অলিউর রহমান নয়ন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে অতিমারী করোনার কারণে দারিদ্রতা এবং দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ৫৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩৮টি মাদ্রাসার ১ হাজার ১৩১ জন শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে । এদের অনেকেই বই খাতা তুলে রেখে বাড়িতে থেকেই দরিদ্র পিতামাতাকে সহযোগিতা করতে শ্রম বিক্রি করেছে, আবার কেউ কেউ পিতামাতার কর্মস্থলে সন্তানের গিয়ে কাজে যোগ দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা জানান, এরজন্য করোনা সৃষ্ট দারিদ্রতাই দায়ী।

করোনার সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ায় ২০২০ সালের ১৫ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়। পরিস্থিতির অবনতিতে ওই বছর কোনভাবেই স্কুল খোলা সম্ভব না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষার্থীরা অটোপাশ পেয়ে পরের ক্লাসে ভর্তি হয় । এরপর কেটে যায় ২০২১ সালের আরো সাড়ে ৮ মাস। অবশেষে দীর্ঘ আঠারো মাসের বেশি সময় পরে ১২ সেপ্টেম্বর সারাদেশের ন্যায় নাগেশ্বরীর ১৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৯ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৩৮টি মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়। স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দুরত্বসহ বেশকিছু নিয়ম মেনে স্বল্প পরিসরে শ্রেণী পাঠদান শুরু হলেও শ্রেণিকক্ষে ফেরেনি বেশকিছু শিক্ষার্থী।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যানুযায়ী, মাধ্যমিক স্তরের স্কুল ও মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেনির ১ হাজার ১৩১ জন শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়েছে। যা সচেতন মহলকে উদ্বিগ্ন করেছে। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো অপ্রাপ্ত বয়সে হাতে মেহেদী রাঙ্গিয়ে বধু বেশে বিয়ের পিড়িতে বসেছে ৫৭৭ জন স্কুল ছাত্রী। শিক্ষকরা হোম ভিজিট করে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেনিকক্ষে ফেরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সচেতন মহলের ধারনা, অনেক শিক্ষার্থীকে ফেরানো সম্ভব হবে না।

বালাটারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আমিনুল ইসলাম বলেন, স্কুল খোলার পর দেখি সবকয়টি শ্রেণিতে নিয়মিত অনুপস্থিত থাকছে কিছু শিক্ষার্থী। তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কথা বলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তারমধ্যে ৭ম শ্রেণির ছাত্র নাজমুল ইসলামকে বাড়ি গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পিতা মশিউর রহমানের সাথে মুঠোফোনে কথা বলেও কোন আশাব্যঞ্জক তথ্য মেলেনি। তিনি ঢাকায় যেখানে কাজ করেন, সেখানে ছেলে নাজমুলকে নিয়ে গিয়ে একটি চায়ের দোকানে কাজে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

একই এলাকার সুভাষ চন্দ্র শীল জানান, ভাগ্নে স্বাধীন শীল আমার বাড়িতে থেকেই পড়ালেখা করত। করোনায় উপার্জন কমে যাওয়ায় তাকে ঢাকায় কাজে পাঠিয়েছি। এছাড়াও কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করে এরশাদুল হক, সবুর আলীসহ ঝড়ে পড়াদের অনেকেই। পড়ালেখা ছেড়ে পরিবারের প্রয়োজনে এখন অটোরিক্সা চালাচ্ছে কেদার ইউনিয়নের খামার কেদারের হতদরিদ্র নূরুজ্জামানের ছেলে কচাকাটা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মঈন (১৩)। উপজেলার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একই অবস্থা ।

নাগেশ্বরী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.কামরুল ইসলাম জানান, আমরা মনিটরিং করছি, নিয়মিত শিক্ষার্থী উপস্থিতির তথ্য নেয়া হচ্ছে। হোম ভিজিট করে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে যাতে বিদ্যালয়ে ফেরানো যায় সেজন্য প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে। আর যারা একেবারেই ঝড়ে গেছে তাদের বিষয়ে সঠিক কারন অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নুর আহমেদ মাছুম জানান, ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষকরা যেন হোম ভিজিট করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে তাদেরকে শ্রেণীকক্ষে ফেরানোর চেষ্টা করেন সেজন্য জেলা প্রশাসক স্যার সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *