বৃহস্পতিবার বি এন পি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন আগামি নির্বাচনটি জাতির জন্য গুরত্বপূর্ন। এই নির্বাচনের উপর জাতির স্বাধীনতা এবং অস্তিত্ব নির্ভর করবে। কেন মির্জা ফখরুল এমন ভয়ঙ্কর সন্দেহ করলেন বলেননি। তবে তার বক্তব্য নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারা দেশের স্বাধীনতা বা অস্তিত্ব হরণ করবে? মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যের দুটি অর্থ হতে পারে (১) বর্তমান ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে দেশের স্বাধীনতা থাকবেনা এবং (২) আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হবে। স্বভাবতই প্রশ্ন কারা সেই অপশক্তিটি?

স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ২৪ বছর এই স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করে জীবন দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। আওয়ামী লীগের দ্বারা স্বাধীনতা বিনষ্ট হবে এমন কথা হিরো আলমও বিশ্বাস করবেনা। কিন্তু স্বাধীনতার সকল অর্জনকে কলঙ্কিত করেছে ৭৫ এর পরবর্তী সরকার। স্বাধীনতার শত্রু রাজাকারদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছে বি এন পি। প্রখ্যাত রাজাকারকে এম পি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এমনকি রাষ্ট্রপতিও বানিয়েছে দলটি। এখন সেই দলের নেতাই যদি স্বাধীনতা আর দেশের অস্তিত্ব নিয়ে সঙ্কা প্রকাশ করেন তাহলে তা ভাবনার তো বটেই, এমন বক্তব্যের উদ্দেশ্যটিও জানা দরকার। কারন বি এন পি ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্রের চার মৌল নীতি বদলে দিয়েছে। জাতীয় সঙ্গীত বদলের অপচেষ্টা করেছে। বাংলাদেশকে পাকিস্তানের আদলে মৌলবাদী রাষ্ট্র বানানোর পায়তারা করেছে। গনতন্ত্রকে হত্যা করে সামরিকতন্ত্র চালিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রেখেছে দীর্ঘদিন। অনেক সংগ্রাম করে সেই সামরিকতন্ত্রকে পরাজিত করে জনগনের রায়ে সরকার গঠন করে গনতন্ত্র পূনরুদ্ধার করা হয়েছে দেশে। সেই গনতান্ত্রিক ধারাকে ব্যবহার করে বি এন পি নিত্য শ্লোগান দিচ্ছে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। এখন তাহলে জানতেই হবে কোন ধারার গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল তার বক্তৃতায় আরও দাবী করেছেন বর্তমান সরকার সবকটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিনীতভাবে মির্জা ফখরুলের কাছে প্রশ্ন কোন প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়েছে বলে তিনি মনে করেন? দেশে রাজাকারতন্ত্র চালু করাই কি গনতন্ত্রের নমুনা? গনমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হউক। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এবং বি এন পি সরকারের পার্থক্যটি পরিস্কার হয়ে যাবে। একজন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য হতে হবে সত্য নির্ভর এবং সঠিক। মির্জা ফখরুলের মত একজন শিক্ষিত নেতাকে হিরো আলম ভাবার কোনই কারন নেই। তাহলে কি মির্জা ফখরুল জেনে শুনেই অসত্য কথা বলছেন?

বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন ঠুনকো ভাবনা নয়, ৩০ লক্ষ মানুষের রক্তের দামে কেনা এই স্বাধীনতা। কোন ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের হুমকিতেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা খর্ব হবেনা। যারা কথায় কথায় দেশের স্বাধীনতা রক্ষার হুমকি দেয় স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের ভুমিকা দেশের মানুষ জানে। ক্ষমতার নেশায় ফখরুলরা অসংলগ্ন কথা বলে মাঠ গরম রাখেন। কিন্তু তাদের আসল উদ্দেশ্যে ভিন্ন। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানূষ স্বাধীনতা রক্ষা করবে যে কোন মূল্যে! বক্তব্য দিতে গিয়ে বেশী উত্তেজিত না হওয়াই সমীচীন হবে।

মির্জা ফখরুল নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করেন। তিনি ভারতে গেছেন শরনার্থী হয়ে কোন যুদ্ধ করেননি। এমন তিন কোটি শরনার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। বি এন পি’র সিনিয়র মন্ত্রী (জিয়া সরকারের) মশিউর রহমান যাদু মিয়া, আব্দুল মান্নান (বি এন পি’র সাবেক মহাসচিব) তারাও ভারতে গিয়ে আবার দেশে ফিরে এসেছেন। এরা যদি মুক্তি যোদ্ধা হয় তাহলে ৩ কোটি শরনার্থী সবাই মুক্তিযোদ্ধা। মির্জা ফখরুলের স্বাধীনতা নিয়ে বক্তব্য দেশের প্রচলিত আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হউক। স্বাধীনতা নিয়ে এই বক্তব্যের অর্থ শুভ নয়!


আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা