বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্ন হবে এ বছরেই। তার পরেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। খুব বেশি সময় বাকি নেই। ইতিমধ্যেই নির্বাচনী গল্প শুরু হয়ে গেছে। সবারই ভাবনা কেমন হবে আগামী নির্বাচনটি এবং কোন দল সরকার গঠন করবে। যে যত ভাবেই ভাবুক বর্তমানে কোন বিরোধী দল বাংলাদেশে সরকার গঠন করার মত অবস্থানে রয়েছে মনে হয় না। আবার একই দল বার বার ক্ষমতায় থাকাও সঠিক নয়। একই দল বার বার সরকারে গেলে পার্থক্যটি বোঝা যায় না। সুযোগটি অবশ্য বিরোধী দলই করে দিয়েছে। ১৫ বছর ধরে বি এন পি ব্যর্থ রাজনীতি করে আন্দোলন জমাতে পারেনি। বরং সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল করেছে। নির্বাচন বর্জন করায় সংসদের প্রতিনিধিত্বটিও নেই তাদের। এবার ৭ জন সাংসদ ভালোই সবাক ছিল কিন্তু, কোন পরিকল্পনায় কার পরামর্শে পদত্যগ করেছে তা বোধগম্য হয়নি। সরকার পতনের ডাক দিলেও বি এন পি তাদের লক্ষ্যে পৌছাতে পারেনি। কারন জনগনের সম্পৃক্ততা ছিলনা। যারা আন্দোলনে নেমেছে তারা দলের কর্মী এবং কিছু ভাড়া করা দিনমজুর। ফলে দাবীটি জোরদার হয়নি সফলতাও আসেনি। এ নিয়ে দলের অভ্যান্তরে প্রশ্নের মুখে পরেছে নেতারা।

সরকারের বিরুদ্ধে জনমনে অনেক অভিযোগ রয়েছে কিন্তু, বি এন পি সে সব ইস্যুকে দাবী আকারে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই জনগন সারা দেয়নি। এই আন্দোলনে বি এন পি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার দাবী উত্থাপন করেছে। সরকার তাদেরকে সুযোগই দেয়নি আন্দোলন জমাতে। সরকার প্রতিপক্ষকে ঠেকাতে তাদের কৌশল ব্যবহার করবেই। কিন্তু বি এন পি সেই কৌশলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছে। বি এন পি’র দাবী ছিল তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ (তাদের মত) নির্বাচন অনুষ্ঠানের। আন্দোলন দুর্বল হওয়ায় সরকার তাদেরকে পাত্তাই দেয়নি। দলটি এখন যেকোন ভাবেই হউক ক্ষমতার যেতে চায়। কিন্তু জনগন তাদেরকে কেন ভোট দিবে- নির্বাচিত করবে? বি এন পি’ সরকারের দু:শাসন জনগন ভুলেনি তা বি এন পি’র নেতারাও জানে। সেই জন্যই অবস্থা অনুমান করে বি এন পি এখন বিদেশীদের সাহায্য চাইছে। জনগন ছেড়ে বিদেশী দুতাবাসে দৌড় ঝাপ শুরু করছে।

অন্যদিকে জাপা সরকারের সঙ্গে জোট করে তাদের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিকরে ফেলেছে। আগামী নির্বাচনে বি এন পি’র অনেক নেতা লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে যাবে যদি দল নির্বাচন বর্জন করে। সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনটি ধরে রাখবে এবারও। বি এন পি’কে চাপে রাখতে সরকারও জাপা’ কে সুযোগ করে দিবে নির্বাচনে। তাই নির্বাচন বর্জন করলে বি এন পি দল ভেঙ্গে যাবে তাই, দলে চাপ রয়েছে নির্বাচনে যাওয়ার। কিন্তু কি নিয়ে বি এন পি জনগনের কাছে ভোট চাইতে যাবে? সরকার কোথায় কি ভুল করেছে জনগন তা জানে। এসব অভিযোগে সরকারী দলের নেতারাও নিরাপদে নেই। কিন্তু শুধু সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেই ভোট পাওয়া যাবে না। সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী দেখাতে হবে জনগনকে। বি এন পি’র নেতাদের কাছে সেই কর্মসূচী নেই।

দলের নেতৃত্ব নিয়েও দ্বন্দ্ব পরিস্কার। কোন সিদ্ধান্তেই একমত হতে পারছে না নেতারা। খালেদাপন্থী এবং তারেকপন্থীর বিভাজন দলকে দুর্বল করেছে। মহাসচীব ফখরুল এখন দলে কোন ঠাসা। দলের এমন অবস্থা নিয়ে নির্বাচনে যাওয়া বা ক্ষমতার স্বপ্ন দেখা আত্নঘাতি হবে। তাই বি এন পি বিদেশী বন্ধুদের দুতালীতে সরকারকে দুর্বল করতে চায়। অনেকের মতে বি এন পি’র এই সিদ্ধান্তটিও ভুল। কারন নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার অন্য কোন উপায় নেই। অবস্থা এখন এমন হয়েছে যে, কট্টর বি এন পি পন্থী নীতিনির্ধারক এবং সমর্থকরাও দলের নীতির সঙ্গে একমত হতে পারছে না। দেশের উন্নয়ন এতটাই বাস্তব যে তা অস্বীকার করার উপায় নেই কারোই। বি এন পি’র সমর্থকরাও সরকারের প্রশংসা করছে।

দীর্ঘদিন সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা, এম পি, মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। অনেক নেতা পুনরায় নির্বাচন করলে দলের বিপর্যয় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারন শুধু উন্নয়নই ভোট নিশ্চিত করেনা। এলাকাবাসি এম পি মন্ত্রীদের কাছে ভাল সম্পর্কটিও প্রত্যাশা করে। সেই বিবেচনায় সরকারী দলের সবাই নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে ভাবা যাবে না। তবে সরকার যে সাফল্য দেখিয়েছে তা নিয়ে ভিন্নমত পোষন করেনা কেউ। কৃতিত্বটিও দেয় শুধু শেখ হাসিনাকে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ শেখ হাসিনাকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চায়। বি এন পি’তে শেখ হাসিনার মত একজন নেতা নেই। শুধু বি এন পি নয় আওয়ামী লীগের মধ্যেও শেখ হাসিনা পরবর্তী নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি। এমন সব বিবেচনায় পরিস্কার করেই বলা যায় আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। বি এন পি’র উচিৎ হবে সরকার পতনের আন্দোলন বাদ দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া। না হয় আম ছালা দুটোই যাবে বি এন পি’র। বি এন পি নির্বাচনে অংশ নিলে গনতন্ত্রের জন্য এবং দেশের জন্য মঙ্গল হবে।


আজিজুর রহমান প্রিন্স, কলামিস্ট ও আওয়ামীলীগ নেতা, টরন্টো, কানাডা


আরও পড়ুন:


ডিবিএন/এসডিআর/মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান