কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক কাজী এম আনিছুল ইসলামের আবেদনের যোগ্যতার যথাযথ শর্তপূরণ না হওয়ায় যোগদানের পর পদোন্নতি বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলাম আবেদনের সময় যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন করেননি। এছাড়া তার চাকরির তিন বছরও পূর্ণ হয়নি। শিক্ষকদের পদোন্নতির নীতিমালা অনুযায়ী প্রভাষক পদে তিন বছরের সক্রিয় অভিজ্ঞতার পর সহকারী অধ্যাপক পদের পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন হয়। পাশাপাশি যদি কোনো শিক্ষকের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তবে সেই অভিজ্ঞতা সর্বোচ্চ এক বছর বিবেচিত হবে। তবুও তা হবে যদি ওই শিক্ষক আবেদনের সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করে থাকেন। এ নিয়মাবলী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮তম সিন্ডিকেট সভায় নির্ধারণ হয়। কিন্তু বিভাগের সভাপতি ও প্লানিং কমিটি পদোন্নতির সুপারিশ করার আগে সকল শর্ত পূরণ করে কি না তা যাচাই বাছাইয়ের কথা থাকলেও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ও প্লানিং কমিটি ওই শিক্ষকের যোগ্যতার শর্ত পূরণ না হওয়ার পরেও অবেদনপত্রে সুপারিশ করেন।

এছাড়াও রেজিস্ট্রার দফতরে আবেদনপত্র জমা হওয়ার পর আবেদনপত্র যাচাই বাছাই সাপেক্ষে পদোন্নতির সাক্ষাৎকার বোর্ড আয়োজন করার নিয়ম থাকলেও সেটি মানা হয়নি। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বোর্ড করে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরে শিক্ষক আনিছুল ইসলাম যোগদানের জন্য যোগদানপত্রও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর প্রেরণ করেন। তখন শর্তপূরণ না হওয়ার বিষয়টি নজরে এলে এবং বিভিন্ন মহলে বিতর্ক শুরু হলে বিষয়টি সিন্ডিকেটে তুলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদের সমপরিমাণ বেতন পেয়ে আসছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও তার সহকারী অধ্যাপক পদ লেখা হয়।

শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলাম যে বিজ্ঞপ্তি অনুসারে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছিলেন ওই বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, চাকরিরত প্রার্থীদেরকে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীর আবেদনপত্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রার/প্রতিষ্ঠান প্রদান কর্তৃক কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর অগ্রায়িত হতে হবে অথবা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সরবরাহকৃত মূল আবেদন পত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বাক্ষর ও সিলসহ ফরওয়ার্ডেড বা অগ্রায়িত শব্দটি লেখা থাকলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন বলে বিবেচিত হবে। সে হিসেবে তিনি পদোন্নতির জন্য আবেদন করতে পারেন না।

পদোন্নতির আবেদনের সুযোগ না থাকার পর কেনো আবেদন করেছেন, এমন প্রশ্নে শিক্ষক কাজী এম আনিছুল ইসলাম বলেন, আমি আবেদন করতেই পারি এটা যাচাই বাছাই করার দায়িত্ব প্রশাসনের।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি মো: বেলাল হুসাইন বলেন, আমি এসব বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক না।

রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মো: আবু তাহের বলেন, বিভাগের প্লানিং কমিটি যাচাই বাছাই করার কথা। তারা সুপারিশ করেছে। বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি যথাযথ নিয়ম মেনে প্ল্যানিং করেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময় সঠিক পদ্ধতীতে আবেদন করতে হয়। কিন্তু সেখানে এ শিক্ষকের প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন না করায় তা বাতিল হয়েছে।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: শামিমুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮তম সিন্ডিকেটের একটি সিদ্ধান্তু অনুসারে যারা নতুন যোগদান করে তাদের যথাযথভাবে আবেদনের যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে। এখন এটি যারা অনুসরণ করেছে তারা অবশ্যই বেনিফিটেড হয়েছে। যারা এটি অনুসরণ না করে পরে এসে যদি কোনোভাবে কাগজ পত্র সংযোজন করে এ সুবিধা নিতে চায় এটা একজন শিক্ষকের যে নৈতিক দিন রয়েছে সেখান থেকে আমি মনে করি না এইটা সমীচিন হয়েছে।

উপাচার্য ড. এমরান কবির চৌধুরী বলেন, সিন্ডিকেটের যথাযথ ইনস্ট্রাকশন অনুসরণ করা হয়নি তাই এটা বাতিল করা হয়েছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *