সিএনবিডি ডেস্কঃ আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানিতে ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) এ সংক্রান্ত এক সার্কুলার জারি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্যের উর্ধগতি রোধ ও এসব পণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখাসহ পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরী। এটি বাস্তবায়নে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, খেজুর, ফলমূল এবং চিনিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম মার্জিন বা আগাম অর্থ রাখতে হবে। অর্থাৎ কম অর্থ আগাম রেখে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সুযোগ আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বহাল রাখতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হলো বলে নির্দেশনায় জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভোগ্যপণ্য মজুদ থাকলেও একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী রমজানকে সামনে রেখে ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে রমজানে বেশি ব্যবহৃত পণ্য পেঁয়াজ, চিনি, সয়াবিন তেল ও ডালের দাম বেড়ে যায়। অধিক মুনাফালোভী এসব ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের সুযোগ দেয়ার পরও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ ক্রেতা। এসব সাধারণ ক্রেতার কথা বিবেচনা করেই পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের ছাড় দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা কোনো পণ্য আমদানির সময় আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যের ওপর একটি অংশ ব্যাংকের আগাম পরিশোধ করতে হয়। এটাকেই ব্যাংকিং ভাষায় এলসি মার্জিন বলে। সাধারণত ক্রেতাভেদে এলসি মার্জিন নির্ধারণ করে থাকে ব্যাংক। ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে গ্রাহক ভেদে এলসি মার্জিনও ভিন্ন ভিন্ন নির্ধারণ করে। যেমন ১০০ টাকার একটি পণ্য আমদানি সময় সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী আগাম ২০ টাকা পরিশোধ করলেন। বাকি ৮০ টাকা পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংক জোগান দিলো।
সাধারণত পণ্য দেশে আসার পর বাকি ৮০ টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করে ব্যাংকের গোডাউন থেকে পণ্য ছাড়িয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক সময় ব্যাংকের গোডাউনে রেখে অল্প অল্প পণ্য ছাড়িয়ে বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করেন গ্রাহকরা। অনেক সময় গ্রাহক পণ্য বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ ফেরত দেন না। একসময় ওই ঋণ ফোর্স ঋণ হিসেবে পরিণত হয়। এ কারণে ব্যাংক পণ্য আমদানির সময় বেশি অর্থ গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করতে চান। তবে বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের ক্ষেত্রে গ্রাহকের সুনামের ওপর ভিত্তি করে শূন্য মার্জিনেও পণ্য আমদানির সুযোগ দেয় ব্যাংক।
অন্যদিকে, পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে একের পর এক ভোগ্যপণ্যবোঝাই জাহাজ আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ফলে চাল, ডাল, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে বন্দর এখন ভরপুর। রমজানের আগে বাজার ধরতে এসব পণ্য দ্রুত খালাসও করছেন ব্যবসায়ীরা। গতবারের মতো এবারও প্রচুর পণ্য এসেছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার পণ্যের পরিবহন ব্যয় বেশি পড়ছে। কিছুটা বেশি পড়ছে আমাদানি খরচও।
এছাড়া, ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বাজার মনিটরিংয়ে নামছে দেশের সকল জেলা প্রশাসন।