অর্থনীতি ডেস্কঃ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা ছেড়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করতে যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। বাংলাদেশের জন্য এ এক গৌরবময় অর্জন। গত তিন বছরের নানা পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ শেষে অবশেষে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশের উত্তরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) বাংলাদেশকে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে।

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (ইউএন-সিডিপি) ত্রিবার্ষিক সভায় উন্নয়নশীল দেশে তালিকাভুক্ত করতে চূড়ান্ত সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এছাড়া করোনা মহামারীর কারণ দেখিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ তিন বছরের প্রস্তুতিমূলক সময়সীমা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করার জন্য গত জানুয়ারিতে যে প্রস্তাব দিয়েছিল সেটিও গ্রহণ করেছে জাতিসংঘ। অর্থাৎ প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশ আরও দুই বছর বাড়তি সুবিধা পাবে। ফলে আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে আর কোনো বাধাই নেই।

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সাধারণত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের ভিত্তিতে কোনো দেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ করে থাকে। আর  বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল, ভুটান ও লাওস চূড়ান্তভাবে এলডিসি থেকে বের হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ এখন যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, ওষুধ খাতে সুবিধা, মেধাস্বত্ব সুবিধাসহ অন্য যেসব সুবিধা পাচ্ছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে নিজস্ব পলিসির উন্নয়ন ঘটিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ, ক্রেডিটরেটিংয়ে উন্নয়ন, বিশ্বদরবারে মর্যাদা বৃদ্ধিসহ নানা সুবিধাও পাওয়া যাবে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করলে।

উল্লেখ্য, উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে সিডিপি তিনটি সূচক মানের বিশ্লেষণ করে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য সুপারিশ করে। সেগুলো হচ্ছে-মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। আর ২০১৮ সালেই বাংলাদেশ তিনটি সূচকে প্রয়োজনীয় মান অর্জন করে এ সুপারিশ প্রাপ্ত হয়।

তিনটি সূচক মানের হিসেবে গড় মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার। আর গত বছর শেষে বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১,৮২৭ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা তার বেশি স্কোর থাকতে হবে। এই ক্ষেত্রে ২০২০ সাল শেষে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৩ যা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পয়েন্ট। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ বা তার কম স্কোর থাকতে হবে। এখানেও বাংলাদেশের স্কোর ২৭ দশমিক ৩। তিনটি সূচকেই প্রয়োজনীয় স্কোর তুলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রস্তুতির এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তা ছাড়া বর্তমান নিয়মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের পর আরো তিন বছর অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

এক সময়কার তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে বিবেচিত বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর মধ্যে একটি দেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে  ‘ইমার্জিং টাইগার’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে এখন বাংলাদেশকে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *