২১ শে ফেব্রুয়ারী এখন আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই দিবসটি পালিত হয়েছে। অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধানরাও বানী দিয়েছে গুরত্ব উল্লেখ করে। প্রবাসী বাঙালীরাও প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ দিয়ে সম্মান জানিয়েছে ভাষা শহীদদের। টরন্টোসহ পৃথিবীর বহু শহরেই এখন শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছে। টরন্টোতে কিছু মানুষ পরিশ্রম করেছেন এই শহীদ মিনার নির্মানে। শৈত্য প্রবাহ আর তুষারপাত উপেক্ষা করে টরন্টোবাসী শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারের গেছে। গণমাধ্যম প্রথম প্রহরের এই অনুষ্ঠান প্রচার করেছে। স্থানীয় পত্রিকা গুলি বিশেষ ক্রোড়পত্র ছেপেছে।
এক দিনের এই অনুষ্ঠান ভাষার প্রতি কতটা সম্মানের তা এখন বিশ্লেষনের সময় এসেছে। যে দেশটির জন্ম হয়েছিল ভাষার জন্য সেই ভাষাই এখন সবচেয়ে বেশী অবহেলিত বাংলাদেশে। ফেব্রুয়ারী মাস এলেই ভাষার গুরত্ব নিয়ে আলোচনা হয়। অথচ বিদেশী শিক্ষার উৎসব চলছে সর্বত্র। মহল্লায় মহল্লায় ইংলিশ স্কুলের ছড়াছড়ি। পাঠ্যপুস্তকে দেশীয় কৃষ্টির চিহ্ন নেই। ষষ্ঠ ঋতুর বদলে কোমলমতি শিশুরা এখন বিদশী ঋতুর গল্প পড়ে। হেলোইন আর ক্রিষ্টমাস পালন করে ঘটা করে ৷ বৈশাখী মেলা, ঘুড়ি, মাটির খেলনা আজকের শিশুদের অজানা। সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ নেই ছেলেমেয়েদের। ফালগুন মাসটিও এখন ভেলেনটাইনের মতোই একটি প্রেম দিবস। বিদেশী ভাষা শিক্ষা জরুরী তবে দেশীয় কৃষ্টিকে ভুলে নয়। এ বিষয়ে সরকারের ভূমিকা যথেষ্ঠ নয়। অনুপ্রবেশ ঘটেছে বিদেশী সংস্কৃতির। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল রাষ্ট্র ক্ষমতায়। অনেক উন্নয়ন হয়েছে দেশে। কিন্তু সাংস্কৃতিক অনুপ্রবেশ ঠেকানো না গেলে স্বাধীনতার আদর্শটি রক্ষা করা যাবেনা।
এখন ছেলেমেয়েরা বাঙলা সাহিত্য পড়েনা। ভাষাটিও ভুলে যাচ্ছে। কথা বলে ইংরেজী উচ্চারনে। যে দেশটির জন্ম হয়েছে ভাষার জন্য সেই ভাষা রক্ষায় সরকারের যথেষ্ঠ উদ্যোগ নেই। শিক্ষানীতিটিও দ্বৈত ভাবে সমান্তরাল। বিষয়টি নিয়ে দেশের গুণীজনদের ভাবনার সময় এসেছে। ভাষা ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে না পারলে স্বাধীনতার আদর্শটি ধরে রাখা যাবেনা। সংস্কৃতিক মন্ত্রনালয় ভাষার গুরত্ব নিয়ে যথেষ্ঠ ভুমিকা রাখতে পারেনি। বাংলা একাডেমি বই মেলাতেই আটকে গেছে। বিষয়টি নিয়ে এখন একটি উম্মুক্ত আলোচনা হওয়া জরুরী।
আজিজুর রহমান প্রিন্স, বিশিষ্ট সমাজসেবক, কলামিস্ট, টরন্টো, কানাডা।