মোঃ খোরশেদ আলম, কুমিল্লাঃ কুমিল্লার দেবীদ্বারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের প্রায় পাঁচ মাস পর এক নারীর পেট থেকে বের করা হলো এক পোটলা গজ (ব্যান্ডেজ)। এই দীর্ঘ সময়ে গজটি ওই নারীর পেটে থাকায় তাতে পচন ধরে তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছিল।

রোগীর ভাই মোঃ রুহুল আমিন জানান, প্রায় পাঁচ মাস পূর্বে অর্থাৎ গত বছরে ৫ নভেম্বর মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামের মোঃ রাসেল মিয়ার স্ত্রী মোসাঃ শারমিন আক্তার (২৫) প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে দেবীদ্বারের আল ইসলাম হাসপাতাল এন্ড ডায়গনিষ্টক সেন্টার’র ৩০৩ নং ক্যাবিনে ভর্তি হন। ওই হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী ভর্তি রোগির রেজিষ্টার্ড নং ছিল ১৮৫। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রোজিনা আক্তার তাকে দেখে জরুরী সিজার করতে পরামর্শ দেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সিজারে সম্মতি দিলে ওইদিনই ডাক্তার রোজিনা আক্তার ও দেবীদ্বারের আল ইসলাম হাসপাতাল এন্ড ডায়গনিষ্টক সেন্টার’র সার্বক্ষনিক চিকিৎসক ডা. শামীমা আক্তার লিন্টা তার সিজার করেন। এতে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয় শারমিনের।

অপারেশেনের কিছুদিন পর থেকে শারমিনের পেটে ব্যাথা ও ক্ষত থেকে পুঁজ বের হতে থাকে। পরে তাকে দেবীদ্বার ইবনেসিনা হাসপাতালে আল্টা করানো হয়। আল্ট্রার রিপোর্টে পেটে পানি জমে তাকার কথা বলা হয়। পরে ঢাকায় ‘বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালে নেয়া হয়, ওখানেও আল্ট্রা রিপোর্টে পানি দেখা যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পানি কমার ঔষধ দেন। পানিকমে আসলেও ব্যাথা কমেনি। সর্বশেষ কুমিল্লা ‘ময়নামতি জেনারেল হাসপাতাল’র চিকিৎসক ডা. কর্ণেল আবু দাউদ মো. শরীফুল ইসলাম’র স্মরনাপন্ন হই, তিনি নিজেই আল্টা করেন এবং পেটে একটা কিছু আছে বলে জানান এবং তিনিই গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শারমিনকে অপারেশন করেন। অপারেশনের পরই বের করা হয় ‘গজ’ বা ব্যান্ডেজ’র কিছু অংশ।

ভুক্তভোগী শারমিনের বড় ভাই রহুল আমিন আরো জানান, শারমিনের আগেও একটি তিন বছরের মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার প্রথম সন্তানও সিজারে হয়েছে। দ্বিতীয় সন্তান ও সিজার করার পর থেকে তার পেটে অনেক ব্যাথা ও পুঁজ পড়তে থাকে।

অবশেষে তাকে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া পর সেখানে ডা.কর্ণেল আবু দাউদ মো. শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক তার পেটে অপারেশন করে আস্ত গজ (ব্যান্ডেজ) বের করেন। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযো মাধ্যমে তোলপাড় চলছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গাইনি চিকিৎসক ডা. রোজিনার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহম্মেদ কবির জানান, এ বিষয়ে প্যাসেন্টের পক্ষথেকে কোন অভিযোগ পাইনি। সাংবাদিকদের কাছ থেকেই এ ঘটনা জানতে পেরেছি। ডাঃ রোজিনা আক্তার গাইনীর উপর ডিপ্লোমা করা আছে, ভালো ডাক্তার হিসেবে তাকে জানি। এ বিষয়ে ডাঃ রোজিনাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় রোগির এমন অবস্থা আমাকেতো রোগীর পক্ষ থেকে ফলোআপ করেনি। আমি আজই জানতে পারলাম। ডাঃ আহমেদ কবির আরো জানান, অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা যেত, আসলে সত্য ঘটনাটি কি?

দেবীদ্বার আল ইসলাম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন (এনাম) বলেন, রোগির পেটে গজ থেকে যাওয়ার বিষয়টি আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারি। ঘটনাটি পাঁচ মাস আগের। এরপর রোগীর স্বজনরা আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করেনি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা অনুতপ্ত।

ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কর্ণেল আবু দাউদ মো. শরীফুল ইসলাম এর সেল ফোনেও বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। ওই ডাক্তারের বরাত দিয়ে ভুক্তভোগী শারমিনের বড় ভাই রহুল আমিন বলেন, তিনি সবার সাথে কথা বলেন না, তিনি ওই ডাক্তারের বক্তব্য তুলে ধরতে যেয়ে বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় অপারেশনের মাধ্যমে পেট থেকে রক্তাক্ত গজ বের করা হয়। ব্যান্ডেজের সূতাগুলো নাড়ীর সাথে আটকে যাওয়ায় ২টি নাড়ী কেটে যায়, সেগুলো জোড়া লাগানো হয়েছে, সেগুলো কার্যকর হবে কিনা এমূহুর্তে বলা যাচ্ছেনা। বর্তমানে রোগী সংকটাপন্ন রয়েছে। ৪/৫দিন গেলে অবস্থা বুঝা যাবে।

কুমিল্লা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতালের নাম উল্লেখ করে স্বজনরা যদি লিখিত অভিযোগ করে, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *