ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এবং অন্যতম প্রধান শহর। শহরের ব্যপ্তি এখন ছড়িয়ে গেছে বহুদুর। চারিদিকে নদী বেষ্টিত এমন শহর পৃথীবিতে খুব বেশী আছে জানা নেই ( না থাকারই কথা)। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু আর শীতলক্ষা চারটি নদী রয়েছে ঢাকাকে ঘিরে। সবগুলি নদী এখন অস্থিত্ব সঙ্কটে। নর্দমায় পরিনত হয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গার নির্মল পরিবেশ আর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে নবাব পরিবার নির্মান করেছিল নবাব বাড়ীটি। কালের বিবর্তনে সেই সব সৌন্দর্য এখন ইতিহাসের পাতায় বন্দি। নবাব বাড়ীটি ঢাকা পরে গেছে বানিজ্য প্রসারে। সদরঘাট টার্মিনাল ছাড়া নদীর সীমনা প্রায় সবটাই দখল হয়ে গেছে। সঙ্কুচিত হয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা। অগভীর পানি আর আবর্জনায় বুড়িগঙ্গা এখন পচা নর্দমা। আগে এই নদীর পানি বিতরন হত ঢাকায়। তুরাগ বালু আর শীতলক্ষাও এখন অস্তিত্বহীন। ধলেশ্বরী নদীর মূখটুকু খালী আছে ঢাকা ঢোকার গেট হিসাবে। তবে সেটিও চর পরে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে পশ্চিমে। ময়লা আবর্জনা সব নিক্ষিপ্ত হয় নদীতেই। গভীর নলকুপ থেকে পানি তুলে বিতরন করতে হয় ঢাকা বাসীকে।
নদীপথেই যোগাযোগ ছিল সহজলভ্য। প্রথমে গয়না নৌকা পরে লঞ্চ ষ্টিমার চলাচল শুরু হয় নদী পথে। লঞ্চের পোড়া তেল আর উচ্ছিষ্ঠ নিক্ষেপ করে পানি দূষণ শুরু হয়। শহরের সব ড্রেনেজ নিক্ষিপ্ত হয় নদীতে। অসম্ভব বিষাক্ত আবর্জনাও নদীতে ফেলে আস্বস্থ্য হয় শহরবাসী। আধুনিক যুগে নদীকে এমন অবহেলা কোনভাবেই মানা যায়না। সিঙ্গাপুরের পানিতে কলার খোসা ফেলার জরিমানা গুনতে হয়। বাংলাদেশে পানিতেই আবর্জনা ফেলে সব। দুটি দেশের ভাবনা আর নিয়ন্ত্রনের বৈপরিত্বই বলে দেয় আমরা কতটা সভ্য। মিঠা পানির সংরক্ষন সমগ্র পৃথীবিতেই এখন দুর্লভ। সর্বাধিক মিঠা পানির সংরক্ষন রয়েছে বাংলাদেশে। মিঠা পানির মাছ গুরুত্বপুর্ন রাজস্ব খাত হতে পারে নদী সম্পদ। কিন্তু যথাযথ ব্যবহার না হলে দেশের এই রাজস্ব খাতটিও ব্যহত হবে। ঢলে কাঁদা পানি এসে প্রতিবছর পলিমাটি দিয়ে ভরাট হয়ে যায় নদী। নদী খনন ব্যয়বহুল এবং প্রতিবছর হতে হবে। কিন্তু দেশের উন্নয়নে পদ্মা সেতু নির্মানের চেয়ে নদী খনন কম গুরত্বপুর্ন নয়। রাজস্ব উৎপাদন হবে নদীতেই বেশী। ঢাকার চারপাশের নদী গুলি সংস্কার করে পুর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা গেলে ঢাকা যেমন দৃষ্টি নন্দন হবে,পর্যটকদের বিনোদনেরও আকর্ষন হবে। দুই পাশে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান লগ্নি খাটিয়ে নিয়োগ দিবে অসংখ্য মানুষকে। বেকারত্ব দু্রীভূত হবে দেশে। মৎস শিল্প উৎসাহিত হবে নদী গর্ভে। বর্তমান সরকার দেশে অভাবনিয় অবোকাঠামো নির্মান করেছে। দেশের উন্নয়ন করেছে অকল্পনীয়। এই সরকারই পারবে নদীগুলি সংস্কার করে ঢাকা এবং নারায়নগঞ্জের পুরানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে। ঢাকা নারায়নগঞ্জের নদীগুলির প্রতি সরকার নজর দিবে আশাকরি।
আজিজুর রহমান প্রিন্স,
কলামিস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।