নেত্রকোনা প্রতিনিধিঃ কোনরকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের কার্যক্রম। চলতি বছর শুরু থেকে থেকে হাসপাতালটির সেবার মান অচলাবস্থা দেখা দিলেও শূন্য পদ পূরণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসনের কেউ।

এদিকে প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কেন্দুয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে ১১ জন। মঞ্জুরিকৃত পদগুলো হলো প্রাণিসম্পাদ কর্মকর্তা ০১ জন, ভেটেরিনারি সার্জন ০১ জন, এসএএল প্রশাসন ০১জন, এসএএল সম্প্রসারণ ৩ জন, এসএএল প্রাণিস্বাস্থ্য ০১ জন, এসএএল উৎপাদন ০১জন, অফিস সহকারি ০১জন,ড্রেসার ০১ জন, অফিস সহায়ক ০১ জন। এরমধ্যে কর্মরত রয়েছেন লাইফস্টক এসিস্ট্যান্ড (কম্পাউন্ডার) ও ড্রেসআর কর্মরত আছেন। ১১ পদের মধ্যে ৯ টি পদ শূণ্য থাকায় কেন্দুয়া পশু হাসপাতালটি এখন নিজেই অসুস্থ।

জেলার সর্ববৃহৎ কেন্দুয়া উপজেলা কেন্দুয়া। পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নে কয়েকশতাধিক পশু-পাখি,হাঁস ও বয়লার খামার রয়েছে। তাছাড়াও কৃষি নির্ভর এলাকা থাকায় প্রতিট ঘরে ঘরে রয়েছে গৃহপালিত পশু হাস-মুগরী। এসব খামারে কর্ম করে হাজারো মানুষের জীবিকা করে থাকেন। এই বিশাল জনগোষ্ঠী এলাকায় ৩ মাস ধরে নেই কোন পশু চিকিৎসক। প্রতিদিন কৃষক ও খামারীরা তাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত পুশু নিয়ে হাসপাতালে এসে বিনা চিকিৎসায় ফিরে যেতে হয়। প্রতিদিন ৩৫/৪০ টি গরুকে প্রজনন বীজ দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও অসংখ্য সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে ওই হাসপাতালটিতে।

এদিকে বর্তমানে হাসপাতালের কর্মরত ওই দুই জন কর্মচারী ও অবসরে চলে যাওয়া উপসহকারি প্রজনন একজনকে দিয়ে জোড়াতালির মাধ্যমে সামলানো হচ্ছে দপ্তরের যাবতীয় কার্যক্রম। অন্যদিকে পশু চিকিৎসক-সংকটে গ্রামের মানুষ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কৃত্রিম প্রজননে প্রশিক্ষণ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবীদের কাছ থেকে গবাদিপশুর চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে অনেক কৃষকই গবাদিপশুর সুষম চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কিন্তু টাকার অপচয় ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিকই।

অবসরে চলে যাওয়া উপসহকারি প্রজনন লুৎফর রহমান জানান, কয়েক মাস আগে তিনি অবসরে গেছেন হাসপাতালটি অচলাবস্থা দেখে মাঝে মধ্যে সময় দেন। প্রতিদিন অন্তত: ৩৫/৪০ টি গরুকে বীজ দেয়ার কৃষকেরা হাসপাতাল আসে। এখন আর আগের মত কাজ করতে পারিনা। পরিশ্রম লাগে। হাসপাতাল লোক না থায় কষ্ট হলেও আসি। বেজগাও গ্রামের ইদ্রিস মিয়া জানান,তার অসুস্থ গরুটি নিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা আগে হাসপাতাল আসছিলেন কিন্তু চিকিৎসা না পেয়ে অবশেষ বাড়ি ফিরে যান।

মোজাফরপুর ইউনিয়নে মিজানুর রহমান ভূঁইয়া জানান, তাঁর একটি ছোট-খাটো গরুর খামার রয়েছে। প্রায়ই গরু গুলোর অসুস্থ হলে অন্য উপজেলা গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়। হাসপাতাল চিকিৎসকসহ অন্যান্য পদ শূণ্য থাকায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বিষয়টি স্থানীয় এমপি অসীম কুমার উকিল ও উর্ধতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ইউনিয়ন প্রজনন স্বেচ্ছাসেবীরা বলেন,গবাদি পশু প্রজনন কাজে অনেক সময় সমস্য দেখা দেয় তখন আমরা খুব বেকায়দা পড়ি। বড় উপজেলা হিসেবে গবাদি পশুসহ বয়লার খামার সংখ্যা অন্য উপজেলা বেশি। হাসপাতালে চিকিৎসক পদ শূন্য থাকায় খামারী ও সাধারণ কৃষকেরা মারাত্মক ক্ষতি মধ্যে আছেন। বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামানা করেন তিনি।

এ ব্যাপারে কেন্দুয়া পশু হাসপাতালের দ্বায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রিজভী আহমেদ বলেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগে নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। আমরা লোকবল নিয়োগের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কিছুই করার নেই। নতুন লোকবল নিয়োগ হলে এই সমস্যা থাকতো না।