সিএনবিডি ডেস্কঃ ডিজেলের দাম বাড়ায় ডিজেল চালিত বাস মালিকদের কথা ভেবে সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণ বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু সরকারী প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাত্রীদের থেকে ৫০ শতাংশ ভাড়া বা তার চেয়ে বেশী ভাড়া আদায় করছে বিভিন্ন গণপরিবহণ। সিএনজিচালিত বাসের ভাড়া না বাড়লেও অনেক সিএনজিচালিত পরিবহন নতুন বর্ধিত ভাড়া আদায় করছে। এ নিয়ে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এখন থেকে দূরপাল্লার বাসে এক টাকা ৪২ পয়সার পরিবর্তে প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৮০ পয়সা ভাড়া নেওয়া হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এক টাকা ৭০ পয়সার বদলে ভাড়া নেওয়া হবে দুই টাকা ১৫ পয়সা। মহানগরে চলা মিনিবাসের ভাড়া এক টাকা ৬০ পয়সার জায়গায় দুই টাকা পাঁচ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই হিসাবে দূরপাল্লার ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে বাসের ভাড়া বাড়ল ২৭ শতাংশ আর মহানগরে ২৬.৫ শতাংশ।

আগে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ৭ টাকা। যা এখন করা হয়েছে ১০ টাকা। মানে বাসে উঠলেই ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। আর মিনিবাসের এই ভাড়া ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে।

বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে ৫ হাজার বাসের মধ্যে মাত্র ২০০টি বাস সিএনজিতে চলছে এবং সমিতির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সেসব গাড়িচালকদের বর্ধিত ভাড়া আদায় না করতে বলা হয়েছে। আজ আমরা সব সদস্যদের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করার জন্য কঠোর ভাষায় একটি চিঠি দিয়েছি।

তিনি আরো জানান, গতকাল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ভ্রাম্যমাণ আদালত ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ২২০টি বাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে অন্তত ৬৭টি বাস আটক করে। ২২০টি বাসের মধ্যে ২৯টি সিএনজিচালিত বাস এবং ৩৮টি ডিজেলচালিত বাস যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছিল। যাদের জরিমানার আওতায় আনা হয়।

এদিকে ডিএমপি ও সিএমপি পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, পরিবহন ভাড়া নিয়ে অনিয়ম খতিয়ে দেখতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, ২০১৩ সালের পর আর বাসের ভাড়া বাড়েনি। অথচ এর মধ্যে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। এখন আবার জ্বালানি তেলের দামও বাড়ল। ডিজেলের বর্ধিত মূল্য বিবেচনা করলে ভাড়া খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। তবে বেশী ভাড়া আদায়ের ব্যাপারটা খতিতে দেখা হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার গণশুনানি ছাড়া অবৈধভাবে একলাফে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। এই অজুহাতে পরিবহন ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করেন বাসের মালিকরা। যখন গ্যাসের দাম বাড়ে, তখন বাস মালিকরা বলেন, সব বাস গ্যাসে চলে। আর এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস মালিকরা বলছেন, সব বাস ডিজেলে চলে। কোনোভাবেই ১৫ শতাংশের বেশি ভাড়া বাড়ানোর কথা না। যখন ডিজেলের দাম লিটারে ৩ টাকা কমানো হয়েছিল, তখন ভাড়াও প্রতি কিলোমিটারে ৩ পয়সা কমানো হয়। এখন তাহলে কেন এত ভাড়া বাড়বে।

অপরদিকে, লঞ্চেরও সর্বনিম্ন ভাড়া ৩৫% বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ৬০ পয়সা। বর্তমান ভাড়া এক টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দুই টাকা ৩০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রযোজ্য হবে। ১০০ কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হবে দুই টাকা। সর্বনিম্ন যাত্রীপ্রতি ভাড়া ছিল ১৮ টাকা। সেটি বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু এখানেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।

ডিজিটাল বাংলা নিউজ/ ডিআর /এমআরবি

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *