নাছির উদ্দিন, হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধিঃ কুমিল্লার হোমনা উপজেলার  এক সময়ের খরস্রোতা  কলাতিয়া নদী খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মরা খালে পরিনত হয়েছে।   সংকুচিত হয়ে পড়ছে পানির প্রবাহ। হুমকির মুখে পড়ছে, জীববৈচিত্র ও  বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ।
স্থানীয়রা জানায়, কলাতিয়া নদী ছিল এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার মাধ্যম। কৃষি কাজে পানি সেচ ছাড়া ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত জেলে সম্প্রদায়।
জানাগেছে, কুমিল্লা জেলার ৫ নং সীটের হোমনা উপজেলার শ্রীপতির চর মৌজার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা কলাতিয়া নদীটি মেঘনা নদী হয়ে দুই চরের মধ্যদিয়ে রাধানগর এলাকায় হাভাতিয়া নদীতে পড়েছে। কিন্ত বর্তমানে নদীটি শুকিয়ে গেছে। অনেক স্থানে নদীর চিহ্ন পর্যন্ত হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মেঘনার শাখা নদীটি হোমনার জন্য আশীর্বাদ এলেও এখন তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পলি জমে নদী ভরাট হয়ে চরে পরিনত হওয়ায় তা দখলের প্রতিযোগীতা চলছে।
জানাগেছে, কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তেনের লক্ষে নদী ও খাল পুন: খনন কর্মসূচী পালন করছে সরকার। বাংলাদেশ কৃষি  উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসি, জেলা প্রশাসন ও বিএডব্লিওটিএ  এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাল ও নদী খনন করা হলেও কলাতিয়া নদীটি খনন করা হবে, সচল করা হবে পানির প্রবাহ—এ ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে । কিন্ত রহস্যজনক কারনে তা বাস্তবে কিছুই হয়নি। এতে  মেয়রসহ নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের উদাসিনতাকে দায়ী করছেন এলাকাবাসি। তাদের অভিযোগ এক সময় এ নদীর পানি দিয়েই কৃষকেরা দুই পাড়ের শত শত হেক্টর জমিতে  ফসল ফলাতো। সেই খরস্রোতা নদী এখন চরে রূপ নিয়েছে। নদীটি ছিল ছোট-বড় নানা প্রজাতির মাছের অফুরন্ত উৎস। মাছও পাওয়া যেত সারা বছর। জেলেরা ডিঙ্গি ও ছোট নৌকা দিয়ে দিন রাত মাছ ধরতো। সেই মাছ বিক্রি করে জেলেরা সংসার চালাতো। সময়ের ব্যবধানে সেই ভরা যৌবনা নদীটি পরিণত হয়েছে মরা খালে।
গত শুক্রবার সরেজমিনে গেলে লটিয়া গ্রামের লোকজন জানান,  এ নদীর প্রবাহ এক দিনে বন্ধ হয়নি। পূর্বথেকে এ নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলে এটি চরে পরিণত হতো না। এ নদীর প্রভাবে গোয়ারীভাঙ্গা-লটিয়ার খাল ভূমি খেকোদের দখলে চলে গেছে। খালের মুখ বন্ধ হওয়ায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলী জমি।
এ বিষয়ে ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সোবাহান জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের আন্তরিকতার অভাবে একশ্রেণির দখলবাজরা নদী দখল করে ফেলেছেন।
হোমনা পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম জানান, পূর্বে নদীটি খননেরর উদ্যোগ নেয়া হয়নি। নদীটি খনন করা না হলে এক সময় নদীটি মানচিত্র থেকেই বিলীন হয়ে যাবে। প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে কলাতিয়া নদীকে প্রবহমান রাখতে পরিকল্পিতভাবে খননসহ যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমন দে জানান, মাননীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে উপজেলার ছোট নদী ও খাল খননের কাজ চলছে।  দ্বিতীয় পর্যায়ে এ নদীটি খননের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলেই নদী খননের কাজ শুরু করা হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *