লাইফস্টাইল ডেস্কঃ ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোকেমিকেলসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানে ভরপুর শীতের সবজি ফুলকপি। চিকিৎসকদের মতে ক্যান্সার প্রতিরোধক ফুলকপি। ফুলকপির সালফোরাফেন ক্যান্সারের স্টেম সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরনের টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিহত করে। আর এই সালফোরাফেন উপাদান রক্ত চাপ কমায়। যার ফলে হৃদযন্ত্র ভালো রাখে।

শীতকাল হল এই সবজিটি উৎপাদনের মূল সময়কাল। যদিও বর্তমানে ফুলকপি সারা বছর পাওয়া যায়। তবে,স্বাদের কথা বিবেচনা করলে শীতকালের ফুলকপি স্বাদে উৎকৃষ্ট। আমাদের দেশে,ফুলকপি সাদা এবং হালকা হলুদ বা বাদামী বর্নের পাওয়া গেলেও, বাইরের দেশে সাদা,হলুদ বা পার্পল বর্ণেরও পাওয়া যায়।

ফুলকপির পুষ্টিগুণ কি কি?

ফুলকপিতে রয়েছএ অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি। যা  ‘অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি নিউট্রিয়েন্টস’, যা শরীরের দহন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে ফুলকপিতে। শরীরে কর্মক্ষম বজায় রাখার জন্য সঠিক পরিমাণে পুষ্টির জোগায় ফুলকপি। নিয়মিত ফুলকপি খেলে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।তাই শিশুদের নিয়মিত ফুলকপি খাওয়া উচিত। এছাড়া হজমে যথেষ্ট সহায়ক ফুলকপি।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ফুলকপির প্রতি ১০০ গ্রামে ভিটামিন-সি রয়েছে ৯১ মিলিগ্রাম। অথচ করল্লায় এর পরিমাণ হচ্ছে ৬৮ মিলিগ্রাম, সাজিনায় ৪৫ মিলিগ্রাম, ওলকপিতে ৫৩ মিলিগ্রাম, মুলায় ৩৪ মিলিগ্রাম এবং টমেটোতে আছে ৩১ মিলিগ্রাম। ফুলকপিতে ভিটামিন-কে’র পরিমাণও রয়েছে যথেষ্ট। এর অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন ও ভিটামিন-বি  আছে যথাক্রমে ২.৬ গ্রাম, ৭.৫ গ্রাম, ০.১ গ্রাম, ৪১ মিলিগ্রাম, ১.৫ মিলিগ্রাম, ৩০ মাইক্রোগ্রাম এবং ০.০৫৭ মিলিগ্রাম। শরীর সুস্থ রাখার জন্য মানবদেহে ভিটামিন-সি খুবই দরকারি।

ফুলকপির স্বাস্থ্য উপকারিতা

ফুলকপিতে উচ পরিমাণে বিভিন্ন রকমের উপকারী পুষ্টি উপাদান যেমন: ফোলিক এসিড,ভিটামিন-সি,ভিটামিন কে,কোলিন,ছাড়াও অন্যান্য উপাদান রয়েছে। আর ক্যালরি খুব বেশি না থাকায় এটি একাধারে স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর।

এতে বিদ্যমান‘সালফোরাফোন” রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে এবং ক্যান্সারের স্টেমসেল গুলোকে ধ্বংস করার মাধ্যমে টিউমারের গ্রোথকে বাঁধা দেয়। এছাড়া, এর মধ্যে থাকা “ইনডোল” প্রস্ট্রেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং আইসোথায়াসিনেট ব্রেস্ট,কোলন,ইউটেরাস এবং লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ফুলকপিতে রয়েছে যা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে এবং কার্ডিয়াক কমপ্লিকেশনস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

এতে খুব ভাল পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পেটের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি,যারা ওজন কমাতে চান তাদের জন্য সঠিক পরিমাণে ফাইবারের চাহিদা পূরনের জন্য খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি রাখতে পারেন।

ফুলকপিতে যে “ফাইটোকেমিক্যালস”রয়েছে তা, টক্সিক উপাদান সমূহকে ভেঙ্গে কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।পাশাপাশি,গল ব্লাডারের সুরক্ষার জন্য এই “ফাইটোকেমিক্যালস” বেশ কার্যকর।

সুস্বাদু এই সবজিটিতে গুরুত্বপূর্ন বি ভিটামিন-কোলিন রয়েছে যা মস্তিস্কের বিকাশে সাহায্য করে। সুতরাং,গর্ভবতী মা এবং যারা আলঝেইমার রোগে ভুগছেন তাদের জন্য এটি খুব উপকারী। এছাড়া,গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল হেলথের জন্য এই উপাদানটি ভীষণ উপকারী।

ফুলকপিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট “গ্লুটাথায়োন” দেহের ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। যার ফলে আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

যারা,স্কিন ভাল রাখতে চান তারা নিয়মিত ফুলকপি খেতে পারেন। ফুলকপিতে ভাল পরিমানে ভিটামিন-সি রয়েছে যা আমাদের দেহের কোলাজেন প্রোডাকশনে সাহায্য করে। যা,রিংকেল বা এজিং প্রসেস কে ধীর করে দেয়। এছাড়া,ফাইন লাইন দূর করা এবং ক্লিয়ার স্কিন পাবার জন্য ভিটামিন-সি।

কাদের খাওয়া উচিত নয়

ফুলকপির এতো গুন থাকা সত্ত্বেও যাদের থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে তাদের উচিত যতদিন পর্যন্ত থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে না আসে ততদিন পর্যন্ত খাদ্য তালিকায় এটি না রাখা। তবে ইচ্ছা করলে সীমিত পরিমাণে খুব ভাল ভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে।

যারা সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন তাদের ও অতিরিক্ত পরিমাণে ফুলকপি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ,বেশি পরিমাণে খেলে গ্যাস্টিক হবার সম্ভাবনা রয়েছে। মনে রাখতে হবে,একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য সারাদিনে ৪০০-৪৫০ গ্রাম ফল এবং শাকসবজি অর্থাৎ ফাইবার গ্রহণ করা উচিত। সুতরাং,শুধু ফল বা শাক বা সবজি নয় বরং এই তিনটি মিলিয়েই অন্তত ৪০০ গ্রাম খেতে হবে।

এছাড়া আমরা নানা কারণে বিভিন্ন সময় শরীরে বিভিন্ন রকম প্রদাহ,যন্ত্রনা বা ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকি যা দূর করতে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় এই সবজিটি থাকতে পারে। তবে,যদি গাউটের কারণে প্রদাহ হয় তবে ফুলকপি কিছুটা সাবধানে খেতে হবে।কারণ,ফুলকপি পিউরিন সমৃদ্ধ। সেক্ষেত্রে,ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। সুত্রঃ কৃষি তথ্য সার্ভিস ও জি২৪। 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *