রাজনীতিতে সময় একটা বড় ফ্যাক্টর। সব সময় সব কথা বলা যেমন সঠিক নয় আবার কথাটি বলে তা করতে না পারার ব্যত্যয়টিও বিপজ্জনক। এই জন্য রাজনীতির কথাটি বলতে হয় ভেবে চিন্তে সাবধানে। তা না হলে নেতৃত্বের উপর মানূষের আস্থা থাকেনা। এই সত্যটি দল হিসাবে বি এন পি বার বার প্রমান করেছে। আন্দোলনের ডাক দিয়ে সন্ত্রাস চালিয়েছে, ব্যর্থ হয়ে কোন ঘোষনা না দিয়েই চুপ হয়ে গেছে। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়েও স্থির থাকতে পারেনি। বৃহত্তর মোর্চা গঠন করে নির্বাচনে গিয়ে প্রচারনা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিপক্ষকে সুযোগ করে দিয়েছে বিজয়ী হতে। দু’চারটি আসনে যারা শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল তারা কেউ কেউ জয়ী হয়েছে। হেরে গিয়ে অনেক পর রাতে ভোট হয়েছে বলে প্রচারনায় চালিয়েছে বি এন পি। এই প্রচারনাটি অনেকে গ্রহনও করেছে। কিন্তু কোন প্রমান উপস্থাপন করতে পারেনি কেউ।

এখন নির্বাচনের পদ্ধতি বদল করে নিরপেক্ষ (?) তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবী করছে বি এন পি। এই দাবীটিও গনমুখী করতে পারেনি কারন জনগনের স্বার্থে নয় ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতিটি জনগন গ্রহন করেনি। এই দাবীর পক্ষে জনসমর্থন পায়নি। বিদেশী দুতাবাসে গিয়ে নেতারা নানা রকম মিথ্যাচার করেছে। সরকারের উপর বিদেশী চাপ প্রয়োগ করাতে চেষ্টা চালিয়েছে। সেটিও সফল হয়নি। দুতাবাসের বন্ধুরা বি এন পি’র পক্ষে সমর্থন দেয়নি। তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দিয়ে দলের মধ্যে বিবাদে জড়িয়েছে নেতারা। সেই বিবাদ বিভক্তিতে রূপ নিয়েছে। ১২ বছর দলের কোন সম্মেলন হয়নি। বহু জেলায় পূর্নাঙ্গ কমিটি নেই। মতানৈক্যে কেন্দ্রিয় নেতারাও অনেকে নিষ্কৃয় অথবা দল থেকে বহিষ্কৃত। পরিস্থিতি এখন নির্বাচনের পক্ষে। এখন যদি বি এন পি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষনা দেয় তাহলে ভাল ফল পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার নির্বাচনে না গেলেও অস্থিত্ব সঙ্কটে পরবে দলটি। মা ছেলের মধ্যেও দলের কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধ গনমাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে। তারেকের কারনে অনেক নেতাই দল থেকে সরে রয়েছেন। বি এন পি’র এমন দুরাবস্থা আগে কখনোই ছিল না।

সরকারের অবস্থান অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল অবস্থানে। বি এন পি যতই চিৎকার করুক এখন আর তাদের নতুন করে বক্তব্য দেওয়ার কিছু নেই। তাদের যা বলার বলে দিয়েছে যে রাজনীতি দেখানোর দেখিয়েছে। জনগনও বি এন পি’র কাছে আর কিছু প্রত্যাশা করে মনে হয়না। নির্বাচনই এখন রাজনীতির শেষ কথা। সব দল তাদের অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছে জনগনের কাছে। নির্বাচনেই জনগন তাদের রায় জানিয়ে দিবে কোন দলকে তারা দেশের দায়িত্ব দিতে চায়! বি এন পি ৫ বছর রাস্তায় হুঙ্কার দিয়েছে, সরকার পতনের আন্দোলন করেছে-কিছুই করতে পারেনি। কারন জনগন তাদের সমর্থন করেনি!

বি এন পি’ও একটি বড় দল, তাদেরও জনসমর্থন রয়েছে কিন্তু ভুল নেতৃত্ব দলটিকে এই অবস্থায় এনে দাড় করিয়েছে। যে যতভাবেই বক্তব্য দিক, এবার নির্বাচনের মূল লক্ষ্যটি হবে দেশের উন্নয়ন। সরকার ১৪ বছরে দেশে যে উন্নয়ন করে দেখিয়েছে তা অন্য কোন সময় কোন দল দেখাতে পারেনি। অর্থনৈতিক ভাবেও বাংলাদেশ অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল অবস্থানে। দ্রব্য মূল্য মানূষকে কষ্ট দিচ্ছে কিন্তু অবস্থাটি বিশ্ব জুড়েই। করোনা বা যুদ্ধ বিগ্রহ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারেনি।সরকার খাদ্যশস্য উৎপাদনে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। দেশের উৎপাদন আর রপ্তানী ছিল রেকর্ড পরিমান। বিদেশে মানব সম্পদ রপ্তানীতেও বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য সহ অনেক দেশই দখল করেছে। স্বভাবতই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়িয়েছে রেকর্ড পরিমান। হিসাবটি না করেই যারা রাজনৈতিক বক্তব্য দেন তাদেরকেও জবাবদিহিতার বিচারে মুখোমুখি হতে হবে জনতার। প্রযুক্তির যুগে ভুলতথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার দায়টি নিতে হবে তাদেরও! সরকারের বিরুদ্ধে মিথা বক্তব্য দিয়ে যারা দেশে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে তাদের চেহারাটি জনস্মমুখে খোলাসা করবে প্রযুক্তি।

অনেকেই বলেন দেশের উন্নয়ন ভোটে প্রভাব ফেলবেনা। কথাটি মোটেও সত্য নয়। বাংলাদেশের মানুষ এখন সচেতন আর প্রযুক্তির কারনে অনেক বেশী inforomed। এবার ভোটে জনগন রায় দিবে উন্নয়নের রেকর্ড দেখেই। সব দলেরই আমলনামা জনগনের কাছে পরিস্কার। গরম বক্তৃতা করে ভোট আদায় করা খুব সহজ হবে মনে হয়না। বি এন পি ভুল ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করেছে এবং সব ভুলের মাশুল গুনতে হবে এখন।


আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা।