ঈশাত জামান মুন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি : স্বাধীনতার এত বছর পরেও বাঙ্গালী জাতির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর নির্যাতনের খবর নতুন নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই নানা আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায়।

জেলার হাতীবান্ধায় মুক্তিযোদ্ধার ছেলের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ তুলে আকবর আলী ধনী নামে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান মহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এর আগেও চেয়ারম্যানের ওই বাড়িতে এক যুবককে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতনের পর ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছিলো চেয়ারম্যান এর ছোট ভাই ও তার ছেলের বিরুদ্ধে যেটা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্থানীয় মাতব্বরা বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত শনিবার ৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা বাদী হয়ে রাতে চেয়ারম্যানের নাম উল্লেখ করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনী। শনিবার সকালে হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের জাওরানী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনী উত্তর জাওরানী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। অভিযুক্ত মহির উদ্দিন ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনী (বামে) এবং অভিযুক্ত মহির উদ্দিন ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ডানে)

নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধার ছেলের বিরুদ্ধে গরু চুরির অভিযোগ তুলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনীকে নিজ বাড়ি থেকে চৌকিদার ও চেয়ারম্যান তার বাসায় তুলে নিয়ে যায়। এরপর চেয়ারম্যান ও চৌকিদার ওই মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি হলে মুক্তিযোদ্ধার হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রতক্ষ্যদর্শিরা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনীকে চেয়ারের সাথে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে। পরে লোকজন ভিড় করলে তার হাতের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়।

স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের সামনে নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ধনী। এ সময় তিনি বলেন,আজকে এই দিন দেখার জন্য কি জীবন বাজী রেখে পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম? আজকে চেয়ারম্যান ও চৌকিদার জোরপূর্বক আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখে। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে থাকি,কি বা করার ছিলো আমার,আমি এর সঠিক বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয়ে ভেলাগুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন বলেন, মুক্তিযোদ্ধাকে কোন মারধর করা হয়নি। তার ছেলে গরু চোর সেজন্য তাকে ডেকে বিচারের কথা বলা হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাকে চেয়ারের সাথে বেধে রাখার বিষয় এবং তিনি একজন আওয়ামীলীগ কর্মী ও নৌকা মার্কায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়ে কিভাবে এরকম জঘন্য কলঙ্কজনক কাজ করলেন সেগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে তার উত্তরে তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একটি মহল এসব বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

ঘটনার বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন,আজ রোববার সকালে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিলো। তিনি আরো বলেন বিষয়টি বাঙ্গালী জাতি হিসাবে আমাদের জন্য কলঙ্কজনক সেহেতু গভীর তদন্ত শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা মোবাইল ফোনে বলেন,ঘটনাটি ওসির মুখে শুনেছি। তদন্ত চলমান রয়েছে। ঘটনা ঘটার এবং অভিযোগের ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার পরেও অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন তদন্ত চলমান রয়েছে,তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

গতকাল রোবার সন্ধা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তদন্ত শেষে হয়নি এবং কোন ব্যবস্থা নেননি অভিযোগের প্রায় ২৪ ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখনো তদন্ত চলছে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *