অর্থ পাচার এখন বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যায় পরিনত হয়ে গেছে। একজন দুইজন নয়, অনেকের নামই উঠে এসেছে এই তালিকায়। ব্যংকের টাকা লুট করে বিদেশে নামে বেনামে জমা করছে কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি। কানাডা আমেরিকার মত দেশেও আবাসন গড়েছে বিলাসী কায়দায়। অর্থপাচারকারীদের কেউ কেউ কানাডার বেগম পাড়ার সদস্য বলেও প্রচারনা রয়েছে। বিভিন্ন সন্ধানে অর্থপাচারের লোমহর্ষক কাহিনী প্রকাশ পেয়েছে এবং অঙ্কটি বিশাল। বেশীর ভাগই ব্যংকের টাকা এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যঙ্ক কর্মকর্তারাও জড়িত এই অর্থপাচারে। সরকারেরও টনক নড়েছে এখন এবং উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা এসেছে এদের খুঁজে বের করতে। লুটেরাদের সন্ধানে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে নেমেছে। বিদেশেও তথ্য সংগ্রহ চলছে। অর্থ আত্নসাৎ করতে গিয়ে দলীয় প্রভাব খাটানোর কথাও এখন ওপেন সিক্রেট। কেন এই অর্থলোপাট হচ্ছে এবং কারা পাচার করছে তা নিয়ে মুখরুচকর গল্প রয়েছে। বৈধ পথে এই পরিমান অর্থ বিদেশে পাচার সম্ভব নয়। অনেক এজেন্ট জড়িত রয়েছে। সজ্ঞবদ্ধ হয়ে শত্রুরা দেশের অর্থ পাচার করছে নানা কৌশলে। উৎসটি খুঁজে বের করা কঠিন নয়। দেশের টাকা ফেরৎ নেওয়াও সম্ভব তবে সরকারের সদিচ্ছাটি জরুরী।
জাতীয় সম্পদ লুট করে যারা দেশের ক্ষতি করে তারা যে’ই হউক দেশের শত্রু। এই সহজ ব্যাকরনটি মানা হয়নি বহুদিন রাজনীতিতে। রাজনীতি নিয়ন্ত্রনে ব্যার্থ হলে প্রশাসনিক অর্গানগুলি অকার্যকর হবেই। সরকার দেশের উন্নয়ন করেছে, রাজনীতিটি চলেগেছে দুষ্ট চক্রের কাছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সততার প্রমান দিলেও রাজনীতিটি এবং সবার নেতৃত্বটি সঠিকভাবে প্রমানীত হয়নি। পুরু ব্যবস্থাটিকেই অচল করে দিয়েছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। রাজনৈতিক চিরিত্রটি বদল না হলে উন্নয়ন করেও মানুষের ভাগ্য বদলানো যাবেনা। সুতরাং এখন একটি সামগ্রিক বিপ্লব দরকার বিবর্তনের। তা করতে জনগনের সম্পৃক্ততা জরুরী। সরকারের প্রতিটি সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত করা না গেলে উন্নয়ন বা মেগা পরিকল্প কোনটাই কার্যকর করা যাবেনা। এই বিপ্লবের ডাক দিয়ে রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়ন নয়, সামাজিক বিবর্তন ঘটাতে হবে দেশে। এমন আন্দোলন করার শক্তি রাজনৈতিক নেতাদের আছে কিনা জানিনা তবে, এই উদার মনোভাব এবং যোগ্যতা একমাত্র শেখ হাসিনারই আছে। বেশীরভাগ নেতারাই (সব দলের) মানুষের আস্থা হারিয়েছে। সবাই না হলেও অনেকেরই ভাবনা, যে কোন উপায়ে অর্থ যোগার করে বিদেশে পাড়ি জমালেই বাকী জীবন আয়েশে কাটাতে পারবেন। এই ভ্রান্ত ধারনাই অর্থ পাচারের উৎস কিনা জানিনা। তবে তাদের এই ভাবনাটি ভুল।
পৃথিবী বদলে গেছে। আনবিক শক্তি নয় অর্থনৈতিক শক্তিই এখন বিশ্বকে নিয়ন্ত্রন করে। পরাশক্তির রক্ত চক্ষু এখন তেজহীন হয়ে পড়েছে। আগ্রাসনবাদ আর আধিপত্ববাদের পন্ডিতরা এখন পুঁজীবাদী দুনিয়ার দিকে চোখ ফেলেছে ধনবাদের লক্ষ্যে। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথেই হাটছে। দক্ষিন পুর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিধী নিয়ন্ত্রন করবে শীঘ্রই তাই, রাজনৈতিক বিবর্তন এখন একমাত্র করনীয়। এই যুদ্ধের ঝুকিটি হল, ব্যর্থ হলে নিয়ন্ত্রন হারাবে সর্ব ক্ষেত্রে। পরাজিত হলে ১৮ কোটি মানুষ বিপদে পড়বে নেতৃত্বের কারনে। দায়টি সরকারেরই অন্য কারও নয়।
আজিজুর রহমান প্রিন্স
টরন্টো, কানাডা
৬ জানুয়ারী ২০২১।
Leave a Reply