বেলী – কি পবিত্র মুখটা!

[উৎসর্গঃ Shapna Yesmin আপনাকে ঈদের সামান্য উপহার ]

গপ্পে- আবু শামা (শ্যামা)

লেইস ফিতা! লেইস ফিতা! কিনবেন লেইস ফিতা! লাল নীল সবুজ! বিভিন্ন কালারের লেইস ফিতা! এই বাবু কিনবি লেইস ফিতা?  মাত্র দশ টাকা, একটা নে না বাবু, তোর ভালোবাসার মানুষের জন্য একটা লেইস ফিতা নে। কিন্তু এ সময় টা তে আমি যে কোথায় আছি ঠাঁই দাঁড়িয়ে নিজেকে হাড়িয়ে, আমার চোখের সামনে শুধু একটা মমতাময়ী মায়াবী হরিণীর অসম্ভব সুন্দর চোখ, ভাবনাতে শুধুই – কি পবিত্র মুখটা!

হঠাৎ এতটা ধাক্কায় চেতনা ফিরে পেলাম, কি রে বাবু কিছু বলছিস না, নিলে নে, না নিলে চলে যাই, এমন ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে চেয়ে আছিস, খেয়ে ফেলবি নাকি আমাকে, যা রাস্তা ছাড় সময় নষ্ট করবি নাহ।

আমি মুখে কোন কিছু না বলে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম সে আমার হাতে পাঁচটা লেইস ফিতা তুলে দিলো আমি পকেট থেকে পঞ্চশ টাকা বেড় করে দিতেই সে হারিয়ে গেলো নিমিষেই। আমি লেইস ফিতা হাতে নিয়ে দেখলাম লাল, নীল, সবুজ, হলুদ আর কালো রঙের পাঁচটা লেইস ফিতা।

আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা বন্ধু শাহিন বললো, কিরে লেইস ফিতা তো কিনলি এখন কাকে দিবি, আমি হঠাৎ বলে উঠলাম, যার টা তাকেই দিবো, শাহিন কৌতুহলী হয়ে বললো, যার টা তাকে দিবি না মানে কি, কিছু তো বুঝলাম না।

আমি বললাম, তোকে কিছু বুঝতে হবে না আগে চল মেয়ে টা কে খুঁজে বের করি। শাহিন বললো, কোন মেয়ে, কে? আমি বললাম, এই যে গেলো মেয়েটা তাকে। শাহিন বললো, কি বলিস সে তো ফিতাওয়ালী। আমি শাহিনের মুখ চেপে ধরে বললাম, খবরদার এভাবে বলবি নাহ, ও তে বেলীফুল মানে আমার বেলী।

শাহিন বললো, কিরে রাজিব তুই কি পাগলটাগোল হলি নাকি! বেলী টা আবার কে? কোন দিন তো নামই শুনি নাই। তোর সাথে ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষ থেকে শেষ বর্ষ চলছে এক সাথে হলের এক রুমে আছি, কোন দিন তো বলিস নাই। আমি হাতের লেইস ফিতা দেখিয়ে বললাম এর মালিক বেলী।

শাহিন বিরক্ত হয়ে বললো, কিছুই মাথায় ডুকছে না ইউনিভার্সিটি এত এত সুন্দর মেয়ে তোর পিছনে ছুটেছে সেগুলো রেখে তুই এই ফিতাওয়ালী পিছনে ছুটবি, তোর রুচি এত নিচে নামছে রাজিব জানা ছিলো নাহ। এবার আমি শাহিনের উপর বিরক্ত হয়ে বললাম, ঠিক আছে তুই থাক আমি গেলাম।

অনেকটা পথ পেরিয়ে যাবার পর শাহিন পিছনে থেকে দৌড়ে এসে বললো, রাজিব কি সব পাগলামি শুরু করলি তুই প্রথম আমাদের চলনবিলে এসেছিস। কোন দিক থেকে কোন দিকে যাবি পরে রাস্তা হারিয়ে কোথায় যাবি ঠিক নাই। বেলা দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে এবার বাড়ি চল, পরে ফিতাওয়ালী কে খুঁজতে বের হবো বিকালে। চল, মা তোর পছন্দের সব খাবার রান্না করেছে। এবার চল বন্ধু মাথা ঠান্ডা করো চল।

আমি আর শাহিন তাদের বাড়ির দিকে রওনা হলাম।

শাহিন বললো, বন্ধু সত্যি করে বলতো বিষয় টা কি! তোর চরিত্রে তো এমন কিছু আমার চোখে পড়েনি, তুই কি আগে থেকে মেয়ে টা কে চিনিস? আমি বললাম সত্যি তাকে চিনি না কিন্তু মনে হচ্ছে সে আমার হাজার বছরের চেনা আমার স্বপ্নের বেলীফুল আমার বেলী।

আমি শাহিনের হাত চেপে ধরে বললাম, বন্ধু চল না বেলী কে খুঁজে দেখি পরে যদি আর কোন দিন বেলী কে খুঁজে না পাই। তখন শাহিন মুচকি হেসে বললো, সত্যি তুই পাগল হয়ে গেছিস। আচ্ছা তোর পাগলামির ঔষধ আমার কাছে আছে। আমি বললাম কিভাবে?

তখন শাহিন বললো, শুন এই ফিতাওয়ালী কোথায় থাকে আমি জানি, তোকে সন্ধ্যায় তার কাছে নিয়ে যাব, আমি খপ করে শাহিনের হাত চেপে ধরে বললাম সত্যি জানিস তার কাছে আমাকে নিয়ে যাবি? শাহিন বললো, তোকে বুঝিয়ে বলছি, এই ফিতাওয়ালী হচ্ছে এক প্রকার বেদেনী, তারা বর্ষাকালে আমাদের এলাকায় নৌকা নিয়ে আমাদের এলাকায় আসে। লেইস ফিতা রেশমি চুরি এসব বিক্রি করে ফেড়ি করে। সারাদিন ফেড়ি করে সন্ধায় বেদেবহরে ফিরে আসে, সন্ধায় তোকে নিয়ে যাবো এবার বাড়িতে চল।

যথারীতি আমরা বিকেলে বেড়িয়ে পরলাম বেলী কে খুঁজতে, অনেকক্ষন ধরে খোঁজার পর তাদের বেদেবহর খুঁজে পেলাম, গাংঙের পারে ঠিক গোধুলির আলো-আঁধারে বেলীর মুখটা সোনায় মোড়ানো কি পবিত্র মুখটা দেখে আমার মনটা পুলকিত হতে লাগলো, কোমরে রুপার বৃছা, কান্খে কোলশী, মেঘকালো চুলে বেণীগাঁথন আমার স্বপ্নের বেলীফুলের সৌরভ ছড়ানো সেই বেলী, যাকে খুঁজে ফিরছি জীবনভর।

আমি বেলীর দিকে যেন ছুটে চলেছি, হঠাৎ পিছন থেকে শাহিন হাত চেপে ধরলো, বললো রাজিব কি করছিস? আমি বললাম, কেন বেলীর সাথে কথা বলতে যাচ্ছি। শাহিন বললো, নিজেকে সামলা রাজিব, এটা করা ঠিক হবে না। এখন চল, পরে আবার আসবো। আমাকে এক প্রকার জোর করে শাহিন নিয়ে এলো সেখান থেকে।

খুব সকালে শাহিন আমাকে ঘুম থেকে জাগালো, বললো এবার চল রাজিব। আমি তো সকাল দশটার আগে ঘুম থেকে উঠতে পারি না, শাহিন কে বলে দিলাম জ্বালাবি না ৷ যেখানে ইচ্ছে যা, ঘুমাতে দে। শাহিন ব্যপারটা বুঝতে পেরে, আমার কানের কাছে এসে বললো, বেলী এসেছে। আমি লাফিয়ে উঠে বলি বেলী মানে? কি বলিস কোথায়? কোথায়?

শাহিন বললো, বেলীর কাছে যাবি না? সারারাত যেভাবে আমার উপর অত্যাচার করছি, একফোঁটা ঘুমাতে দিস নাই। বললাম, কেন কি করছি? শাহিন বললো, কি করেছিস? আমাকে বেলী বানিয়ে সারারাত যা করেছিস, লোকে শুনলে জুতা পেটা করবে।  এবার আমার সাথে চল।

আমি কিছু না বলে শাহিনের পিছনে পিছনে হাটতে থাকলাম। মনে হলো শাহিন তাদের চলনবিলের একপান্ত থেকে অন্য পান্তে নিয়ে গেলো। তারপর গ্রামের একপান্তে বেলীফুলের সন্ধান পেলো, দু’জন মিলে ইচ্ছে মত বেলীফুল তুলে নিয়ে সটকে পরলাম।

আমি শাহিন কে বললাম। কি করছি এসব? শাহিন বললো আরে গ্যাদা বেলীর কাছে খালি হাতে যাবি? নে এবার মালা গাঁথ। আমি বোকার মত বেলীফুলের মালা গাঁথতে লাগলাম। আর শাহিন বলতে লাগলো, শুন বন্ধু, তুই এই বেলীফুলের মালা বেলী কে উপহার দিবি, দেখবি মেয়ে টা অনেক খুশি হবে।

তো মালা গাঁথা শেষ আমরা গাংঙের পারে বেলীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমার অপেক্ষা আর শেষ হয় না। বারবার অধৈর্য হয়ে শাহিন কে বলতে লাগলাম, কখন আসবে বেলী? শাহিন বললো, একটু ধৈর্য ধর বন্ধু আসবে!

অতঃপর আমার অপেক্ষার পালা শেষ হলো। বেলী তার সখি কে নিয়ে বেদেবহর থেকে বেড়িয়ে এলো, এদিকে আমার বুকের কাঁপন দেখে কে! বেলী বেদেবহর থেকে অনেকটা পথ যাবার পর আমরা পিছনে ছুটছি। এবার শাহিন পিছন থেকে ডাকতে লাগলো, এই ফিতাওয়ালী, ফিতাওয়ালী! এই দিকে এসো। বেলীর সখি পিছনে ফিরে এলো আর আমি এগিয়ে গেলাম, তারপর বেলীর কাছে গিয়ে কোন কথা না বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।

বেলী বললো, কি রে বাবু আজও লেইজ ফিতা নিবি, কাল তো নিলি। বুঝেছি তোর মনের মানুষ আমার লেইজ ফিতা অনেক পছন্দ করেছে তো, জানি জানি এই সখির লেইজ ফিতা যে একবার নিছে সে বারবার নিতে আসবে এত কম দামে এমন সুন্দর লেইস ফিতা কারো কাছে পাবি নাহ!

বেলী লেইস ফিতা আমার হাতে দিতেই বললো, কিরে বাবু তুই এমন করে ঘামছিস কেন? আবার তোর গাঁ তো কাঁপছে রে, তোর কি শরীর খারাপ? বলতেই আমার কপালে তার হাত টা স্পর্শ করলো, বললো কিরে বাবু জ্বরে তোর গাঁ পুরে যাচ্ছে।

বেলীর হাতের প্রথম স্পর্শে আমার সারাশরীর শীতল হয়ে গুনগুনিয়ে মনে দোলা দিয়ে প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো, আমি চুপ করে পকেট থেকে বেলীফুলের মালা টা বেলীর দিকে এগিয়ে দিলাম, বেলী মালাটা হাতে দিতেই চিৎকার দিয়ে, আমার বন্ধু শাহিন কে ডাকতে লাগলো। এই বাবু এদিকে আয় তাড়াতাড়ি, আমার তো ভয়ে পা কাঁপতে লাগলো, জানি না আজ কপালে কি আছে। শাহিন কাছে আসার পর বললো, বাবু তোর বন্ধু কি নিয়ে যা, তার গাঁ জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যা।

কি আর করা শাহিন আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করালো। সুস্থ হয়ে আবার সন্ধায় বেলী কে দেখতে গাংঙের পারে বেদেবহরে লুকিয়ে বেলীকে দেখতে লাগলাম। দেখি বেলী আমার দেওয়া বেলীফুলের মালা টা তার খোঁপায় পড়ে তার সখির সাথে হাসি তামাশায় মত্ত আছে, শাহিন বললো দোস্ত কাজ তো হয়ে গেছে। বললাম কিসের কাজ? শাহিন বললো, আরে গ্যাদা তোর বেলী বেলীফুলের মালা তার খোঁপায় পড়ে আছে দেখ, তার মানে সে তোকে পছন্দ করেছে। দেখনা মালাটা পড়ে কত আনন্দে আছে।

আমি বললাম, চল কথা বলি বেলীর সাথে, এখনও তো একটা কথাই বেলীর সাথে বলতে পারলাম না। শাহিন বললো, আরে না ভুল পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, ধৈর্য ধরে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে, না হলে সব শেষ হয়ে যাবে বুঝলি গ্যাদা। কাল সব কথা বলবো, কাল আবার গাঁয়ে জ্বর তুলবি না ঠিক আছে। এখন চল বাড়ি যাই।

পরের দিন সকালে একটা চিঠি লিখে নিয়ে গেলাম যদি কথা বলতে না পারি তো চিঠি টা দিয়ে আসবো। যথারীতি আমরা গাংঙের পাড়ে গিয়ে হাজির হলাম, কিন্তু বেদেবহরের আর কিছুই নেই। মনটা বিষাদে ভরে গেল, কি করবো বুঝতে পারছি না।

শাহিন আমাকে দেখে বললো রাজিব তোর চোখে পানি কিসের! আমি শিশুর মত শাহিন কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম, বন্ধু আমি বুঝি আমার বেলী কে হারিয়ে ফেললাম। শাহিন রেগে গিয়ে বললো, রাজিব গ্যাদা ছাওয়ালের মত করিস না তো, এখান থেকে অন্য কোথায় গেছে হয়তো। চল, খুঁজে দেখি, নিঃশ্চয়ই খুঁজে পাবো।

তারপর সারাদিন চলনবিলের এক পান্ত থেকে অন্য পান্ত ছুটে বেড়িয়েছি কোথাও বেলী কে খুঁজে পেলাম না। এভাবে প্রতিদিন সকালে বের হই আর সন্ধায় ফিরে আসি কিন্তু কোথাও বেলীর দেখা নাই। এভাবে সাতদিন।

তারপর ঢাকায় ফিরে গেলাম। তারপর সাত বছর, বর্ষাকাল এলেই ছুটে যাই চলনবিলে বেলীকে একবার দেখা পেতে, কিন্তু খোদার আমায় একটু করুণা করে নাই তাই হয়তো একবারও বেলীর দেখা পাইনি।

জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়- টঙ্গি তে একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে এইচআর ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত আছি, অফিসে একটা মিটিং শেষ করে আমার রুমে ঢুকতেই চমকে গেলাম! আজ কি সূর্য পর্শ্বিম দিকে উঠেছে? গরীবের উঠানে হাতির পারা? বলতেই স্বপ্না আমার দিকে তেড়ে এলো, রাজিব এভাবে আর একটা কথা বললে এখনি তোমার অফিস থেকে বেড়িয়ে যাব। বললাম, আচ্ছা এই কানে ধরছি আর এভাবে বলবো নাহ।

আমার চেয়ারে বসে স্বপ্না কে বললাম, এখন বলতো, কি মনে করে অফিসে এলে। যদিও কখনও আসোনি তাই হাতির পারা বলছি।

স্বপ্না বললো, দেখ রাজিব তুমি সবসময়ই আমাকে খোঁচা মেড়ে কথা বলো। আমার ভাই বিসিএস ক্যাডার সরকারি বড় অফিসার, আমি তো কিছু নই তবুও কেন আমাকে কষ্ট দাও রাজিব, আমার অপরাধ কি? আমার ভাইয়ের ঢাকায় বাড়ি গাড়ি আছে, তাতে আমার কি, তাতে তো আমি তোমায় কষ্ট দিয়ে কথা বলি না, আর তুমি এটা নিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলো রাজিব,

আর ভাইয়া তো তোমারি সব চেয়ে কাছের একমাত্র বন্ধু, আমি একটা ব্যাপার বুঝতে পারছি না তোমাদের বন্ধুদের মধ্যে কি এমন আছে যে এটার জন্য আমাকে অবহেলা করো।

আমি বললাম আরে পাগলি, তুমি এমন করে ভাবছো কেন? আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্ক আগের মতই আছে, তুমি না বুঝে এমন বলছো স্বপ্না।

ও হ্যাঁ স্বপ্না হচ্ছে আমার প্রাণের বন্ধু শাহিনের ছোট বোন, খুব লক্ষী একটা মেয়ে, খুব সাদাসিধা আমার সাথে অনেকটাই মিলে যায়, খুব অভিমানী, খুব অল্পতেই কেঁদে দেয় শিশুর মত! ভারি সুন্দর মুখশ্রী বড্ড মায়া লাগে মেয়েটার জন্য। ওকে যখন থেকে চিনি তখন সে পুতুল খেলতো, আমি তো ওদের বাড়ি গিয়ে একবার তার পুতুল লুকিয়ে রেখেছিলাম, ওমা সে কি কান্না,

শেষমেশ আমি তার পুতুল এড়িয়ে দিতেই পুতুল হাতে নিয়েই আমার দিকে ছুঁড়ে মারলো তো, আমার নাক ফেটে রক্ত বেড় হতে লাগলো, কারণ পুতুল টা ছিলো মাটির হাতে বানানো।

কথাটা মনে হতেই নাক চেপে ফিক করে হেঁসে দিলাম, স্বপ্না অবাক হয়ে বললো কি হলো রাজিব তুমি হাসছো কেন? পাগল-টাগোল হলে নাকি! আমি বললাম, আরে না, সে রকম কিছু নাহ, তোমার পুতুল লুকিয়ে রাখার কথা মনে আছে? কথাটা বলতেই দুজনে অট্টোহাসিতে ফেটে পরলাম।

আচ্ছা স্বপ্না, এবার আসল কথায় আসো, হঠাৎ আমার ছোট অফিসে তোমার আগমনের কারণ টা বল তো শুনি। স্বপ্না বললো,  তোমাকে নিয়ে আজ কিছু কেনাকাটা করবো, সময় নষ্ট না করে চলো এখনই বের হবো। ভাইয়ার গাড়ি নিয়ে এসেছি আবার তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে। বললাম, আরে কেনাকাটা করবে আগে বলবে না, আমার কাছে তো টাকাই নেই।

স্বপ্না বললো, আরে সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হতে না, ভাইয়া আজ অনেক টাকা দিয়েছে তোমার জন্য কেনাকাটা করার জন্য, বললাম তাই নাকি ভালো তো। এবার বল তো স্বপ্না কিছু দিন হলো তুমি আমার নাম ধরে ডাকছো, এখন অফিসে এসেও বলছো, অফিসের লোক জন শুনলে কি ভাববে হ্যাঁ?

স্বপ্না বললো, কেন সমস্যা কি? সবাই তো জানেই, ভাইয়া তো ক’দিন আগে তোমার অফিসে এসে শুভ সংবাদ টা দিয়ে সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে গেছে, আর এই যে (হাতের আংটি দেখিয়ে) তোমার দেওয়া আমার অধিকার, এই অধিকারের জন্যই তো এখন রাজিব বলে ডাকি। সারাজীবন তো তোমাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডেকে মুখে ফেনা তুলেছি, বুড়ো খোঁকা আমার।

আমি বললাম, স্বপ্না আমি কি সত্যি বুড়ো হয়ে গেছি? স্বপ্না বুড়ো হওনি তো কি, চুল দাঁড়ি অর্ধেক পাঁকিয়ে ফেলেছো, আর তোমার বন্ধু বিয়ে করে দুই বাচ্চার বাপ।

আমার অবশ্য তোমার পাকা চুলের জন্য সমস্যা নাই, তুমি তো আমার জন্যই চুল দাঁড়ি পাঁকিয়েছো তাইনা। তুমিই তো আমার পড়ালেখা শেষ হবার অপেক্ষায় ছিলে, তাছাড়া তোমার মত এমন স্বচ্ছ সুন্দর মনের মানুষ কে স্বামী হিসাবে পাওয়া তো আমার জন্য বড় ভার্গ্যের ব্যাপার। এখন কথা বন্ধ করে চলো, অনেক বেলা হলো অনেক কেনাকাটা করতে হবে।

আমি খেয়াল করলাম, স্বপ্নার হাতে একটা চিঠির খাম নিয়ে নাড়াচাড়া করছে আর কথা বলছে। আমি স্বপ্না কে থামিয়ে দিয়ে বললাম, তোমার হাতে ওটা কি, স্পেশাল কিছু ওর ভিতরে নিয়ে এসেছো নাকি? স্বপ্না বললো, আরে না, কি আর আনবো, এটা তো তোমার টেবিলেই ছিলো।

আমি স্বপ্নার হাত থেকে চিঠির খাম টা হাতে নিলাম, খুব সাদাসিধা একটা চিঠির খাম, এটা তো আমার অফিসের কোন খাম না, এমন খাম বাইরে দোকানে পাওয়া যায়। আমি চিঠির খামটা হাতে নিতেই কি যেন একটা শিহরণে আমার গাঁয়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। খাম টা ছিঁড়তেই খাম টা খুলে গেলো, ঠিক মত খাম লাগেনি, মনে হচ্ছে বেশিক্ষন আগে লাগানো হয়নি। ভিতরে তাকাতেই কলিজাতে খোঁচা দিয়ে গেলো। এটা কি, কি করে সম্ভব। নিজের অজান্তেই বলে উঠলাম “বেলী”?

তখন স্বপ্না বললো, কি হলো রাজিব, বললাম কিছু না স্বপ্না। তুমি একটু বসো, আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।

তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে খামটা খুলে দেখলাম, আমার বেলী কে দেওয়া সেই বেলীফুলের মালা। আমার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসছে, কলিজা শুকিয়ে আসছে। আমার বেলী বেঁচে আছে আর সে আমার কাছাকাছিই আছে, চিঠির খামটা আশেপাশের দোকান থেকে কেনা, খামের গাঁয়ে গামটা এখনও ভেজা, তারমানে বেলী আশেপাশে আছে। আর আমাকে একবার দেখা দেইনি, কিন্তু কেন আমাকে তো সে ভুলেও যায় নি, আর ভুলে গেলে তো আজো আমার দেওয়া বেলীফুলের মালা টা এত যত্ন করে রাখতো না সাতটা বছর ধরে। যে করে হোক আমার বেলী কে খুঁজে বেড় করতেই হবে। এতটা বছর ধরে বেলী কে সাড়া বাংলাদেশ খুঁজেছি, যার জন্য ক্যারিয়ারের পিছনে কখনো ছুটিনি, ছোট একটা চাকরি করছি তার ফাঁকে ফাঁকে বেলী কে খুঁজেতে থাকি প্রতি মাসে পাগলের মত ছুটে চলি দেশে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া।

আফসোস! বেলী তুমি কতটা নিঃঠুর হলে আমার সাথে এমন করতে পারো কেন হাড়িয়ে গিয়েছিলে, আর কেন আমার কাছাকাছি থেকেও একবার দেখা দাও নাই, কেন কেন বেলী, কেন এমন শাস্তি দিচ্ছো বেলী।

আমি ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসতেই স্বপ্না ছুটে এলো, রাজিব তুমি ঠিক আসো সোনা, কি হয়েছে তোমার? তুমি আধাঘন্টা ওয়াশরুমে কি করছিলে? কি হয়েছে? সোনা বলো আমাকে, বলেই স্বপ্না আমাকে জড়িয়ে ধরলো। রাজিব মাঝেমধ্যে তোমার কি হয়? আমাকে কোনদিন কিছু বলো না, কিসের কষ্ট তোমার বুকে চেপে রাখ? একবার বলো আমাকে। আমার ভালোবাসা দিয়ে তোমার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবো, একবার বল সোনা, শুধু একবার বলো। রাজিব তোমার শুকনো মুখটা আমি সইতে পারি না রাজিব আমার খুব কষ্ট হয়, বলতে বলতে স্বপ্না আমার মুখে হাত বুলাতে লাগলো।

আবার বলতে লাগলো, রাজিব তুমি প্রতি মাসে আমাদের গ্রামের বাড়িতে ছুটে যেতে। সেটা তো আমার জন্যই সোনা হ্যাঁ, আমার জন্যই তো রাজিব আমাকে দেখেতেই তো আমাদের বাড়িতে যেতে, সেই ছোট বেলা থেকে তোমাকে পাগলের মত ভালোবেসেছি, কই কখনও তো জোর করিনি, আমি কখনও কষ্ট দেইনি। তোমার আমার পরিবারের সবাই মিলেই তো আমাদের বিয়ে ঠিক করেছে, শুধু তো আমার ইচ্ছেতে নয় তুমিও মত দিয়েছো, তুমি যতবার আমাদের বাড়িতে গিয়েছো, তোমার চোখে আমি একটা অপূর্ণতা দেখেছি, কি যেন সারাক্ষণ খুঁজে ফিরেছে। এই চোখ হ্যাঁ, এই চোখ দিয়ে তুমি কখনও আমাকে দেখনি, তোমার চোখে অন্য কেউ আছে, তুমি অন্য কাউকে খুঁজেতে থাকো রাজিব, আমি সব বুঝতে পারি রাজিব, আজ বলবে রাজিব, আজ তোমাকে বলতেই হবে, সব বলবে। কি কষ্ট তুমি বুকে চেপে রেখেছো বছরের পর বছর বল রাজিব বলো, একবার বলো।

আমি বললাম, পাগলামি করো না স্বপ্না, আমার তেমন কিছুই হয়নি, তুমি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছো, এখন চলো কেনাকাটা করবে বলে, চল যাই, চলো। স্বপ্না আমাকে আঁটকে দিয়ে বললো, রাজিব আজ আর কোন কিছু লুকাতে পারবে না, ক’দিন পর আমাদের বিয়ে, আর তোমার চোখ যদি অন্য কাউকে খুঁজে ফিরো, এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে নাহ। এর পরও যদি তুমি আমাকে বিয়ে করো, সেটা তো বিয়ে নয় আমাকে করুণা করা হবে, আর করুণা নিয়ে আমি সারাজীবন বেচে থাকতে চাইনা রাজিব। এত বড় অন্যায় আমার সাথে করতে পারো না রাজিব, করতে পারো নাহ।

তুমি তো বেশ স্বাভাবিক ছিলে, এই চিঠির খাম টা তোমাকে এলোমেলো করে দিলো, কি আছে ঐ চিঠিতে কার চিঠি রাজিব বল। বল কার চিঠি, বলতে বলতে আমার বুকে কাঁদতে লাগলো। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো, রাজিব তুমি চিঠির খামটা ছিঁড়েই একটা নাম বলেছিলে, কি যেন নামটা? হ্যাঁ মনে পড়ছে, বেলী, হ্যাঁ বেলীই বলেছিলে, এখন বলো রাজিব বেলী কে?

বলো, বলো। আমাকে স্বপ্না ঝাকাতে লাগলো, আমি কিছুই বলতে পারছি না, অজান্তেই আমার চোখ বেয়ে পানি বেড়িয়ে এলো।

স্বপ্না আমার মুখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো রাজিব, আমি তোমাকে পাগলের মত করে ভালোবেসেছি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি, তাই বলে করুণা পেতে নয়, এই স্বপ্না করুণা পাত্র হতে ভালোবাসেনি রাজিব। চোখ মুছতে মুছতে বললো, শুন রাজিব যাকে সারাজীবন ধরে খুঁজছো নিঃশ্চয়ই এই চিঠির খামে সে আছে। সমস্যা নেই, কোন সমস্যা নেই, আমার সব অধিকার ছেড়ে দিলাম। বিনিময়ে তুমি সুখি হও, শুধু মনে রেখো, এই স্বপ্না শুধু একজন পুরুষ কে নিয়ে বাঁচতে চেয়েছিলো, আর সেই নামটি রাজিব।

তারপর স্বপ্না আমার রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো, আমি একটু পানি খেয়ে নিলাম, তারপর দেখি আমার টেবিলের উপর স্বপ্না আমাদের বিয়ে আংটি ফেলে গেছে, আমার চেতনা ফিরে পেলাম, দৌড়ে অফিস থেকে বের হয়ে দেখলাম, স্বপ্না তার গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে গেছে।

আমার অফিসের গেটের পাশেই একটা ছোট দোকান, দোকানদার কে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার দোকানে চিঠির খাম আছে, থাকলে একটা দাও। দোকানদার একটা চিঠির খাম দিলো দেখলাম। বেলীর দেওয়া খামের সাথে এই খামটার মিল আছে, আমি দোকানদার কে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আজ কেউ এরকম খাম নিয়েছে? দোকানদার বললো, জ্বি স্যার একটা মেয়ে নিয়েছে দুপুরে। বললাম, তার নাম জানো? না নাম জানি না স্যার, তবে এই দিক থেকে প্রতিদিন অফিসে আসে। তারপর আমি সেই দিকে হাটতে থাকলাম, সামনে একটা সিগারেট কিনে টানছি আর হাটছি।

হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলাম একটা টিনসিটের ছোট্ট ধরে, কিন্তু ঘরটা বেশ গোছানো, কেউ নেই পাশে, হঠাৎ একটা মেয়ে হাতে দুধের গ্লাস নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।

আমি কোথায়? আপনি কে? আমি এখানে কি করে এলাম? মেয়ে টা বললো, স্যার সব বলছি, আপনার শরীর টা অনেক ক্লান্ত দুধটা খেয়ে নিন, তারপর সব বলছি। আমি দুধটা খেয়ে নিলাম। তারপর আমার ব্লেজার টা খুঁজতে লাগলাম, মেয়ে টা বললো স্যার ভয় পাবেন না। আপনার আমানতের খেয়ানত করিনি। সব ঠিক আছে।

ব্লেজার টা আমার হাতে দিয়ে বললো, আপনি আমাদের রাস্তার পাশে একেবারে আমাদের বাসার সামনে পড়ে ছিলেন। আমরা আপনাকে বাসায় নিয়ে এসেছি, একজন সারারাত আপনাকে সেবা করে সুস্থ করেছে, আপনি এখন যেতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

শুনেই আমি চমকে উঠলাম। মেয়ে টা আবার বললো, ভয় পাবেন না স্যার, আপনার অফিসে আমরা চাকরি করি। একটা অনুরোধ করবো স্যার। বললাম, বলুন শুনছি। মেয়ে টা বললো, স্যার আপনার পকেটে একটা চিঠির খাম আছে, দেখুন তো ঠিক আছে কিনা, আমি খামটা বের করে দেখলাম ঠিক আছে।

মেয়ে টা বললো স্যার, চিঠিটা কার? আমি বললাম, আমার বেলী যাকে আমি সাত বছর ধরে পাগলের মত করে খুঁজে ফিরছি। মেয়ে টা বললো, স্যার তাকে কি গতকালও খুঁজেতে বেড়িয়ে ছিলেন? আমি বললাম হ্যাঁ তাকেই খুঁজছিলাম। তারপর ব্লেজারে আরও কিছু খুঁজেতেছিলাম। মেয়ে টা বললো স্যার আরও কি খুঁজছেন? বললাম লেইস ফিতা।

মেয়ে টা বললো স্যার, সেটা ওখানে নেই, আমি বললাম নেই মানে? ওটা আমার আমানত, সাত বছর ধরে সঙ্গে রেখেছি, দয়া করে ফেরত দিন। মেয়ে টা বললো, যার জিনিস তার কাছে আছে।

তারপর, এই লেইস ফিতাওয়ালী ভিতরে চলে আয়! সাথে সাথে একটা মেয়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো, আমি দেখলাম লেইস ফিতা দিয়ে চুলের বেণী গেঁথেছে। শুধু মনে হলো- কি পবিত্র মুখটা!

আমি বিছানায় বসে আছি। মেয়েটি আমার সামনে এসে বললো, লেইস ফিতা, লেইস ফিতা, মাত্র দশ টাকা কিনবি বাবু, তোর মনের মানুষকে দিবি, নে না একটা লেইস ফিতা।

আমি বললাম বেলীফুল, আমার বেলী!

আগের মেয়ে টা বললো সখি তোরা কথা বল, আমি অফিসে যাই, দেরি হলে আবার বেতন কাটা যাবে। তারপর মেয়ে টা চলে গেলো।

আমি কোন কথা বলতে পারছি না, বেলী সামনে বসে বললো, দেখত বাবু তোর লেইস ফিতা দিয়ে বেণী গেঁথেছি কেমন লাগছে।

আমি তখনও ঘামছি। হঠাৎ বেলী তার হাতটা আমার কপালে স্পর্শ করে দিয়ে বলল্‌ আর কখনও তোর জ্বর আসতে দেবো না বাবু, আর ভয় পাবি না, আমি তোর বেলী আজ বাস্তবেই বেলী হয়ে এসেছি।

আমি বললাম, বেলী কেন আমার সাথে এমন করলে? তখন বেলী কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, ওগো আমি তোমাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দেইনি, সেদিন রাতে সাঁপে কামড়ে আমার বাবা মারা যায়, আর সেই রাতেই আমরা চলে আসি। বাবা মারা যাবার পর মা কসম দিয়ে বলেছিলো, যে দেশে আর যে পেশা তোর বাবা কে কেড়ে নিছে সেই দেশে আর সেই পেশাতে আবার গেলে তোর মার মরা মুখ দেখবি।

বিশ্বাস করো বাবু, একবার বিশ্বাস করো বাবু, আমি একটি দিনও তোমাকে ভুলে থাকিনি, তোমার বেলি ফুলের মালা টা যেমন করে আগলে রেখেছি বুকের মাঝে, তোমার ভালোবাসার স্মৃতি করে।

বললাম, তাহলে আমার ভালোবাসার স্মৃতি টুকু কেন গতকাল ফেরত দিলে, বললো, গতকাল যখন শুনলাম তুমি বিয়ে করছো, বিয়ে আংটি পড়িয়েছো অন্য মেয়ে কে, তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি ৷ ভাবলাম আমার বাবুর স্মৃতি আগলে রেখে আর কি লাভ, তাই গোপনে ফেরত দিয়ে এসেছি।

আমি বললাম, তুমি আমাকে চিনতে তাহলে কেন আমাকে দেখা দিলে না বেলী। বেলী বললো, আমি তোমাকে চিরতরে হারাতে চাই নি, তুমি একজন বড় অফিসার আর তোমার অফিসের সামান্য গার্মেন্টস কর্মী তুমি যদি আমাকে ফিরিয়ে দাও, সইতে পারবো নাহ।

তাছাড়া লোকে জানলে তোমার সন্মান থাকবে না, আমি কারো কাছে তোমাকে ছোট হতে দিতে পারি না বাবু। তাই এক বছর হলো তুমি আমাদের অফিসে আসলেও তোমার সামনে যাই নি। আমি বললাম, তোমরা যেখানে কাজ করো সেথানে তো আমি ভিজিট করতে যাই, কখনও তো তোমাকে দেখি নি।

বেলী বললো, তোমাকে হারানোর পর থেকে আমি বোরকা পড়ি, আমি চাইনি অন্য কেউ আমার মুখ দেখুক। আমি আল্লাহর কাছে নামাজে সবসময়ই দোয়া করতাম, আল্লাহ একদিন তুমি আমার বাবু কে আমার কাছে ফিরিয়ে দিও। যখন তোমাকে আমাদের বাসার সামনে পড়ে থাকতে দেখলাম, অফিস থেকে ফেরার পথে, তারপর বাসায় এনে সারারাত সেবা করে কিছু টা সুস্থ হলে, তখন আমার মনে হলো, তোমার ব্লেজার টা পরিস্কার করা উচিৎ।

তখন তোমার পকেটে আমার দেওয়া লেইজ ফিতা দেখতে পেলাম, তখন বিশ্বাস হলো, আমি যেমন আমার বাবুর বেলীফুলের মালা যত্নে রেখেছি, ঠিক তেমন করেই আমার বাবু আমার লেইজ ফিতা ভালোবেসে আগলে রাখছে।

বাবু, আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, হাত জোর করছি আমাকে ক্ষমা না করলে আমি যে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো নাহ। বেলী আমার মুখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, বাবু একবার শুধু ক্ষমা করো বিনিময়ে যা চাও তাই করবো, আমি তোমার দাসী হয়ে খাকবো বাবু, একবার ক্ষমা করো।

তখন আমার নিজের অজান্তেই মুখ থেকে একটি শব্দ বের হয়ে গেলো “আশ্রয় “। বেলী আমার মুখের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে, বললো, আশ্রয়! আমি বললাম, হ্যাঁ বেলী, আশ্রয়, আমাকে একটু আশ্রয় দিবে। তখন বেলী আমাকে ঝাপটে আমাকে তার বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো, বাবু এই যে আমি তোমায় বুকে আশ্রয় দিলাম। আর কখনও ভয় পাবে নাহ, আমি তোমার কন্ঠ টা শুনার জন্য সাত বছর অপেক্ষা করেছি, নামাজে আল্লাহর কাছে পার্থনা করেছি, জীবনে শুধু একবার আমার বাবুর কন্ঠ শুনার তৌফিক দান করো। আলহামদুলিল্লাহ আজ প্রথম তোমার কন্ঠ শুনলাম। এত বছর প্রতিদিন তোমার বেলী ফুলের মালার সাথে কথা বলেছি। কিন্তু কথার উত্তর পায়নি।

এবার আমি বেলী কে বললাম, এখন থেকে আমরা সব সময়ই কথা বলবো। বেলীর মুখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম আর কাঁন্না নয়। এবার একটু হাসো বেলীফুল আমার নয়নের মণি, হরিণীর ঐ সুন্দর চোখ দিয়ে আমাকে একটু দেখো আমার প্রাণের বেলী!

তারপর বেলী তার সহজাত মায়াবীর মায়া, মমতাময়ী সুন্দর মুখে হাসি ফুটলো, ঠিক যেন বেলীফুলের কলি থেকে সদ্য বেলীফুল ফুটছে বেলীর পূর্ণতা পেলো। আর আমার কলিজাটা শীতলতা অনুভব করলো। শুকরিয়া, খোদার তরে, বেলীর নিস্পাপ সুন্দর হাসিতে আমার অন্তরাত্মা প্রশান্তিতে ভবে গেলো।

বেলীর চোখে চোখ রেখে বললাম, আহহা- কি পবিত্র মুখটা!