কিংবদন্তী অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান না ফেরার দেশে

কিংবদন্তী অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান না ফেরার দেশে

সিএনবিডি ডেস্কঃ দেশ বরেণ্য, জনপ্রিয়, কিংবদন্তী অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) ফজরের নামাজের পর পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে তাঁর নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান’র ছোট ভাই সালেহ জামান সেলিম তাঁর মৃত্যুর খবরটি আজ শনিবার সকালে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

সালেহ জামান সেলিম জানান, শারীরিক জটিলতা নিয়ে বিভিন্ন সময় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। তবে গত কয়েকদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। গত পরশু রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালেও নেয়া হয়। অক্সিজেন কমে গিয়েছিলো। সেখানে চিকিৎসা শেষে শুক্রবারই বাসায় নিয়ে আসা হয় তাকে। আর আজ ফজরের নামাজের পরেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।

অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যু দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশে তার অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপতি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোক বার্তায় বলেন, জনপ্রিয় এই শিল্পী তার অসাধারণ অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দেশবাসীর হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

বরেণ্য এই অভিনেতার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে নারিন্দায় পীর সাহেবের বাড়িতে এবং দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বাদ আসর সূত্রাপুর মসজিদে। এরপর এই অভিনেতাকে দাফন করার কথা রয়েছে জুরাইন কবরস্থানে।

অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি। ঢাকায় থাকতেন পুরান ঢাকার দেবেন্দ্র নাথ দাস লেনে। তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পোগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। তাঁর বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান ছিলেন একাধারে পরিচালক, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার, সংলাপকার ও গল্পকার। ১৯৬১ সালের শুরুতে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন এ টি এম শামসুজ্জামান। প্রথম কাহিনী ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করেছেন ‘জলছবি’ ছবিতে। লিখেছেন শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনী। তিনি প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি।

তাঁর অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত সর্বশেষ ছবি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর ‘আলফা’। যা ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।

উল্লেখ্য, বরেণ্য এই অভিনেতা অভিনয়ের জন্য একাধিকবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে ২০১৯ সালে পেয়েছেন ২০১৭ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ‘আজীবন সম্মাননা’ পুরস্কার।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *