আজিজুর রহমান প্রিন্স, ঢাকা, বাংলাদেশঃ রিক্সা একটি চমৎকার বাহন। খোলা আকাশ তলে ধীর গতিতে আয়েশী চলাচল ভাল লাগে। এমন ভাবনাতেই বোধহয় জাপান এই যান আবিস্কার করে। নারায়নগঞ্জের দুই ইংরেজ সাহেব চটকলের উর্ধতন কর্মকর্তা  গিয়েছিলেন রেঙ্গুনে। আয়েশী চলাচলের জন্য তারা দু’টি রিক্সা ক্রয় করে আনে। আবাস থেকে অদুরে এই রিক্সাতেই যাতায়াত করতেন তারা। দেখে বাঙালীর মনেও পুলক অনুভুত হয়। কেদারায় বসে চলার সূখ জাগে মনে। শুরু হয় রিক্সার প্রচলন। আর রিক্সায় চড়ে চড়েই বাঙালী অলস হয়ে পরে। লোভটি আর ছাড়তে পারেনি বাঙালী। এই লোভে বাড়তে থাকে রিক্সার সংখ্যাটিও। রিক্সা এখন গননায় ভুল হয়ে যায়। খাতায় আছে আশি হাজার (ঢাকায়) কিন্তু গননে কেউ বলে তিন লক্ষ আবার বেশীও অনুমান করে অনেকে।

রিক্সা নিয়ে আমার কোন অনুযোগ নেই। সিট একটু সঙ্কুচিত হয়েছে তবে চড়তে খাড়াপ লাগে না। মাঝ পথেও চলে গাড়ীকে ঘন্টা বাজিয়ে। যখন তখন যেখানে খুশী ঢুকে পরে ইচ্ছেমত। একটু জ্যাম বাধে বৈকি! কিন্তু দারুন লাগে থেমে থাকা গাড়ী রিক্সা ঠেলা গাড়ীর মারামারি দেখতে। একসময় একজন লাঠি নিয়ে জ্যাম ছুটাতে এগিয়ে আসে। হৈ চৈ হয় হর্ন বাজে মুহুরমুহুর। পৃথিবীর কোথায়ও রাস্তায় এমন দৃশ্য দেখা যাবে না। রিক্সা একেবারে স্বাধীন, কারও তোয়াক্কা করেনা। প্রতিযোগিতা চলে কে কার আগে যাবে। ইচ্ছামতই ভাড়া চায়। কোন নিয়ম নিয়ন্ত্রন নেই। বসে থাকবে, খামোখাই মূখ ঘুড়িয়ে বলে দিবে “যাবোনা”। আবারিত স্বাধীনতা রিক্সা চালকদের। ব্যত্যয় ঘটে পুলিশ দেখলে। বিনা কারনেই থামিয়ে টাকা দাবী করে। দিতে হয় তাদের, না হয় জরিমানা ছাড়াও বেত্রাঘাত সইতে হয়।

রিক্সা শ্রমিকদের উপার্জন ভাল এখন। করোনা কালীন সময়ে রিক্সায় উপার্জন হয়েছে দ্বিগুন। বেরসিক বাস চালকদের সঙ্গে রিক্সার বৈরিতা আছে। ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। একসময় ঢাকাকে বলা হত মসজীদের শহর। এখন ঢাকা রিক্সার শহর হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। রিক্সা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ থাকলেও পুলিশের উপার্জনের মোক্ষম দৃষ্টি রিক্সার উপর।বসে অপেক্ষা করে কখন তার সামনে দিয়ে একটা রিক্সা যাবে। রাজার অসৎ কর্মীর পানির ঢেউ গোনার মত রিক্সা গোনে পুলিশ। যে কারনে সরকার চাইলেও পুলিশ চায় না রিক্সা উঠে যাক! একটি লাইসেন্সে কতটি রিক্সা চলে তা নিয়ে পুলিশের আগ্রহ নেই। সংখ্যাটি যত বেশী হবে পকেট তত ভারী হবে। সুবিধা হয়েছে ট্রফিক লাইট না থাকায়। পুলিশই রাস্তা নিয়ন্ত্রন করে হাত উঁচিয়ে। হাত তুলে ইশারা করে বলে ” কিনারে যাও”। প্রতিনিধি দাঁড়ানোই থাকে। পকেট কাটে রিক্সাওয়ালার। সন্ধার পর মোড়ে মোড়ে হাট বসে। পকেট ভরে ঘরে ফিরে পুলিশ। কে দেখবে? দেখার জন্য তো পুলিশকেই নির্দেশ দিবে।

বাংলাদেশের পুলিশের তরিৎকর্মা নির্দেশ লাগেনা। তারাই দেখছে সব। চমৎকার ব্যবস্থা। রাস্তার নিয়ন্ত্রন এখন পুলিশের হাতে। ইচ্ছাকরেই জ্যাম বাধিয়ে রাখে। ট্রাফিক আইনে একটি চলাচল এক মিনিট থামানো হয়। বাংলাদেশের পুলিশ বিশ মিনিটও আটকে রাখে। বাংলাদেশের রাস্তার নিয়ন্ত্রন দেখে বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীও জ্ঞান হারাবে। আধুনিক যুগে পুলিশের হাত তুলে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রনকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আশ্চার্য বিবেচনা করলেও ভুল হবেনা।

এদেশে ট্রাফিক জ্যামের আনন্দ আছে। হাটবাজার করা যায় গাড়ীতে বসেই। খাওয়া দাওয়াও এখন ডেলিভারী দেয় থেমে থাকা গাড়ীতে। ডায়েবেটিক রোগীদের জন্য খালী হওয়ার ব্যবস্থা থাকলে এই জ্যম আরও উপভোগ্য হত। পঞ্চাশ বছর চিৎকার করেও ট্রাফিক ব্যবস্থাটির উন্নতি করা যায়নি। অন্তত ডায়েবেটিক রোগীদের অবস্থাটির কথা বিবেচনা করে রাস্তায় ভাসমান শৌচাগার নির্মানের জোড় দাবী জানাচ্ছি। 

 

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *