ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ক্ষেপেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন দুদকের বিরুদ্ধে। দুদক তার ব্যংক একাউন্ড জব্দ করে দিয়েছে। এমন মামলা দুদক অনেকের বিরুদ্ধেই করেছে। সংবাদ সম্মেলন করে এমন প্রতিবাদ করেনি কেউ। উচ্চ স্বরে চিৎকার করে সাঈদ খোকন যেভাবে নিজেকে নির্দোষ দাবী করেছেন তা সত্য হলে প্রতিবাদেরও প্রয়োজন হয় না। স্বাক্ষী প্রমানেই সত্যটি বেড়িয়ে আসবে। এমন রাগান্বিত হয়ে আন্দোলন করার হুশিয়ারী দিতে হবে কেন! কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবেন এই সাবেক মেয়র। তাছাড়া দুদক বিনা কারনেই কারও ব্যংক একাউন্ট জব্দ করেছে শোনা যায়নি। অবশ্য দুদকের মামলায় জেল ফাঁসও হয়নি। তাহলে এমন উষ্মা প্রকাশ করা কেন? তবে কি লাইম লাইটে আসার জন্যই সাঈদ খোকন সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন? কেন করেছেন জানা না গেলেও নগরপিতা হিসাবে খোকন ঢাকাবাসীর আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ঢাকাবাসী মশা এবং এডিস মশার উপদ্রপ সয়েছে খোকনের আমলে। রাস্তাঘাটের দুরাবস্থা জলাবদ্ধতা দেখেছে চরমভাবে। ব্যঙ্গ করে অনেকে মশা মেয়রও বলেছে। প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেননি মশার বিরুদ্ধে। গুলিস্তান হকার মার্কেটের বরাদ্ধ নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল খোকন মেয়র থাকা কালেই। যে কারনে দল তাকে দিতীয়বার মনোনয়ন দেয়নি। মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে সতন্ত্র প্রার্থী হওয়ারও গুজব বেড়িয়েছিল। ফজলে নূর তাপস মেয়র হয়ে গুলিস্তান হকার মার্কেটের অবৈধ বরাদ্ধ আর স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে। সেই থেকেই বর্তমান মেয়রের উপর ক্ষুদ্ধ সাঈদ খোকন। দুদকের তদন্তে খোকনের অবৈধ উপার্জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেই সূত্র ধরেই তার এবং তার স্ত্রীর ব্যংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে খোকন যে ভাষায় প্রতিবাদ করেছে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে। দুর্বার আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কার বিরুদ্ধে রাস্তায় আন্দোলন করবেন সাবেক মেয়র? প্রশ্ন হল জনাব খোকন দোষি প্রমানীত হলে বিচারটি মানবেন কিন! “চোরের মায়ের বড় গলা” প্রবাদটি এখন সত্য প্রমান হচ্ছে।

এমন খোকন আরও আছে দেশে। কিছু আছে যারা বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যংক থেকে তুলে বিদেশে পালিয়ে গেছে। যারা বিদেশে যেতে পারেনি তারা পদ পদবীর চেষ্টা চালাচ্ছে দলে। অবৈধ উপার্জন বৈধ করার অন্যতম উপায় এখন রাজনীতি। নির্বাচীত হতে পারলেই বনে যান জননেতা। জননেতারা হয় নির্দোষ। জনগনের কল্যানেই তারা বিত্ত্ববান হন আর নামীদামী গাড়ীতে চড়েন। তাই দেশে এখন কঠিন প্রতিযোগিতা চলছে কে কাকে টক্কর দিয়ে নেতা হবেন। রাজনীতি নেই, আন্দোলন নেই কোন বিরোধী দলও নেই। কোনভাবে নমিনেশন বাগিয়ে নিতে পারলেই ভাগ্যের চাকাটি ঘুড়ে যায়। আলাদিনের প্রদিপের মত শুধু চাওয়াটির অপেক্ষা। মালামাল হয়ে যায় পথের ভিখারীও।

আওয়ামী লীগের দুঃসময় গেছে ৭৫ সালে জাতীর পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার পর। বি এন পি প্রতিষ্ঠা করতে একটি সন্ত্রাসবাহিনী গঠন করেছিল জেঃ জিয়া। শির্ষ কিছু সন্ত্রাসীদের মূল দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মারধর করা। পুরান ঢাকার কয়েকজন শির্ষ তালিকায় উঠে এসেছিল সন্ত্রাসে দক্ষতা দেখিয়ে। তাদেরই কয়েকজন এখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। এদের মূল দায়িত্ব ছিল আওয়মী লীগের নেতা-কর্মীদের মারধর করা। অনেক প্রবীন নেতাও এই সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এখন তারা আবার আগের চরিত্রে ফিরে এসেছে তবে আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে। এখন মুজিব কোট গায়ে জড়িয়ে সন্ত্রাস করে। সন্ত্রাসীরা এখন বহু সম্পদের মালীক বনেগেছে। আওয়ামী লীগের ত্যগী নেতা-কর্মীরা আড়াল হয়ে গেছে। নীতি নির্ধরকদের উচিৎ সত্যটি তলিয়ে দেখার। নাহয় একই সন্ত্রাসীদের চেহারা বদল করতে সময় লাগবেনা। মেয়র সাঈদ খোকনও তত্বাবধয়ক সরকারের আমলে কি বক্তব্য দিয়েছিল তা আর্কাইভে মওজুত আছে।।

আজিজুর রহমান প্রিন্স,

কলামিস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ।

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *