তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: চলমান ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটের পাশপাশি বেড়েছে মৌলভীবাজারের নদ-নদীর পানি। ফলে মৌলভীবাজারের ৭টি উপজেলা, বড়লেখা, জুড়ী, সদর, কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ।

রবিবার (১৯ জুন) মৌলভীবাজারের বন্যা কবলিত বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী- কুশিয়ারা নদী ও হাকালুকি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বড়লেখা পৌর এলাকা এবং ১০টি ইউনিয়নের ২০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার। পাশাপাশি পাহাড়ধ্বসে উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের আয়েশাবাগ চা বাগানে একজন নিহত ও সদর ইউনিয়নের কেছরিগুল গ্রামে একজন আহত হয়েছেন। বিদ্যুৎ সাব স্টেশন ইতিমধ্যেই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

কুলাউড়া উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। গ্রামগুলোর সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কুলাউড়া উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নদ-নদীসহ হাকালুকি হাওড়ের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর, ও কুলাউড়া সদর- ৭টি ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া কর্মধা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামের ফানাই নদীর বাঁধ ভেঙ্গে মহিষমারা, বাবনিয়া, হাশিমপুর, ভাতাইয়া, পুরশাই গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। অর্ধশতাধিক গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী  অবস্থায় নিজ নিজ বাসভবনে অবস্থান করছে। গ্রামগুলোর সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

জুড়ী উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে  সৃষ্ট বন্যায় এই উপজেলার ২৮টি গ্রামের প্রায় ১৬ হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এ সকল গ্রামের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়।  এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় ২৪টি পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। এছাড়াও জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর, গোয়ালবাড়ি, পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর ও চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন আংশিক প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার ৫০০জন।

রাজনগর উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে ৪টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার।

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে ৫টি ইউনিয়নের ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় চার হাজার।

কমলগঞ্জ উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পাড় ভেঙ্গে  ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে।