আজিজুর রহমান প্রিন্স, ঢাকা, বাংলাদেশঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। একটি জাতিকে সুষ্ঠভাবে গড়ে তুলতে শিক্ষার বিকল্প নেই। যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত সে জাতি তত বেশী সমৃদ্ধ। ঘন বসতির বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যাটি হল সুশিক্ষা। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল জাতিকে শিক্ষিত জাতি হিসাবে গড়ে তোলার। পিতার সেই স্বপ্ন পুরন হয়নি ৫০ বছরেও। প্রতিবছর বাজেট পেশ হয় এবং সর্ব নিম্ন বরাদ্ধ ধরা হয় শিক্ষায়। এখন মাল্টি মিডিয়া শিক্ষা ব্যবস্থ্যায় কুশিক্ষাই বেশী হয়। কোচিং নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় লগ্নি বিধায়ক হয় মেধা শক্তির। দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থাটির করুন দশা। প্রান্তিক জনগোষ্ঠির শিক্ষা লুটপাটের আখড়া।

প্রতিবছর বিনামুল্যে বই দিয়েও প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষার করুন পরিনতি। অথচ দেশের মেধাবীরা গ্রাম থেকেই উঠে এসেছে বেশী। শহরের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলি হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বেঙ্গের ছাতার মত মহল্লায় মহল্লায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলি কোমলমতি শিশুদের মস্তিস্ক বিনষ্ট করছে লেখাপড়ার নামে। বিদেশী বইয়ের পাঠ্যসূচী দিয়ে শিশুদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। খেলাধুলা করারো সুযোগ নেই পড়ার চাপে। ক্লাশ ওয়ান পেরুতে সময় লাগে ৪ বছর। যে অর্থ ব্যয় হয় তা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে যাওয়ার কথা। দেশীয় কৃষ্টি এমনকি বাংলা ভাষাটিও তারা শিখেনা। ষষ্ঠ ঋতুর বাংলাদেশে শিশুরা হেলোইন পালন করে ৬ ঋতুর নাম জানেনা ( যাদের ছেলে মেয়ে ইংলিশ স্কুলে পড়ে, পরীক্ষা করে দেখতে পারেন)। এখন প্রাইভেট স্কুল কলেজ আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বহু। হাসপাতাল আর বিশ্ববিদ্যালয়ে লগ্নি খাটালেই বেশী মুনাফা হয়- শিক্ষা ব্যবস্থ্যায় নিয়ন্ত্রন নেই। উন্নত দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলেও শিক্ষার মান সমান। প্রতিবছর অংক বিজ্ঞান আর ভাষার উপর সব স্কুলের পঞ্চম অষ্টম আর দশম শ্রেনীর পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষাতেই মান নির্নয় হয় কে কতটুকু এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে। শিক্ষার মান নির্নয়ে সরকার নিয়ন্ত্রক হয়।

আমাদের দেশে কিছু মানুষ কথায় কথায় বলেন বাংলাদেশকে অমুক দেশ বানাবেন। সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাটির খবর রাখেন না। ভারতের কেরালা রাজ্যের শিক্ষার মান সবচেয়ে বেশী। শ্রীলঙ্কাতেও শিক্ষার মান ১০০℅ শিক্ষিত। সেই তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার মান ৩০% শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি। অশিক্ষার পাশাপাশি কুশিক্ষাও গ্রাস করেছে বাংলাদেশে। আগে স্কুলের ভাল শিক্ষিকের সুনাম ছিল। এখন টিউটর খুলে বিশেষ সাব্জেক্টে পড়ান তারা। প্রাইভেট পড়তে না পরলে পরীক্ষা দেওয়া যায়না। দশম শ্রেনী থেকেই প্রাইভেট পড়তে হয় স্কুলে যেতে হয়না। পাসপোর্ট বানিয়ে অনেক টাকা ফি দিয়ে বিদেশের সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে হয়। প্রতি সাব্জেক্টের ফি সাধারন মানুষের সমর্থের আওতায় নয়। স্কুলত কেবল পড়া শিখায়না, স্কুল মানুষ হওয়ার নিয়ম শিক্ষা দেয়। প্রাইভেট পড়েই যদি শিক্ষিত হওয়া যায় তহলে স্কুলের কি প্রয়োজন? ভার্চুয়াল ক্লাশ করে পড়া মুখস্থ করলেইত হয়ে যায়! আসলে শিক্ষা শুধু পুস্তক মূখস্থ করা না। শিক্ষা জীবন গড়ার পুর্নাঙ্গ ব্যবস্থা। বিষয়টি দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে এবং সরকারকে ভাবতে হবে। অর্থ উৎপাদন নয় সত্যিকার শিক্ষিত জাতি গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। আমরা একটি শিক্ষিত জাতি হতে চাই।

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *