকা করে চেয়ে রইলো, একটু ভয়ই পেলাম। কারণ কাঁচা বাজার করতে কিছুক্ষণ সময় নষ্ট করছি তার, কিছু দুর আসার পর রিক্সাওয়ালার থেকে কিছুটা হালকা হওয়ার জন্য বললাম মামা আপনার কি এই শহরেই বাড়ি।
হঠাৎ রিক্সাওয়ালা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, নাহ ম্যাডাম আমি এক ভবঘুরে, ভাসতে ভাসতে এই শহরে এসেছি, আমি বললাম খুলে বলুন তো মামা, রিক্সাওয়ালা আবার বলতে লাগলো, বললাম নাহ আমি ভবঘুরে ভাসতে ভাসতে এই ক্কীন ব্রীজে এসে পরছিলাম, হঠাৎ এক বয়স্ক চাচা কে দেখলাম রিক্সা নিয়ে ক্কীন ব্রীজের উপর উঠতে পারছে না, আমি পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে তুলে দিলাম তখন থেকে পরিচয়, তিনি তার বাড়িতে আশ্রয় দিলেন তখন থেকে তার বাড়িতেই থাকি।
আচ্ছা খুব ভালো তো, আচ্ছা কতদিন হলো চাচার বাড়িতে থাকেন, রিক্সাওয়ালা বললো, তা তো তের চৌদ্দ বছর হবেই। তিনি কি বেঁচে আছে, রিক্সাওয়ালা বললো নাহ তিনি অনেক আগেই মারা গেছে আর তার রিক্সা আমাকে ছেলে মনে করে দিয়ে গেছে, সেই থেকে রিক্সা চালিয়ে দুটা ডালভাত খেয়ে বেঁচে আছি। ম্যাডাম আপনার স্টাফ কোয়ার্টারের গেটে এসে পরেছি নামুন।
তারপর সারারাত একটুও ঘুমাতে পারিনি, কি এক অজানা আতঙ্ক আমাকে তারিয়ে বেড়াচ্ছে, মনে হচ্ছে বুকের উপর একটা পাথর চেপে বসে আছে, এভাবে এক সপ্তাহে কেটে গেলো তারপর আবার সেই মহিলা শারীরিক প্রতিবন্ধী রোগীটার বাড়িতে রিপোর্ট করার জন্য গেলাম। গিয়ে দেখি মহিলা বেশ অসুস্থ, প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রোগীকে বললাম আপনার বাসায় লেবু আছে তিনি জানালেন তাদের বাড়িতে লেবু গাছ আছে।
আমি লেবু গাছ থেকে কিছু লেবু পাতা আর একটা লেবু ছিঁড়ে নিতেই পাশে একটা ফুলের গাছ দেখতে পেলাম, কাছে গিয়ে দেখি গাছটা ক্যামেলিয়া ফুলের গাছ। আমি খুব অবাক হলাম একদিকে ক্যামেলিয়া ফুলের গাছ অন্য দিকে ক্যামেলিয়ার একেবারেই আদি ফুলের জাত, এটা কি করে এলো, আমার জানা মতে ক্যামেলিয়া ফুল গাছের এই জাত কেবল জাপানের মত দেশেই পাওয়া সম্ভব। ভাবতেই পারছিনা এতদামি গাছ এখানে কি করে এলো, মাথা যেন আর কাজ করছে নাহ, হঠাৎ রোগীর চিৎকারে চেতনা ফিরে পেলাম, তারপর রোগীর শুশ্রূষা শেষে জানতে চাইলাম লেবু গাছের কাছে একটা ফুল গাছ দেখলাম সেটা কিসের গাছ আপা।
রোগী বললো কি যে যা-তা এক গাছ আমি তো জীবনেও এই দেশে এমন গাছ দেখি নাই, আর এই গাছে যে আমার মানুষটা কই থাইক্কাই আনছে জানি নাহ, কখনও গাছের নামও বলে নাই, জানেন সেটা গাছ তো নয় আস্ত আমার সতিন, বাড়িতে যতক্ষণ থাকে মানুষটা সারাক্ষণ এই গাছের কাছে বইসা থাকে, আর কত যত্ন নেয়, এই গাছের থাইক্কা যদি আমারে একশত ভাগের একভাগ যত্ন নিত আমার কি আর এই দশা হয় গো আপা।
আমি বললাম আপা আপনার জামাই কি আপনাকে ভালোবাসে নাহ, আপনি কি সুখী নাহ আপা। তখন রোগী মানে তার নাম রিমু আপা জ্বিহবাতে কামরায় দিয়ে বললো কি কন আপা, আমার মানুষ তো নয় সেতো একটা ফেরেস্তা।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম রিমু আপা একটু আগে বললেন আপনার জামাই আপনাকে একটুও যত্ন করে নাহ৷ এখন বলছেন সে না-কি ফেরেস্তা বিষয় টা কি বুঝিয়ে বলুন তো, রিমু আপা বলছে আরে আপা সেটা তো রাগের কথা বলছি, সেটা তো আমার মুখের কথা, তাহলে মনের কথা শুনেন, আমার মানুষ টা সাথে আমি কত ঝগড়া চিৎকার চেচামেচি আর কত খারাপ ব্যবহার করি কোনদিন মানুষ টা আমাকে একটা ধমকও দেয় নাই, তার মন খারাপ হলে সোজা এই গাছটার কাছে যায় কিছুক্ষণ বসে থাকে তারপরই আবার হাসিমুখে ফিরে এসে বলে রিমু মাথাটা কি ঠান্ডা হয়েছে বলেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, আমি কেঁদে ফেলি তারপর মানুষটা আমাকে বুকে আলতো করে জরিয়ে ধরে বলে রিমু তোমাকে আমি সুখ দিতে পারিনি তাই নাহ, তোমার বাবা তোমাকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বলছিলো বাবা আমার ইয়াতিম মেয়েকে কখনও কষ্ট দিয়ে নাহ, তাকে ভালো ভাবে দেখেশুনে রেখে, তোমরা সুখে থাকবে, রিমু তুমি এমন করলে তোমার বাবা কে কি জবাব দিবো বলো, আমি তখন তার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বলি মাফ করে দায় ভুল হওয়া গেছে, আমি অনেক দিন দেখেছি আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মানুষ টা চোখের পানি ছেড়ে দেয়, মানুষটা মনে করে আমি টের পাই নাহ, প্রথমে টের পাই নাই তারপর যখন তার চোখের পানি আমার পিঠের ওপরে ফোঁটা ফোঁটা পরতো তখন থেকে বুঝতে পারছি। এখন বলেন তো আপা আমার মানুষ টা সত্যি ফেরেস্তা না বলেন ফেরেস্তা নাহ, বলেন বলেন।
✪ আরও পড়ুন: মায়াজাল অতঃপর!
রিমু আপা যেন আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে জোর করে স্বীকার করিয়েই ছাড়বে। আমি বললাম আসলেই তো আপনার জামাই ফেরেস্তার মত মানুষ।
রিমু আপা বললো ফেরেস্তার মত মানুষ বলছেন কেন আসলেই ফেরেস্তা বলেন গো আপা। আমি বললাম আচ্ছা তাহলে সেই ফেরেস্তার সাথে ঝগড়া করেন কেন, রিমুনা আপা বলছে, কি করবো বলেন আপা আমার আবার রাগ বেশি, রাগ কন্ট্রোল করতে পারি নাহ, আর আল্লাহ কি নিলা খেলা আমার সাথে একটা মাটির মানুষ মিলিয়ে দিছে।
ডাক্তার আপা আপনে কিন্তু আজ খেয়ে যাবেন৷ না খেয়ে আপনাকে আজ যেতে দিবো নাহ। আমি বললাম আপনি তো অসুস্থ আমাকে আবার কি খাওয়াবেন, রিমু আপা বললো কি যে বলেন ডাক্তার আপা আমরা গরীব বলে কি আমরা না খেয়ে থাকি নাকি, আমরা যা খাই মেহমানদেরও তাই খেতে দেই, বাড়িতে খাবার রান্না করাই আছে, আমি অবাক হয়ে বললাম আপনি এই শরীর নিয়ে রান্না করেছেন, রিমু আপা বললো আরে নাহ আমার মানুষ টা সকালে রান্না করেই কাজে গেছে, আরে আপা জানেন নাহ
আমার মানুষটা খুব সুন্দর রান্না করে, একবার খেলে জীবনে ভুলতে পারবেন নাহ, সারাজীবন তো সেই রান্না করে, আমি শুধু তাকে রান্নায় সহোযোগিতা করি মাত্র, আমি বললাম তাহলে তো খেতেই হয়, কি বলেন।
রিমু আপা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বললো, জানেন ডাক্তার আপা আমি তো সারাবছর অসুস্থ থাকি আমার মানুষটা কোন দিন একটুও আমার অযত্ন আর অবহেলা করছে এই বারোবছরে একবারও মনে পরে নাহ, অনেক দিন দেখছি সারারাত জেগে থেকে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পারায়, মাঝে মধ্যে এই অদ্ভুত গাছ টার কাছে যায় ফিরে আসে একে বারে তরতাজা হয়ে, তাই গাছটাকে আমি সতীন মনে করি, অনেক দিন গোপনে গাছটা কেটে ফেলতে গেছি তারপর কেমন যেন গাছ টার কাছে গেলো খুব মায়া হয়, তাই আর গাছটা কাঁটি নাই, গোপনে আমিও গাছটার যত্ন নেই, একবার গাছটার পরিস্কার করে গাছের গোড়ায় পানি দিচ্ছিলাম তখন আমার মানুষটা পিছন থেকে বলে উঠলো বাহবা বাহ তুমি আবার সতীন (গাছের) এর যত্ন নাও রিমু, আমি বললাম বারে আমি কি এত খারাপ যে গাছের সাথে হিংসা করবো, তোমার পছন্দের জিনিস কি আমার পছন্দ জিনিস নাহ গো, তখন আমার মানুষটা আমাকে বুকে ঝাপটে ধরে শিশুর মত হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো, সেইদিন থেকে বুঝতে পারছি এই অদ্ভুত গাছটাকে আমার মানুষটার কত প্রিয় জিনিস, সেদিন থেকে আমারও মন খারাপ হলে গাছ টার কাছে যাই, মন তখনই কেমন
করে যেন ভালো হয়ে যায়, আপনার যখন মনে খারাপ হবে তখন এই অদ্ভুত গাছের কাছে আসবেন আপনারও মন ভালো হবে দিব্যি কেটে বলছি ডাক্তার আপা।
আমি বললাম আচ্ছা তাই নাকি, তো গাছটার নাম কি। রিমু আপা বললো সেই তো মানুষটা কে কতবার বলছি গাছের নাম কি বলে নাহ, খালি বলে এটা অচিন গাছ, তয় আমার বিশ্বাস হয় নাহ, এই অদ্ভুত গাছের সাথে মানুষটার কি একটা সম্পর্ক আছে মনে হয়, এই অদ্ভুত মানুষটা যে কোথায় থেকে আমাদের কাছে এসেছে আমার আব্বাও কইতে পারে নাই। আমি অনেক চেষ্টা করছি কয় নাই। বড়ই অদ্ভুত মানুষটা। বড়ই অদ্ভুত।
তয় মানুষটা কিন্তু মেলা শিখক্ষিত কত মোটামোটা বই পড়ে আবার কি কি লেখে দেখি আর কি কি যে করে, তয় যখন সে লেখে তখন তাকে ডিস্টার্ব করি নাহ, যেমন লেখার সময় তাকে ডিস্টার্ব করলে রেগে যায়, তাছাড়া মানুষটা জীবনের রাগে নাই আমার সাথে। আমিও তার কাছে সেসময় আর যাই নাহ। আমি বললাম তাই না-কি, তো সেই মোটামোটা বই কোথায় রিমু আপা, রিমু বললো এই যে পাশের রুমে, আমি সেই রুমে যেতে চাইতেই রিমু আপা বললো, খবরদার সে রুমে ভুলেও যাবেন নাহ, আমার মানুষটা জানলে আমাকে মেরেই ফেলবে, আমি বললাম রিমু আপা আপনি কি তাকে খুব ভয় পান, রিমু বললো না গো ডাক্তার আপা ভয় না, তাকে সন্মান করি তার কাজের জিনিস যত্ন করি ভালোবাসি আমাদের মধ্যে কোন ভয়ের সম্পর্ক জীবনেও ছিলো নাহ সব ত্যাগের সম্পর্ক যা আমাদের ভাঙা ঘরে চাঁদের আলোর মত সুন্দর আর সুন্দর সম্পর্ক বলতেই রিমু আপা খিলখিল করে এত সুন্দর হাসি দিলো এমন সুন্দর সুখের হাসি আমি জীবনের দেখি না-ই। তার হাসি দেখে যেন আমার কলিজা টাও ঠান্ডা হয়ে
গেলো। আমি রিমু আপাকে অনেক অনুরোধ করার পর তার প্রিয় ভালোবাসার মানুষটা বইয়ের ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিলো।
আমি বইঘরে ডোকার পর নিজের চোখ যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম নাহ, শহরের কোন ভালো মানের পাঠাগারও এমন সুন্দর পরিপাটি পরিবেশ তৈরি করা দেখিনি, দেশি-বিদেশি অনেক বই, তার মধ্যে কবি *মনকথা!* প্রায় সব বই একটা বুকসেলফে সাজানো, কবি মনকথা!* এর অনেকগুলো বই আমার কাছে আছে, সবই বইই জীবনের অংশের সত, একেবারে বাস্তবতায় ভরা, মনকথার এক-একটা বই অনেকবার পড়েছি যতবারই পড়েছি ততবারই নতুন মনে হয়, অসম্ভব সুন্দর আর বাস্তবতার মিসেল, যতটুকু জানি মনকথা কবি ছদ্মনাম ব্যবহার করেন, তার সত্যি কারের পরিচয় কেউ জানার নাহ।
বুকসেলফের মাঝে একটা ড্রাইরি, ড্রাইরিতে আবিষ্কার করলাম আমি দেশের বিখ্যাত আর জনপ্রিয় কবি *মনকথা!* বাড়িতে অবস্থান করছি। তারপর কবি মনকথা! এর ড্রাইরি টা রিমু আপা কে না বলে আমার ব্যাগে লুকিয়ে রাখলাম। আসার আগে রিমু আপা তার মানুষটা হাতের রান্না করা খাবার না খাইয়ে আসতে দিতে চাইলো নাহ, বাধ্য হয়ে, সামান্য খাওয়ার নিয়ত করে খেতে শুরু করলাম, খাবার মুখে দিতেই মনে হলো এমন অমৃত সুধা জীবনে প্রথম নয় কোন একদিন খেয়েছি মনে হয়। অতঃপর রিমু আপার বাড়িতে থেকে বিদায় নিয়ে বাসার দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।
✪ আরও পড়ুন: “বেলী” – কি পবিত্র মুখটা!
রাতে বিছানায় গিয়ে কবি মনকথা! এর ডায়েরি পড়তে শুধু করলাম, শুরুতেই কবি মনকথা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় আবৃত্তি উৎসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আয়নার সাথে প্রথম পরিচয় সম্পর্কে লিখেছেন, ঠিক যেভাবে।
কবি মনকথা! এর ডায়েরি থেকে- আজকের অনুষ্ঠানে আয়নার আবৃত্তি ছিলো অসাধারণ মনোমুগ্ধকর, অনুষ্ঠানের বিরতিতে আমি আয়নার সামনে গেলাম, বললাম আপনার স্বর্ণ কন্ঠের আবৃত্তি আমাকে অনেক মুগ্ধ করেছে কিন্তু আমার মনে হয় কবিতার ভেতরের আকুতি শুনে হৃদয়ঙ্গম করতে পারলে আপনার আবৃত্তি আরও সরল আর সাবলীল হবে আর আপনাকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়। কথা গুলো বলেই আস্তে সরে দাড়ালাম, কারণ আমার কথা গুলো শুনে আয়নার ভ্রু কুচকে গেলো, তারপর কাকতালীয় ভাবে সন্ধ্যার পর নাস্তার টেবিলে আমি আয়নার মুখোমুখি বসে আছি, আর আমার মানসপটে ভেসে এলো কল্পকাহিনির মধ্যে কথা-
#স্নিগ্ধ_প্রথম_পলক!
মায়াভরা ঐ মুখটা চোখে নয়
ভাসছে মনের অতল গভীরে,
সেই সময়টার অনুভূতি টুকু
যদি মানব মনে প্রকাশের সক্ষমতা থাকতো
তবে বুঝি নিজেকে অতি মানব মনে হতো,
একজন সাধারণ মানবের কি সাধ্য আছে অপ্সরীর অতুলনীয় রূপের প্রসংসা তো নয়ই!
একটুখানি রূপের বর্ণনা দেয়া,
তাকে যখন শুধুই এক পলক দেখতে পেলাম আমার চামড়ার চোখে,
মনে হলে আকাশে নয় আমার চোখের যেটুকু যায়গা আছে,
সেই সবটুকু যায়গা জুরে একটা বিদ্যুৎ চমকালো,
আমার চোখটা ঝলসে গেলো,
সত্যি বুঝি আমার চোখ ঝাপসা হয়ে চোখে সানি পরে গেলো,
এবার বুঝি মনের অনুভূতি টাও ঝলসে যাবে,
কারণ তাকে তো সেই এক মুহূর্তই দেখেছি ন্যানো সেকেন্ড বোধহয়,
ঠিক বলা হয় না, কতটুকু সময়।
এখন মনে আয়নায় যতবার দেখার চেষ্টা করছি
ততবারই আয়নাটা ফাটল ধরছে,
একটু সময় নিলেই আয়নাটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে!
তাই মনে আয়নায় দেখার চেষ্টা টুকুও বৃথায় যাবে বুঝি,
সেই ভয়টাই মনের ভেতর উঁকিঝুঁকি মারছে।
সেটা না হয় বাদ দিলাম,
আবার একটু অনুভব করার চেষ্টা করছি
তাতেও ভয়টা আরো জেঁকে বসেছে,
সেই অপ্সরীর রূপের আগুনের তাজাল্লীতে
যদি আমার অনুভূতি টুকু হারিয়ে হই বেহুশ!
তখন কি হবে আমার, সে দায় কে নেবে?
হে খোদা দয়াময়! আমায় মাফ করো
আমার স্বইচ্ছায় সেরূপ আমি দেখিনি!
এক অদৃশ্য শক্তির সম্মোহনী ছায়া আমার উপরে ভর করলো!
আর তাতে আমি অপ্সরীর রূপের আগুন দেখতে পেলাম!
হে খোদা আমায় কৃপা করো, মার্জনা করো মোরে!
ঐ রূপের জৌলুশ আর তাজাল্লী আমার মানব চোখের দেখার
আর হৃদয়ে ধারণ করার শক্তি তো তুমি আমায় দাওনি খোদা!
আমি যে তুচ্ছ নগন্য ক্ষুদ্র মানব!
আমি চাইনা তাকে আর দেখতে,
অনুভব করতে,
না না নাহ আর ভাবতে পারছি না।
জ্বলে গেলাম পুড়ে গেলাম,
আমায় রেহাই দাও খোদা দয়াময়।,,,,,৷,
ভাবছি আয়না আমার কথা গুলো ঠিক ভাবে নিয়েছে জানা প্রয়োজন, দেখলাম আয়নার অসম্ভব সুন্দর মায়াবী চোখ আমাকে খুঁজে নিচ্ছে, কখনও রাগ আবার কখনও কৌতুহলী চোখ, মুখে কথা নেই কিন্তু তার সুন্দর চোখের ভাষায় আমাকে হাজারটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে, তুমি কে হে, মযে আমার কবিতা আবৃত্তির সমালোচনা করো কবিতার কি জানো তুমি! আমি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় আবৃত্তি শিল্পী, আজ আমাকে আবৃত্তি শেখাতে এসেছো! আমি তার প্রশ্নের জবাব দেবার মুরদ তো রাখি নাহ, আমি একজন সাধারণ কবিতা প্রেমী মাত্র, মনের আনন্দে দু’চার লাইন কবিতা আর গল্প লিখি তবে তা গল্প কবিতার মান কতটা ঠিক থাকে জানি নাহ তবে আমার যে তেমন কোন পাঠক নাই তা ভালো করেই জানি।
যাহোক, নাস্তার টেবিলে সবাই উঠে গেছে এখন আমি আরও আয়না মুখোমুখি, কেউ কোন কথা বলছি না, আমি কোন উপায় না দেখে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়াতেই হাঁটুতে প্রচন্দ্র গুতা খেলাম, ব্যথায় চিৎকার করতে পারছি না দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছি আর মুখটা কি পরিমান বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে কে জানে। হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে আয়না সামনে এসে বললো, আহহা খুব লেগেছে না আপনার, একটু দেখে চলবেন নাহ, এত অসতর্ক কেন আপনি, ধৈর্য ধরে একটু অপেক্ষা করুন আমি আইসের ব্যবস্থা করছি।
কিছুক্ষণ পর ঠিকই আয়না আইস নিয়ে এসো বললো, এটা ধরুন ব্যথার উপশম হবে ঠিক যেখানে ব্যথা পেয়েছেন ঠিক সেখানেই লাগাবেন, পরিমাণে খুব কম আর পাওয়ার যাবে নাহ, আমি ফ্যালফ্যাল করে আয়নার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, আয়না বুঝতে পেরে বললো, আচ্ছা আপনি চেয়ারটায় বসুন, কোথায় ব্যথা পেয়েছেন বলুন আমি আইস লাগিয়ে দিচ্ছি, আমি ইশারা করলাম হাঁটুর নিচে গোড়ালিতে, তো আমি চেয়ারে বসে পরলাম, আয়না পরম যত্নে আমার পায়ে আইস বেধে দিলো।
তারপর বললো এখন কি ব্যধা কমছে, আচ্ছা আমরা কি এবার পরিচিত হতে পারি, আমি মাথা নেড়ে সস্মতি দিলাম।
এখন বলুন তো শুনি আপনি কে কি করেন, বললাম আমি সরল, আয়না বলছে আপনি সরল তা তো বুঝতেই পারছি, আমি আপনার নাম জানতে চাইছি যেটা আপনার মা-বাবা দিয়েছে, এবার বললাম মা ডাকে ময়না বলে আর সবাই সরল বলেই জানে, আয়না অবাক হয়ে বললো তাই না-কি, বুঝলাম এমনিতেই আপনি কি করেন, বললাম এতটা ছোট্ট কোম্পানিতে কাজ করি তাতে দু’বেলা দুমুঠো ভাত জোটে আর কি!
আয়না বললো, বেশ ভালো তো এখানে কেন এসেছেন বললাম আসলে কবিতা আমার অনেক পছন্দের তাই কবিতা আবৃত্তি শুনতে এসেছিলাম, আচ্ছা আপনার কবিতা আবৃত্তির সমালোচনা করেছি তাতে আপনি কি রাগ করেছেন। আয়না বললো নাহ তো, তবে অবাক হয়েছি আপনার মত করে কেউ এভাবে কেউ বলেনি, সবাই ভুল টুটি না জেনে শুধুই প্রসংশা করে, সেটা আমার ভালো লাগে নাহ, আমি চাই কেউ আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিক তাতে সংশোধন করে আগামীতে আরও ভালো কিছু দর্শককে উপহার দিতে চাই।
যাইহোক আমার নাম আয়না, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি কবিতা আবৃত্তি করি নিজের ভালো লাগা থেকে। তারপর আয়নার সাথে কবিতা নিয়ে অনেক কথা হলো, আর আমি যে টুকটাক কবিতা লিখি আয়না জানতে পেরে বললো, খুব ভালো আমি তো নতুন কবিতা আবৃত্তি করতে অনেক পছন্দ করি, আপনি এক কাজ করবেন আগামী সোমবার বিকেলে আপনার কবিতা নিয়ে টিএসসি তে আসবেন সেদিন অনেক কথা হবে, আজ আর নয়, সিনিয়রা ডাকছে, ভালো থাকবেন। আয়না যখন চলে যাচ্ছিলো তখন তার চলে যাওয়া আমাকে এক অদ্ভুত আকর্ষণে পেছন থেকে টানছিলো, আহহা কি অদ্ভুত অনুভূতি!
✪ আরও পড়ুন: নাকফুল-অতঃপর! ১ম পর্ব!
সোমবার বিকালে আমি টিএসসি তে গেলাম কিছুক্ষন পর আয়নার সাথে দেখা হলো কুশল বিনিময় হবার পর আয়না বললো আসুন চা খাই, আমরা চা খেতে খেতে অনেক আলাপ হলো গল্প কবিতা নিয়ে তারপর আমার কবিতা গুলো আয়না কে দিলাম, আয়না কবিতার খাতা নিয়ে বললো আজ আর নয় এবার আসি, আমার রিহার্সালের সময় হয়ে গেছে। আয়নার চলে যাওয়া উপভোগ করলাম তবে আমার ধারণা ছিল আয়না আমার কবিতা পড়ে অনেক প্রসংশা করবে কিন্তু সে তোপড়া দূরের কথা কিছুই নাহ বলে চলে যাওয়া মতে অনেকটা হতাশ হয়েছিলাম। তারপর এক মাস কেটে গেলো আয়নার কোন খোঁজ পেলাম নাহ, তার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আবার একদিন বসন্তের অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বকুলতলায় ডোকার সময় কানে ভেসে এলো, –
কথা ছিলো দুজনে মিলে পথ চলব,
হাতে হাত রেখে, পায়ে পা মিলিয়ে চলব,
আমার পায়ে থাকবে কালো চোটি,
তোমার মাঝারি হিল জুতো,
আমার সাদা পাজামা আর কালো পাঞ্জাবি,
তোমার আকাশী নীল শাড়ী,
তুমি খোঁপায় কিছু রাখবে না,
একেবারে খালি খোঁপায় আসবে, কথা ছিল।
যখন হাঁটতে থাকব তখন রাস্তার পাশ থেকে নাম না জানা
বুনো ফুল কুড়িয়ে তোমার খোঁপায় পরাবো সরল মনের ব্যকুলতায়,
তখন তোমার লিপস্টিক ছারা একেবারে সাদাসিধে ঠোঁটের কোণে
ফুটে উঠবে জগতের সকল সুখে মাখানো নির্মল হাসি,
যে হাসিটা আমার মন জুড়ে প্রশান্তির ছোয়ায় দোল খাবে,
পুলকিত হবে হৃদয়ের জমে থাকা আনন্দের কোলাহল,
হাঁটতে হাঁটতে যখন আমার হাতের আঙুলটা
তোমার আঙুলের স্পর্শ দেবে,
নিজের অজান্তেই তোমার চোখ প্রাণে
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে তোমার চোখের নীলাকাশে
নিজেকে হাড়িয়ে ফেলবো অজান্তে, অবহেলায়,
তুমি চিমটি কেটে বলে উঠবে,
কি গো কোথায় হারালে,
পথে কি কোন অপরুপাকে দেখে
তার প্রতিই তুমি সব মনযোগ দিয়ে দিলে বুঝি,
বলেই অভিমানে মুখটা গোমরা করে উল্ঠো পিঠে হাটা দিবে,
হঠাৎ তখন আমার মন জাগ্রত হবে,
দেখবো আমাকে ফেলে অনেকটা পথ
এগিয়ে গেছো বড্ড অভিমানে,
আমি কিছুটা দৌড়ে তোমার নাগাল পাবো,
ঠিক পিছন থেকে তোমাকে আলতো করে বুকে জড়িয়ে বলব,
হাতের কাছে এক অপ্সরী থাকতে কি আর
কোন কাকরাণীর দিকে মনোযোগী হব বল,
তুমি আরো বেশি অভিমানে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইবে,
বিষমাত্রায় অভিমান জমিয়ে বলবে,
কে আমি, কি তোমার তাতে এসে যায়,
আমি শক্ত করে তোমায় জড়িয়ে বলব,
তুমি যে আমার মনে মণিকোঠায় জীবন্ত এক অপ্সরী,
হয়তো তোমার নিজের অজান্তেই
অশ্রুকণা বেয়ে চলবে কপোলে তোমার।
ঠিক তখন পরম মমতায় দুহাতে তোমার অশ্রুকণা মুছে দেব,
তুমি অবলিলায় বাধ্যানুগত প্রেমিকার মত
নতশিরে মাথা নুয়াবে আমার ছোট্ট বুকটায়,
তখন আবারো আলতো করে বুকে চেপে
অজান্তে আমার দুচোখের কোণ বেয়ে পরবে অশ্রুকণা,
আমি তোমায় লুকিয়ে ফেলব
তোমার মেঘকালো চুলের তলায় আমার অশ্রুকণা,
আর তোমার চুলে হাত বুলানোর ভান করে মুছে নেব,
আমার অশ্রুকণা,
তারপর এক হাত তোমার পিটে
অন্য হাতে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেব,
আর কপালে এঁকে দিব আদরের শেষ চুম্বন,
তুমি আমার বুকের মাঝ থেকে বলে উঠবে
কেন এত ভালোবাসো আমায়,
আমার নিরবতা যেন ভাংঙবে না,
তখন আবার বলে চলবে এমনটি করে
জন্ম জন্মান্তরে জন্মান্ধ হয়ে ভালোবেসে
বুকে আগলে রেখো আমায়,
আমি চোখ মেলে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে বলব
তোকে বড্ড ভালোবাসি রে পাগলী।
অতপর শেষটা,
তোর আমার পথ আজ দুই দিকে চলে গেছে,
জানি না আজ তুই কোথায়,
কেমন আছিস,
হয়তো, কেউ তোকে আমার চেয়ে হাজারো বেশি আপন করে
আগলে রেখেছে বড্ড আদর মাখা ভালোবাসায়।
তাইতো একটাবারও ভুল করে তোর ফোন কল আসে না
আমার কাছে এই করোনা বেলায়,
আমার সাঁঝের বেলায়।
তুই পারিস রে পাগলী,
সত্যিই তুই পারছিস রে?
হয়তো বেশ আছিস রে পাগলী,
অতপর এটাই আমার শান্তনা রয়ে যায়,
শুধুই শান্তনা।,,,,,৷,
আমি নিজের চোখকে আর কান কে বিশ্বাস করাতে পারছিলাম নাহ, আরে এটা তো আমার কবিতা *অতঃপর শেষটা* আবৃত্তি শেষ হতে না হতেই করতালিতে মুখর হয়ে হেলো পুরো বকুল তলা। আনন্দে আর গর্বে বুকটা ভরে গেলো, মনে হলো এই মুহূর্তে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। পরক্ষণেই মনটা বিষাদে ভরে গেল কারণ আমার কবিতাটা সংগ্রহীত কবিতা বলে ঘোষণা করা হলো। আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি সেখানেই ঠিক কতক্ষণ জানি নাহ তবে পা দুটা যে পাথর হয়ে গেছে তা টের পাচ্ছি।
হঠাৎ কেউ একজনের ধাক্কায় চেতনা ফিরে পেলাম, বলছে আরে আপনি সেই লোকটা নাহ আপনাকে তো অনেক খুঁজেছি কোথায় ছিলেন আপনি, ও হাঁ কি যেন নাম আপনার, শুধু বলতে পারলাম সরল। হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পরছে, আপনি সরল। আসুন আমার সাথে আসুন। বলেই আমাকে টেনে নিয়ে সোজা কবিতার মঞ্চে নিয়ে গিয়ে ঘোষণা করা হলো এভাবে, আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি যে দুটা কবিতার আগে যে কবিতা মানে – কথা ছিলো দুজনে মিলে পথ চলবো, এই কবিতা টার নাম ও কবির নাম আমরা সংগ্রহীত বলে ঘোষণা করেছিলাম, আমাদের সৌভাগ্যের বিষয় এই কবিতার লেখক কে আমরা খুঁজে
পেয়েছি, কারণ এই কবিতার নাম আর কবি-র নাম উল্লেখ ছিলো নাহ, কিন্তু এখন আমরা সেই কবি কে খুঁজে পেয়েছি আমি কাকতালিয় ভাবে সেই কবির পাশে দাঁড়িয়ে আছি, আমি কবিকে অনুরোধ করবো তার নাম আর তার কবিতার নাম তার নিজের মুখে প্রকাশ করুক।
✪ আরও পড়ুন: নাকফুল-অতঃপর! ২য় পর্ব!
সঙ্গে সঙ্গে বকুল তলা করতালিতে মুখরিত হলো, আমি আনন্দে সব দুঃখ ভুলে গেলাম। তারপর আমার পরিচয় দিতে বললাম,
আমি খুব সহজ মানুষ, তাই আমি সরল, মা ডাকে ময়না বলে, লোকে বলে সরল। হ্যাঁ আপনাদের সরল বলেই মনে ঠাঁই নিতে চাই,
নাম আমার আসলেই সরল। আর কবিতার নাম *অতঃপর শেষটা* অতঃপর বকুলতলার চারদিকে করতালি তে মুখরিত হতেই থাকলো, অনুষ্ঠানের শেষে অনেকেই পরিচিত হতে আসলো, সব শেষে আসলো আয়না, আমি আপনাকে সরাসরি বললাম আজকের আবৃত্তিটা সত্যি অসাধারণ মনোমুগ্ধকর শুভকামনা আয়না আপনি অনেক বড় হবেন, অনেক ডাকনাম হবে আপনার।
আয়না মনটা ভার করে বলো দেখুন সরল আমি আসলে আপনার নাম ভুলে গিয়েছিলাম আর আপনার কবিতার খাতায় আপনার কোন নাম লেখা ছিলো না, তাই ক্ষমা চেয়ে আপনাকে আর ছোট করবো নাহ। আমি বললাম আরে এতে আমি কিছু মনে করছি না, আরে আজ আপনার জন্যই তো এতো সম্মান পেলাম।
আয়না বললো সরল আমাকে পাপ মোচন করার একটা সুযোগ দিবেন, মানে একটা অনুরোধ, আমি আয়নার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললাম আপনি একদিন একান্ত সময় চান এই তো, আয়না মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো, বললাম কথা দিলাম তো, আয়না যেভাবে চান সেভাবেই পাবেন আমাকে, আমিও আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আয়না জানতে চাইলো আগামী শুক্রবার আমি সময় দিবে পারবো কিনা। আমি সম্মতি দিলাম।
যথারীতি আমরা ঢাকার অদূরে একটা নদীর ধারে আয়নার সাথে হাঁটছিলাম, হঠাৎ একটা পরিত্যক্ত নৌকা দেখতে পেরে আয়না বায়না ধরলো নৌকায় চড়বে, আমরা নৌকায় ভাসতে লাগলাম, আয়না বায়না ধরলো আমার কবিতা আবৃত্তি শুনবে আমি বললাম, আমি বললাম আমি তো আবৃত্তি করতে পারি নাহ, এটা তো আপনার কাজ, আয়না তো নাছোরবান্দা, কোন উপায় না পেয়ে শুরু করলাম সাহস করে। কবিতা- তোমায় দিলাম পৃথিবীর!
গোধূলি বেলায় প্রকৃতি যখন পশ্চিমাকাশে
সূর্যের লাল টিপ পড়িয়ে দেয়,
তখন গোধূলি লগ্নে তৈরি হয়
প্রকৃতির এক অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি।
তেমনি করে প্রিয় তোমার কপোলের ঐ লাল টিপে
অতৃপ্ত আত্মার পরিশুদ্ধ সৌন্দর্যের মায়াময়ে গড়ে তুলেছে এক অপ্সরী।
আজ গোধূলির স্পর্শে তুমি অপ্সরী!
আজ- তোমায় দিলাম পৃথিবী!
সারাজীবনের না বলা জমানো সব কথা গুলো
তোমাকে বললে তুমি কি শুনবে?
ঘুচাবে আমার অপেক্ষার প্রহর?
যে প্রহর কাটেনি অবেলায়!
যে দৃষ্টির সীমানায় কেউ এসে দাঁড়ায়নি
হাত বাড়িয়ে গোধূলি বেলায়।
গোধূলি বেলায় পাশে বসে বলবে!
তোমার বাঁম কাঁধে একটু মাখা রেখে সূর্যাস্ত দেখি।
কত বার গোলাপ ছিঁড়তে গিয়ে ফিরে এসেছি,
পেছনে কেউ অপেক্ষায় ছিলো না বলে গোলাপের।
তোমার কালোক্রেশ কি খোঁপা করে এগিয়ে দিবে গুঁজে নিতে গোলাপ।
নূপুরের ঝুমুঝুমু নৃত্য বুকের ভেতর কাঁপন তোলে বলে!
কতকাল ধরে বুক পকেটে নূপুর ভরে ঘুরে বেড়াই আমি ভবঘুরে।
দেবে কী তোমার নগ্ন পা তুলে আমার হাঁটুতে,
আমি তোমার নগ্ন পায়ে আলপনা এঁকে নূপুর পড়িয়ে দেবো,
অতঃপর নূপুরের ঝুমুঝুমু নৃত্য মন মাতাবে,
কুহুতানে আমি মশগুল।
কতশত বার চিঠি লিখেছি মনের অজান্তেই,
লিখে নৌকা বানিয়ে ভাসিয়েছি নদীতে কেউ পড়েনি তাই।
তোমার জন্য একটা চিঠি লিখতে চাই!
হ্যাঁ একটা চিঠি লিখবো,
পড়ে বলবে তো আমার অপ্রকাশিত আবেগ কেমন!
জানো,
সেই ছোট্ট বেলায় মেলা থেকে বরকণের জোড়া পুতুল কিনেছিলাম,
এখনও রেখেছি বেশ যত্নে,
তোমার সোক্রেসে কি একটু জায়গা হবে।
নাকি তোমার মনের এক কোণে স্থায়ী আবাস দেবে,
যেথায় আমার সারাজীবনের না বলা জমানো
সব গুলো কথা রাখতেই থাকবো,
রাখতেই থাকবো!
প্রিয় ক্যামেলিয়া, কী দিব তোমায়,
আমার যা ছিলো সব নিঙড়ায় দিলাম,
নেবে তো, নাকি ফিরাবে আমায়।
পারবে তো ক্যামেলিয়া!
কবিতা- তোমার সম্মোহনীতে শান্তিমগ্ন।
তুমি যখন আমার সামনে আসো,
একেবারে চোখের পাতায়,
ঠিক নিঃশ্বাসের কাছে,
আমি তখন তোমার খুশবু নেই,
তোমার ঘ্রাণ নেই,
সুরভিত হই তোমার সৌরভে,
তোমার নাকের খুব কাছে নাক মিশিয়ে নিঃশ্বাস ছুঁয়ে নেই,
তোমার ওষ্ঠদ্বয়ে আমার ওষ্ঠ স্পর্শ করে অমৃত সুধা পান করি,
তোমার চোখে,চোখ রেখে হাড়িয়ে যাই অসীম আকাশে,
যেন নীল আকাশ ছুঁই,
পাখির মত ডানা মেলে মুক্তির পরমানন্দে,
আমার পৃথিবীতে তুমি কেবলই একটি আকাশ,
যে আকাশে মেঘের ভেলায় দুলতে দুলতে
অনুভব করি প্রথম প্রেমের বাঁধ ভাঙা উল্লাস,
তোমার চোখেই বুনি হাজারো স্বপ্নজাল,
নিজের চোখে পড়িয়ে দেই রঙিন প্রচ্ছেদ,
রঙিন আলোর চশমা।
যেদিকে তাকাই সবই যেন রঙিন
স্বপ্নে বোনা রঙের পৃথিবী,
যেখানে কেবল মাত্র বিচরণ তোমার আমাতেই।
তোমার কপালে কপাল ঠুকে ডাকি খোদার নাম
তোমার তরে সৃষ্টি আমার, ধন্য ধরাধাম।
তোমার মেঘকালো চুলে,
ঝাপটা মেরে মাতালের তালে মাতাও।
কালোক্রেশী সখি সংগোপন মুগ্ধতায়,
কেন মন জড়াও।
তোমার মুক্ত মনের প্রাণ খোলা হাসি কপোলে খায় টোল,
আমার উদাসী মনের অস্থিরতায় স্পর্শ করতে চায় কপোলের ঐ টোল।
ভিষণ আবেগে বাহুডোরে জড়িয়ে
বক্ষে ধারণ করি,
আগলে রাখি পরম যত্নে ময়না পাখি ডাকি।
একেবারে ঠিক ভেতর থেকে হৃদয় লেপন করে
আত্মার সাথে আত্মা মিশিয়ে এক পাত্রে রাখি।
এক আত্মার আত্মীয় তুমি তাই ভেবে বক্ষে ধারণ করি।
এমন করেই জড়িয়েছো তুমি করেছো সম্মোহন,
তোমার সম্মোহনী মায়ার জালে আমাকে হাড়িয়ে খুঁজি।
সম্মোহনী শক্তি তোমার বড়ই শান্তিময়।
তাই তোমাতেই আমি থাকি শান্তিমগ্ন।
তোমার সম্মোহনী শক্তি আমি শান্তিমগ্ন!,,,,,,
অপ্সরী আমি তোমার নাম দিলাম ক্যামেলিয়া, তুমি কি জানো ক্যামেলিয়া কিসের নাম, বলছি তোমায়, প্রিয় ক্যামেলিয়া একটা ফুলের নাম, সুদুর জাপান আর কোরিয়া তাঁর আদি বাস, সে বড় দামি ফুল গো সখী দুনিয়া জোড়া তার খ্যাতি, তুমি প্রিয় আমার প্রাণের সখী, আমার জীবনের চেয়ে দামি, তাই তোমার নাম ক্যামেলিয়া দিলেই বেশি মানায়, আমি গরীব তবুও দেখে কোন একদিন ঠিকই সুদুর সূর্যাস্তের দেশ জাপান থেকে তোমার জন্য ক্যামেলিয়া ফুল এনে তোমার খোঁপায় গুঁজে দিব আমার ভালোবাসার সৃতি চিহ্ন, কথা দিলাম তো সত্যি ক্যামেলিয়া।
হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আয়না আমার বাম কাঁধে মাথা রেখে, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে অজান্তেই বলে উঠলো, সত্যি আমার জন্য সুদুর জাপান থেকে ক্যামেলিয়া ফুল এনে আমার খোঁপায় গুঁজে দিবে সরল কথা দাও!
আমি আয়না কে আলতো করে বুকের মাঝে চেপে ধরে বললাম হ্যাঁ ক্যামেলিয়া সত্যি বলছি এরপর আমি তোমার জন্য জাপান থেকে ক্যামেলিয়া ফুল নিয়ে এসে তোমার খোঁপায় গুঁজে দিব তার আগে আর তোমার সাথে কক্ষনো দেখা করবো নাহ, কথা দিলাম।
এরপর প্রায় একবছর কেটে গেলো আমার ক্যামেলিয়ার সাথে দেখা হলো নাহ, তবে খোঁজ খবর পেয়েছি ক্যামেলিয়া আমার কবিতা গুলো সবচেয়ে বেশি আবৃত্তি করে অনেক জনপ্রিয় হয়ে গেছে, দেশের মানুষ তাকে এক নামে চিনে।
এদিকে আমি সামান্য একটা চাকরি করি প্রায় ছয মাস কেটে গেলো জাপান যাওয়ার টাকা সংগ্রহ করতে, তারপর পাসপোর্ট ভিসা নিতে, সব মিলে একবছর পরে আমি জাপান গেলাম আর তাতে আমার সাথে কলেজে লেখাপড়া করা এক বন্ধুর অনেক বড় সহোযোগিতা ছিলো, জাপানের ক্যামেলিয়া ফুলের দুটা গাছ সংগ্রহ করতে তেমন বেগ পেতে হলো না, বন্ধুর বাসায় থেকে জাপান দেশের সূর্যাস্ত নিজের চোখে দেখে নয়ন জুড়াইলাম, আর আল্লাহর সৃষ্টি অপার সৌন্দর্য দেখে শুকরিয়া আদায় করলাম। তারপর ক্যামেলিয়া ফুলের দুটা গাছ আর কিছু ফুল প্রক্রিয়াজাত করে দেশে এসে পৌঁছাতে পেরে আল্লাহর রহমতে শুকরিয়া আদায় করলাম।
ঢাকায় এসে পরের দিন আমার ক্যামেলিয়া মানে আয়নার খোঁজ করতে লাগলাম, তিন দিন পর এক বন্ধুর মাধ্যমে ক্যামেলিয়ার (আয়না) বাসার ঠিকানা হাতে পেলাম। বাসায় এসে ক্যামেলিয়া ফুল গুলো নিয়ে আয়নার বাসায় কাছে পৌঁছাতে পেরে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম, একটা বছর আমার আয়না কে দেখি না, নিঃশ্চয়ই ক্যামেলিয়া ফুল পেলে আয়না অনেক খুশি হবে, তার চেয়ে বড় কথা আমি আয়নাকে দেওয়া কথা রেখেছি।
আয়নাদের বাসার গেটে পৌঁছে আমি থঁ হয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম আয়নাদের বাসার ভিতরটা আলোয় ঝলমল করছে, আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই কে যেন ঘাঁরে হাত রেখে বলছে আরে বন্ধু তুমি এতক্ষণে এলে, তোমাকে আমরা কুপির বাত্তি লাগিয়ে খুঁজেছি, চলো ভেতরে চলো, আমি বললাম বন্ধু ভিতরে কি হচ্ছে, বন্ধু আজ আয়নার বিয়ে বিদেশি পাত্রের সাথে আর কালই তো সে বিদেশে চলে যাবে স্বামীর সাথে, বললাম বন্ধু আমার অনেক তাড়া আছে আমার হয়ে এই সামান্য উপহার আয়নাকে দিতে পারবে, তারপর
ক্যামেলিয়া ফুল গুলো ধরিয়ে দিলাম বন্ধু হাতে।
“ডিজিটাল বাংলা নিউজ” অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
আমি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি আয়নাদের বাসার গেটের পাশে কিছুক্ষণ পর একটা ফুলে ফুলে সাজানো বিয়ের গাড়ি বেড় হয়ে এলো আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম আয়নার মলিন মুখ! কবি মনকথা! এর ডায়েরি পড়া শেষ হলো!
আমি ডায়েরি পড়া শেষে ডায়েরি টা বুকের সাথে চেপে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম, আল্লাহ কেন এমন হলো আমার জীবনটা, কেন আবার আমার সরলের সামনে আমাকে হাজির করলে কেন! সরল তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারো৷ নাহ।
ভোরের নিস্তব্ধতা বিদীর্ণ করে আমি পাগলের মত সরলের বাড়িতে ছুটে গেলাম, গিয়ে জানতে পারলাম, সরলের স্ত্রী অনেক অসুস্থ তাই তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে সরল!
আমি হাসপাতালে গাইনী বিভাগে গিয়ে দেখি সরল তার স্ত্রী পাশে বসে আছে তার কোলে ফুটফুটে সুন্দর শিশু, সরল আর তার স্ত্রী রিমু আপা, দুজনেই খুব হাসি খুশিতে আছে,
তারপর সরল তার স্ত্রী কে জিজ্ঞেস করছে রিমু দেখো দেখো তোমার মেয়ে ঠিক তোমার মতো নাক চোট মুখ খুব মায়াবী দেখো রিমু দেখো, এবার রিমু বলছে, দেখো তুমি মানুষ কত বোকা কবে কোন ডাক্তার বলেছিলো বাচ্চা হলে আমাকে বাঁচানো যাবে নাহ তাই তুমি বারো বছর আমাকে মা হতে দাও নাই,
শুধু বলেছো আমার সন্তান দরকার নাই, আমার রিমু পাগলীটাকে সারাজীবনের জন্য পাশে চাই, অথচ আজ দেখে সব মিথ্যা হলো, আমি দিব্যি সুস্থ আছি দেখো। আচ্ছা আমার পাগল মানুষটা কে একটা অনুরোধ করবো, রাখবে বলো, সরল বললো জীবনে কি একটা কথা তোমার রাখি নাই রিমু বলো, তখন রিমু সোজা বলে দিলো তোমার এই অচিন গাছের নামে আমাদের মেয়ের নাম রাখতে চাই, সরল বললো, আচ্ছা রিমু আমাদের বাড়ির গাছের নামে তোমার মেয়ের নাম রাখতে চাও কেন, রিমু বললো আমার মানুষটা এই গাছটাকে যে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসে তাই আমি চাই তুমি তোমার অচিন গাছের নামে আমাদের মেয়ের নাম রাখো, যেন আমাদের মেয়েকে অচিন গাছের মত যত্ন নাও।
সরল বললো আচ্ছা রিমু শুধু এই অচিন গাছেরই যত্ন নেই আর তোমার, বলতেই রিমু তার হাত দিয়ে সরলের মুখ চেপে বললো ওগো আমি তো তোমার নিঃশ্বাস আর এই গাছটা তোমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। তখন সরল হাসিমুখে তার কোলের সন্তানের দিকে তাকিয়ে বললো, তাহলে আমাদের মেয়ের নাম হচ্ছে ক্যামেলিয়া।
তারপর রিমু আপা চোখে চোখ পড়তেই, আমাকে বলছে আরে ডাক্তার আপা আপনে কখন আসলেন, দরজায় দাঁড়িয়ে কেন ভেতরে আসুন, দেখুন আমাদের মেয়েটা কত সুন্দর দেখতে ঠিক ওর বাবার মত, আমি কাছে গিয়ে বাচ্চাটা কে কোলে তুলে নিলাম সত্যিই খুব সুন্দর দেখতে।
তারপর দায়িত্বরত ডাক্তার আমাকে বললো আয়না তুমি এখানে, বললাম এই রোগী আমার আত্মীয় আর আমি যেহেতু স্বাস্থ্য কর্মী তাই এই রোগীর রিপোর্টিং আমার দায়িত্বেই ছিলো স্যার, ডাক্তার বললেন তাহলে তো বেশ ভালো তুমি কিছু ঔষধ নিজে ফার্মেসী থেকে নিয়ে এসো রোগীর স্বামী পারবে না সে তো রিক্সাওয়ালা।
আমি বেড় হতেই সরল আমার সাথে এলো নিরবে, তারপর হাসপাতালের গেটে এসে সরল তার রিক্সা নিলো আমি সরলের রিক্সা কিছু দুর আসার পর বললাম, সরল সামনের ছোট পার্কের সামনে দাড়াবে, তোমার সাথে কিছু কথা আছে, তারপর সরলকে নিয়ে পাশের পার্কে দাঁড়ালাম, আমি বললাম সরল এখন কেমন আছো সরল অবাক হয়ে বললো ডাক্তার আপা আমি আপনাকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আপনি আমার বউয়ের জন্য অনেক করেছেন, কিন্তু আপনি আমার নাম সরল জানলেন কি করে, আমি কোন রাগডাক না করে সরল এর ডায়েরি টা সরলের হাতে দিয়ে বললাম এখান থেকে চিনি সরল বললো আপনি এটা পেলেন কোথা থেকে, তোমার বাড়ির রিডিংরুম থেকে, দেখ সরল মানছি তুমি জীবনের প্রয়োজনে রিক্সা চালাও, মাথায় তো একটা চুলও নেই, সেই থেকে রোগা শরীর আবার উসকোখুসকো দাড়িগোঁফে পাক ধরেছে, তুমি নিজেকে বদলে ফেললে কি মনে করো কেউ তোমাকে চিনতে পারবে নাহ সরল, সরল বললো আমি মনে হয় আপনাকে এক দিন ক্কীন ব্রীজের উপর থেকে আপনার বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলাম, তারপর আপনিই যে আমার বউ কে এতো সাহায্য করেছেন আপনাকে না দেখলে জানবো কি করে বলুন, আমি বললাম যেদিন তোমার রিক্সায় উঠেছিলাম সেদিনই আমার মনে খটকা লেখেছিলো৷
এবার সরল বললো তাহলে আপনাকে কে কি আমি আগে থেকে চিনি, বললাম যার নামে তুমি তোমার মেয়ের নাম রাখল আমি তোমার সেই ক্যামেলিয়া, বলেই আমার মুখের ম্যাস্ক খুলে ফেললাম, তখনই সরল ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিয়ে বললো ক্যামেলিয়া তুমি তো বিদেশে থাকো, কিন্তু এখানে এলে কি করে! তার দু চোখে তা বিস্ময়।
আমি নিজের হাতে সরণের চোখের অশ্রু মুছে দিয়ে বললাম, সরল তুমি তো ঘামছো এই ব্রেন্জের উপর বসো, আমি সরলের মাথায় থেকে গামছা টা খুলে মুখটা মুছে দিয়ে বললাম দেখ সরল মানুষের জীবন কখন কোথায় যাবে সেটা কেবল আল্লাহ তায়ালাই জানান একদিন সব বললো, এখন শুধু এতটুকু জেনে রাখো আমি স্বামীর সাথে বিদেশে দুই বছর শুধু দাসী হিসেবে ছিলাম আর কতটা লজ্জায় ছিলাম সব জানতে চাইও না সরল বলতে পারবো নাহ, যদি বিশ্বাস করো তো বলি আমি পরিস্থিতির স্বীকার, আমাকে তুমি ক্ষমা করো সরল, সরলের হাতটা চেপে ধরতেই, সরল বললো আয়না এবার চলো আমার বউ বাচ্চার ঔষধ নিয়ে হাসপাতালেই যেতে হবে, আমি সরল কে অনুসরণ করলাম আর ভাবলাম সরল তুমি আমাকে আয়না বলে ডাকলে একবার ক্যামেলিয়া বলে ডাকতে পারতে, অথচ এই ক্যামেলিয়ার জন্য জীবনের সব ছেড়েছো সরল।
বিকেল থেকে রিমুর শরীরটা খারাপ হতে লাগলো সন্ধ্যায় আরও বেশি খারাপ আমি সরল কে দুরে ডেকে নিয়ে বললাম সরল নিজেকে শক্ত করো রিমুর যে কোন সময়, যে কোন কিছু হতে পারে, সরল আমার হাত চেপে ধরে অনুরোধ করতে লাগলো আয়না যে করে হোক তুমি রিমু কে বাঁচাও, বললাম সরল আল্লাহ কে ডাকো আমরা আমাদের সাধ্যমত সব চেষ্টা করছি।
গভীর রাতে আমি রিমুর বিছানার কাছেই বসে ছিলাম হঠাৎ রিমু একে বারে সুস্থ মানুষের মত আমাকে ডেকে বলছে ডাক্তার আপা আপনে আমার ধর্মের বোন, আমি মনে হয় আর বাঁচবো নাহ, আমি মরে গেলে আপনি আমার ক্যামেলিয়া মাকে রক্ষা করবেন, কথা দিন আপনি আমার ক্যামেলিয়ার দায়িত্ব নিলাম, আমি রিমুকে অভয় দিয়ে বললাম চিন্তা করবেন নাহ আপনি তো এখন অনেক সুস্থ হ্যাঁ, তবু রিমু আমার হাত চেপে বললো বোন কথা দিন আমার মেয়ের দায়িত্ব নিবেন, তারপর রিমু হাঁপাতে লাগলো, আমি বললাম রিমু আমি ক্যামেলিয়ার দায়িত্ব নিলাম, তারপর সরল কে ডেকে বলছে ওগো আমি তোমার ক্যামেলিয়ার কে আমার বোন কে দিয়ে গেলাম তুমি আমার বোনের কাছে থেকে ক্যামেলিয়া কে কেড়ে নিও না, আমার বিশ্বাস তোমার মেয়েকে আমার বোন নিজের সন্তানের মতই লালনপালন করবে, তারপর রিমু আর কথা বলতে পারছিলো না, সরল রিমু কে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো আর পাগলদের পোলাপ বকতে লাগলো, রিমু আমাকে ফেলে যেও নাহ, তুমি না আমার একমাত্র আশ্রয়, তুমি চলে গেলে কে আমাকে আশ্রয় দিবে রিমু তুমি ছাড়া কি করে বাচবো।
প্রায় এক সপ্তাহ পর ক্যামেলিয়া কে হাসপাতাল থেকে নিয়ে সরলের বাড়িতে পৌঁছালাম, দেখি সরল ক্যামেলিয়া গাছের পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর গাছের নিচে রিমুর কবর, আমি সরলের পাশে দাঁড়িয়ে বললাম সরল তোমার মেয়েকে কোলে নিবে নাহ প্রায় এক সপ্তাহ হলো সারাক্ষণ এই ক্যামেলিয়া গাছের নিচে রিমুর কবরের পাশে দাড়িয়ে আছো, এই নাও তোমার সত্যিকারের ক্যামেলিয়া কে কোলে নাও, যে তোমাকে কোন দিন ছেড়ে যাবে নাহ। অতঃপর সরল ক্যামেলিয়া কে বুকে জড়িয়ে ক্যামেলিয়ার কপালে চুমু এঁকে বললো, আলহামদুলিল্লাহ।