রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নে দুস্থ ও অসহায় মহিলাদের নাম না দিয়ে ভিজিডি কার্ডের চুড়ান্ত তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার ভূক্তভোগি আলেয়া বেগম ইউএনও বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করে ইউনিয়ন পরিষদের যাচাই বাছাই কমিটি ভিজিডি কার্ড স্বজনপ্রীতি ও অর্থের  বিনিময়ে চূড়ান্ত করেছে বলে  অভিযোগ পাওয়া গেছে ।

বলিদ্বারা হঠাৎপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জমিরুলের ইশারাতেই ইউপি সদস্য আলমগীরসহ অনেকেই ভিজিডি কার্ড দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়েছে।  হঠাৎপাড়া গ্রামের এক পুত্রবধু কাঞ্চন আক্তার কে শ্বশুরের স্ত্রী হিসেবে ভিজিডির চুড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার তথ্য পাওয়া গেছে। ঐ গ্রামের মেঘমালা ও কাঞ্চন আক্তার  টাকা পয়সা নেওয়ার অভিযোগ করেন।

বগুড়া পাড়ার অহেদূর রহমানের স্ত্রী রুবি খাতুনের”র তালিকায় নাম দেখে বলেন আমরা ভিজিডির ব্যাপারে কিছুই জানিনা। অহেদুর রহমান ও তার স্ত্রী জানান সংশ্লিষ্ট ইউপি পরিষদ সদস্য আলমগীর তাদের ভোটার আইডি কার্ড করোনা কালে আর্থিক সহযোগিতা করার নামে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সে সময়ে কোন রকমের সহযোগিতা পাননি । তাঁরা ধারণা করেন উক্ত কার্ডটিকে ব্যবহার করে ভিজিডি তালিকার কাজে লাগিয়ে সদস্য আলমগীর নিজে আত্মসাতের জন্য নাম দিয়েছেন।

এ বিষয়ে আলমগীরের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও দেখা গেছে যাদের বাড়ি-ঘর আধা পাকা ও জায়গা জমি ২ বিঘা থেকে ৯ বিঘা পর্যন্ত রয়েছে তাঁদের নামও চূড়ান্ত তালিকায় রয়েছে ।

সাত ঘরিয়া সন্ধ্যারই গ্রামের নজিবুলের স্ত্রী সুরাইয়া বেগমের চাষ যোগ্য ২ বিঘা জমি ও আধা পাকা ঘর, জওগাঁও গ্রামের আজিমুল হকের স্ত্রী সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আক্তারা বানু জমির পরিমান প্রায় ৩ একর, বাড়ি আধা পাকা, বাসেদ আলীর স্ত্রী আনজু বেগম  জমির পরিমান প্রায় ২ একর বাড়ি আধা পাকা, ফেলকুর স্ত্রী আকলেমা খাতুন জমির পরিমান প্রায় দেড় একর বাড়ি আধা পাকা থাকা সত্বেও তাদেরর নাম চুড়ান্ত তালিকায় দেখা যায়।

একই ভাবে রামপুর বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী জয়নুল আবেদিনের স্ত্রী মাসুদা পারভীনের  প্রায় ৩ বিঘা জমি রয়েছেে। একই গ্রামের বিউটি আক্তারের  প্রায় ৪ বিঘা জমি ও পাকা ঘর রয়েছে।

এভাবে জওগাঁও গ্রামে চেয়ারম্যান জমিরুলের নিজ স্বজনদের মাঝে ভিজিডি কার্ডের বেশির ভাগ তালিকায় নাম পাওয়া গেছে। পুরো ইউনিয়নের মধ্যে শুধুমাত্র জওগাঁও গ্রামেই চূড়ান্ত তালিকায় ৫০ জনের নাম রয়েছে।

সরকারি নীতি মালার তোয়াক্কা না করে চেয়ারম্যান জমিরুল ও সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি ও বিএনপি দলীয় লোকদের সুবিধা দিয়ে তালিকা করেছেন বলেও ইউনিয়ন জুড়ে অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ি, মূলত দূস্থ, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীরাই হবেন  ভিজিডি’র উপকারভোগী।

নীতিমালায় আরো উল্লেখ আছে যে, প্রকৃত অর্থে ভূমিহীন ,বসত ভিটা নেই, বা চাষ যোগ্য ১৫ শতাংশের বেশি জমি নেই তারাই ভিজিডি কার্ড পাবেন ।

এ বিষয়ে নন্দুয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবু সুলতান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান জমিরুল বিভিন্ন কৌশলে টাকা পয়সার বিনিময়ে ভিজিডি তালিকা প্রণয়ন করেছেন এ কথা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি।

এ বিষয়ে মুঠো ফোনে চেয়ারম্যান জমিরুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এ ব্যাপারে ইউএনও সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, ইতোমধ্যে আমি  একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *