বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই বাসে চলাচল করে। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ ভিন্ন যানেও চড়ে। রিক্সা, সি এন জি’র সংখ্যাটি বৃদ্ধি পাচ্ছে বাসের অব্যবস্থাপনার কারনেই। বাস সার্ভিসের সংস্কার নিয়ে একটি ভাবনা করা যেতে পারে। উন্নত দেশের মত সরকার চালিত বাস সার্ভিস হলে অবস্থাটির পরিবর্তন আশা করা যায়। পরিচালনায় থাকবে সিটি কর্পোরেশন। নিয়ন্ত্রন করবে শহরের মিউনিসিপ্যাল কতৃপক্ষ। শহরের সব ক’টি রুটে বাস চলবে সিটি কর্পোরেশনের অধীনে। প্রশিক্ষিত চালক বাস চালাবে। আধুনিক কায়দায় টিকিট বক্সে থেকে টিকিট ক্রয় করে বাসে চড়তে হবে। নির্দিষ্ট ষ্টপেজ ছাড়া কোথায়ও বাস থামবেনা। বাস ষ্টপেজের জায়গায় অন্যকোন গাড়ী দাড়াতে পারবেনা। টিকিট ছাড়া কেউ বাসে উঠলে বা পুরনো টিকিট দেখালে মেশিন শব্দ করে বেজে উঠবে। যাত্রী উঠানামার জন্য নির্দিষ্ট স্থানেই দাড়াতে হবে নামতে হবে। ভোর ৬ টা থেকে ৯ টা এবং বিকেল ৩ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত ৫ মিনিট ব্যবধানে বাস চলাচল করবে। বাকী সময় ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে বাসের জন্য। বাসের এই সার্ভিস নিশ্চিত হলে বেশীরভাগ মানুষ বাসে চলাচল করবে। রিক্সা, সি এন জি নিরুৎসাহিত হবে।

রাস্তায় যে সব চিহ্ন আঁকা রয়েছে তা আলপনা নয় আইন। চালকরা পথযাত্রী পারাপারের চিহ্নটিও মানেনা। চিহ্নের উপরই দাঁড়িয়ে যায় সকলে। রাস্তায় অঙ্কিত দাগের অর্থটিও বোঝেনা অনেকে। বাস সাধারনত কম গতীর লেনে চলাচল করে এবং রাস্তার কিনার ঘেষে দাঁড়ায় যাত্রী উঠানামার জন্য। এই নিয়মটি নিশ্চিত হলে রাস্তার গতিটি থেমে থাকবেনা। সব দেশেই হাত তুলে নয় ট্রাফিক বাতি রাস্তা নিয়ন্ত্রন করে। আইন অমান্য করলে জরিমানা গুনতে হয়। বাংলাদেশে ট্রাফিক আইন আরও কঠোর করতে হবে এবং পুলিশ শুধু অপরাধকে নিয়ন্ত্রন করবে। গাড়ী থামিয়ে ঘুষ নেওয়া বন্ধ করতে হবে। শহরে টাউন সার্ভিস পরিচালনা করবে সরকারী বাস। প্রাইভেট বাসগুলিকে আন্তনগর সার্ভিসে যুক্ত করা যেতে পারে। শ্রমীক সমিতি এবং মালিক সমিতি ছাড়াও স্থানীয় নেতারা চাঁদা আদায় করে বাস থেকে। প্রতিটি বাস টার্মিনাল এখন মস্তানদের বড় আখড়া। বাস সার্ভিসে উৎপাদিত আয়ের বড় অংশ নেতাদের তুষ্টিতেই ব্যয় হয়। কিছু না করেই শ্রমীক নেতারা ধনী। পুলিশের পকেটেও অর্থ ঢোকে প্রতিদিন। বাস শ্রমিকদের চুরি আর চঁদা পরিশোধ করে মালিকরাও প্রত্যাশিত আয় ঘরে তুলতে পারেনা। দেউলিয়া হয়ে নিঃশ্ব হয়ে গেছে অনেক বাসের মালিক। শ্রমিক নেতারাই এখন বাসের মালিক। রাজস্ব ভাগ হয়ে যায় বিভিন্ন টেবিলে আর পকেটে। উৎপাদিত রাজস্ব ভাগাভাগি হয় আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। বেপরোয়া বাস চলাচল দেখেও পুলিশ নিরব থাকে। এই নৈরাজ্য কেউ জানেনা তা সঠিক নয়। যোগসূত্রটি বহুদুর। এখন সরকারও এই চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পরেছে। কঠিন হলেই হুমকি দেয় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়ার। চলবে…….

আজিজুর রহমান প্রিন্স,

কলামিস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *